ঈদের প্রকৃত আনন্দ তো শিশুরাই করে। ঠিকঠাক নতুন পোশাকটি পেলে তাদের মতো খুশি আর কে হয়! তাই শিশুর পোশাক হওয়া চাই তার মনের মতো।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, এবারের ঈদে শিশুদের পোশাকের ট্রেন্ড কী? সারা লাইফস্টাইলের প্রধান ডিজাইনার মো. শামীম বলেন, মেয়েশিশুদের পোশাকে নজর কাড়বে বাহারি থ্রি–পিস। গলার নকশায় দেখা যাবে গোল, ম্যান্ডারিন, ব্যান্ডকলার। তা ছাড়া মিলিয়ে অন্য কাপড়ের কুঁচির নকশাও দেখা যাবে। ছেলেশিশুদের জন্য নানা রকম খাটো হাতার শার্ট ছাড়াও আছে পাঞ্জাবি, টি–শার্ট। শিশুর পোশাকে বসেছে রঙিন রঙিন টুকরা কাপড়। কোনোটায় ঝালর দেওয়া, কোনোটায় আবার চওড়া ফ্রিল।
হাতার প্যাটার্নে উত্সব আমেজ ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে ফ্লেয়ার কাট। নিচে ঝুলের দিকে ‘এ লাইন শেপ’ বেশি দেখা যাবে। আনারকলি ধাঁচও রয়েছে। সব সময় ছোটদের থ্রি–পিসের বাড়তি আকর্ষণ থাকে সালোয়ারের কাটে। এবারও তেমনটি হয়েছে। সালোয়ারে এবার দেখা যাবে প্যান্ট কাট, পালাজ্জো কাট, গারারা ও সারারা বৈচিত্র্য। সবকিছু ছাপিয়ে শিশুদের ওড়নাও এবার নজর কাড়বে। এই এক টুকরা রঙিন কাপড় নিয়েও নানা নতুনত্ব চোখে পড়ল। শিশুদের ওড়নার আকার এবার একেবারেই ছোট থাকছে। যেহেতু গরম, তার ওপর সামলানো কঠিন। তাই খুবই ছোট্ট, কিন্তু রংধনুর মতো রঙিন হবে দোপাট্টা।
ছোটদের পোশাকে আরও একটি জায়গায় নতুনত্ব থাকছে। সেটি নকশায়। শিশুদের অনেক পোশাকেই এবার দেখা যাবে বড়দের পোশাকের মতো নকশা। এতে বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে মিলিয়ে শিশুরা পোশাক পরার সুযোগ পাবে। অনেক দোকান মেয়েশিশুদের জন্য ঘেরওয়ালা কামিজ, ছোট কামিজের সঙ্গে ঢোল পাজামা ও গারারা এনেছে। ছোট টপের সঙ্গে থাকছে ঘাগরা আর ওড়না।
পোশাকে পছন্দের চরিত্র
লা রিভের প্রধান নির্বাহী মন্নুজান নার্গিস বলেন, স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যান, মিনিয়নস, সুপারম্যান, মিকি মাউস, ম্যাককুইন, ফেইরির মতো কার্টুন ও অ্যানিমেটেড চরিত্র দারুণ জনপ্রিয় শিশুদের কাছে। তাই শিশুদের পোশাকের নকশায় এসব চরিত্র দেখা যাবে। পোশাকে উঠে এসেছে প্রাণিজগতের ছোট ছোট মোটিফ। ফতুয়া, টি–শার্ট, ফ্রকে ব্যাঙ, হাতি, ঘোড়া, হরিণ, প্যাঁচার দেখা মিলবে। তা ছাড়া এবার নিউ নরমাল পাশ কাটিয়ে স্বাভাবিক উদ্যাপনে ফিরবে মানুষ। ফলে পোশাকে স্থান পাবে প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গ। পোশাকে উঠে আসা ফুল, লতা, পাতা, ঘাস তপ্ত গরমে দেবে স্নিগ্ধতার আমেজ।
রঙিনে প্রাধান্য
উত্সব মানেই হাজারো রঙের খেলা। শিশুর পোশাকে চোখে পড়বে রঙের বর্ণচ্ছটা। শিশুর পোশাকে রংধনুর সব রং নিয়েই এবার নিরীক্ষা হয়েছে—জানালেন দেশালের ভাইস চেয়ারপারসন ও প্রধান ডিজাইনার ইশরাত জাহান। আর রঙের ক্ষেত্রে আকাশের নীল থেকে গহিন জঙ্গলের গাঢ় সবুজ সবই দেখা যাবে। মধুরঙা কমলা, গাঢ় লাল, খয়েরি, ম্যাজেন্টা, হলুদ, কলাপাতা রং, আকাশি, গোলাপি কোনোটাই বাদ পড়েনি। আবার হালকা গোলাপি, ছাই রং, সাদা, ঘিয়ে ইত্যাদিও আছে শিশুর পোশাকে।
কাপড় আর নকশা
যেকোনো উত্সবের পোশাকের নকশায় প্রাধান্য পায় ওই সময়ের আবহাওয়া। পোশাকটি যেন সেই আবহাওয়ায় আরাম দেয়। এই সময় যেহেতু বেশ গরম, তাই শিশুর পোশাক অবশ্যই আরামদায়ক হতে হবে। সারা দিন খেলে বেড়ানোর মতো স্বস্তিদায়ক হতে হবে। আর সুতি কাপড়ই সেদিক থেকে ভালো। সুতি না হলেও কাপড় যেন বাতাস চলাচলের উপযোগী হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। তাই ফুলহাতার চেয়ে হাফহাতা বা হাতা কাটা পোশাক বেশি দেখা যাবে। শিশুদের পোশাকের কাপড়ও গরম মাথায় রেখেই বাছাই করা হয়েছে। প্রাধান্য পেয়েছে সামার ফেব্রিকস, যেমন কটন, মার্সেরাইজড, রেমি কটন, ভিসকস, টুইল ইত্যাদি। উত্সবের আমেজ আনতে হাফসিল্ক, সিল্ক, ক্রেপ সিল্ক, মসলিন, স্যাটিন, অরগাঞ্জা, জর্জেট ও লেস ফেব্রিকের বৈচিত্র্যময় ব্যবহারও বাদ পড়েনি। ছেলেরা সাধারণত একবেলা হলেও পাঞ্জাবি পরে। বিশেষ করে ঈদের নামাজ বা সকালের দিকে। সে ক্ষেত্রে সুতি কাপড়ের হলে আরাম পাবে শিশু।
কাপড়ের নকশায় দেখা যাবে সিকুইন, ট্যাসেল, কারচুপি, হাত ও মেশিন এমব্রয়ডারি, প্যাচওয়ার্ক, পাইপিং। পাশাপাশি আছে ট্রেন্ডি স্লিভ ও হেমলাইনের নকশা।
কোথায় মিলবে, কেমন দাম
ফ্যাশন হাউসের পোশাক তো সারা দেশেই (যেখানে শাখা আছে) এক রকম। দেশি দশ, ইনফিনিটি, লা রিভ, খুঁত, শৈশব, ইয়েলো, টুয়েলভ, সেইলর, ক্লাব হাউসসহ অনেক হাউসেই মিলবে শিশুর পোশাক। দোকানের ক্ষেত্রে বনানী, গুলশান, পান্থপথ ও নিউমার্কেটে মিলবে শিশুদের বৈচিত্র্যময় পোশাকের সংগ্রহ।
শিশুদের পার্টি ফ্রকের দাম পড়বে দেড় থেকে ৪ হাজার টাকা। থ্রি–পিস ১ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা, টু–পিসের দাম ১ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা, স্কার্ট, ঘাঘরা–চোলি, আনারকলির দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। ছেলেশিশুদের পাঞ্জাবির দাম ৮০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা। টি-শার্টের দাম ৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। শার্ট কেনা যাবে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়।