বেশিক্ষণ অফিস করে নিজের ক্ষতি করছেন না তো!
বসের বা অফিসের সুনজরে পড়তে চান। বেশি করে অফিসে থাকুন। অফিসে আপনার কর্মঘণ্টা প্রভাবিত করতে পারে আপনার পদোন্নতি। কিন্তু যে জীবনের জন্য এই পদোন্নতির আকাঙ্ক্ষা, সেটাই নষ্ট করে ফেলবেন না যেন!
অফিসে বেশি সময় দেওয়ায় সামাজিক সম্পর্কগুলো নষ্ট হতে বসেছে। ক্লান্ত শরীরে একজন কর্মীর সক্রিয় সময়ের পুরোটাই গিলে খাচ্ছে অফিস। শুধু ক্ষতি একটুকুই নয়। নতুন গবেষণা জানাচ্ছে, অফিসে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে হৃদ্রোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন কর্মীরা।
আরও চমকে দেওয়া ফল বলছে, কর্মীদের অফিসে মাত্রাতিরিক্ত সময় ব্যয়ে অফিসেরও লাভ হচ্ছে না। অফিসে বেশি সময় ব্যয় করায় কর্মীরা ধীরে ধীরে কর্মদক্ষতা হারাতে থাকেন। তাঁদের সৃষ্টিশীলতা নষ্ট হয়, যা আদতে অফিসের জন্য ক্ষতিই।
ইউরোপজুড়ে আটটি ভিন্ন ভিন্ন গবেষণার ফলাফল জানিয়েছে এমন উদ্বেগ জাগানো তথ্য। সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন এমন কর্মীদের ওপর করা জরিপে দেখা গেছে, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিল্যাশনের (এফিব) ঝুঁকি বাড়ায়। অ্যাফিবে আক্রান্ত ব্যক্তির হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এর ফলে রক্ত জমাট বাঁধা, স্ট্রোক কিংবা হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
১০ বছর ধরে করা গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টার বেশি অফিসে থাকা লোকজনের এফিব হওয়ার আশঙ্কা ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। আক্রান্ত ব্যক্তি শারীরিক সমস্যায় বেশি ভোগেন। অফিসে বেশি সময় কাটানোর ফলে স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ বেশি হয়। মদ্যপান কিংবা ধূমপানও এ ধরনের ব্যক্তিরা বেশি করেন। দুই বছর আগে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে একই তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণা দেখিয়েছে, অফিসে অতিরিক্ত সময় কাটানো লোকজনের স্ট্রোক করার শঙ্কা বাড়ছে।
এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে, যারা নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বা রাতের পালায় কাজ করেন, তাদের স্ট্রোকের শঙ্কা ৪ শতাংশ বেড়ে যায়!
তবে গবেষণায় এটাও দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেওয়া ১ দশমিক ২ শতাংশ ব্যক্তি বাস্তবে এফিবে ভুগছেন। অর্থাৎ ঝুঁকির মাত্রা ৪০ শতাংশ বাড়লেও বাস্তবে ১ দশমিক ৭ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছেন এফিবে।
এফিব যেন না হয়, সে জন্য জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন—ধূমপান না করা, মদ্যপান বেশি না করা, বেশি মোটা না হওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা। কিন্তু এসবও কোনো কাজে আসবে না, যদি আপনি অফিসে বেশি সময় ব্যয় করেন। কাজ দেখানোর চেষ্টা করে বসকে হয়তো খুশি করতে পারবেন, কিন্তু সেটা আপনার ‘হৃদয়’ যে দুর্বল করে দিচ্ছে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।