পারিবারিক আদালতে কখন যাবেন?

ছবিটি প্রতীকী। সংসারে অশান্তি হলে খুব কাছের কারো সঙ্গে বসে আলাপ–আলোচনা করে সেটা মিটিয়ে ফেলা যায়। আর সবশেষে পারিবারিক আদালতের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। ছবি: অধুনা
ছবিটি প্রতীকী। সংসারে অশান্তি হলে খুব কাছের কারো সঙ্গে বসে আলাপ–আলোচনা করে সেটা মিটিয়ে ফেলা যায়। আর সবশেষে পারিবারিক আদালতের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। ছবি: অধুনা

কোনো বিষয়ে পারিবারিক বিরোধ দেখা দিয়েছে? ভাবছেন কী করবেন। কোনোভাবেই নিষ্পত্তি করতে পারছেন না। যদি একেবারেই কোনোভাবে বিরোধটি নিষ্পত্তি করতে না পারেন তাহলে আপনি পারিবারিক আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। পারিবারিক কোনো বিরোধ নিষ্পত্তির জন্যই দেশে পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তবে পারিবারিক বিরোধ বলতে আবার সব ধরনের বিরোধকে বোঝাবে না। পারিবারিক আদালতে মূলত পাঁচটি পারিবারিক সমস্যার নিষ্পত্তি হয়। প্রতিটি জেলায় সহকারী জজ আদালত পারিবারিক আদালত হিসেবে গণ্য হয়। আবার কিছু এলাকায় সহকারী জজ আদালতকে পারিবারিক আদালত হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

যে বিরোধগুলো নিষ্পত্তি হবে

বিবাহবিচ্ছেদ: বিবাহবিচ্ছেদের জন্য সব সময় আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যে ক্ষেত্রে কাবিননামার ১৮ নম্বর ঘরে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা না থাকলে কেবল স্ত্রী আদালতে যেতে পারে। এ ছাড়া স্ত্রী যদি স্বামীকে ‘খোলা’ বা ‘মোবারাত’ বিচ্ছেদে সম্মত করাতে পারেন, সে ক্ষেত্রেও আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার: কোনো কারণে দাম্পত্য জীবন ব্যাহত হলে এবং সংসারে ফেরত না আসতে পারলে স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ পারিবারিক আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন।

মোহরানা: স্বামীর পরিশোধ না করা দেনমোহরের জন্য স্ত্রী মামলা করতে পারেন। তাৎক্ষণিক মোহরানার জন্য যে তারিখে তা দাবি করা হয় এবং অগ্রাহ্য করা হয়, সে তারিখ থেকে তিন বছরের মধ্যে এবং বিলম্বে মোহরানার জন্য বিচ্ছেদ ঘটার তারিখ থেকে তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে।

ভরণপোষণ: স্বামী যদি স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে না চান, তাহলে স্ত্রী যেদিন থেকে ভরণপোষণের টাকা দাবি করবেন, সেদিন থেকে তিন বছরের মধ্যে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে হবে।

সন্তানের অভিভাবকত্ব: সন্তানের অভিভাবকত্ব এবং হেফাজত নিয়ে কোনো বিরোধ হলে পারিবারিক আদালতে যাওয়া যেতে পারে।

কীভাবে আশ্রয় নেবেন

উভয় পক্ষ যেখানে বসবাস করে বা সর্বশেষ বসবাস করেছে এবং যে পারিবারিক আদালতের স্থানীয় সীমার মধ্যে সমস্যা উদ্ভূত হয়েছে, সেই আদালতে মামলা করতে হবে। তবে বিবাহবিচ্ছেদ, মোহরানা ও ভরণপোষণের ক্ষেত্রে যেখানে স্ত্রী বসবাস করেন, সেই এলাকায় বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারবেন। দেনমোহর বা ভরণপোষণের পরিমাণ যতই হোক, মামলা করা যাবে। পারিবারিক আদালতে আইন চর্চা করেন এমন একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আবেদন করতে হবে। পারিবারিক আদালতে আশ্রয় নিতে হলে খুব বেশি কোর্ট ফি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার যারা পারিবারিক বিষয়ে কাজ করে তাদের আইনজীবীর মাধ্যমেও আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে। পারিবারিক আদালতের ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিলের বিধান থাকলেও বিবাহবিচ্ছেদের ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। এ ছাড়া পাঁচ হাজার টাকার কম মোহরানার ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল চলবে না। কোনো আবেদন পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আদালত বাদী ও বিবাদীকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেবেন। আদালত প্রয়োজনে রুদ্ধদ্বার কক্ষেও বিচারের ব্যবস্থা করতে পারেন।

আছে আপস মীমাংসার সুযোগ

পারিবারিক আদালতের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এখানে নিজেদের মধ্যে আপস মীমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ রয়েছে। একবার মামলার বিচার শুরু হওয়ার আগে এক দফা এবং পরবর্তী সময়ে রায় ঘোষণার আগে দ্বিতীয় দফায় আপসের সুযোগ রয়েছে। তাই পারিবারিক বিষয়ে আদালতে গেলেও নিজেদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে নেওয়াই উচিত। আবার আপসমূলে আদালতের ডিক্রি নেওয়ার সুযোগও রয়েছে।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

ই–মেইল: tanzimlaw@yahoo. com