তাহসীনের লাল-সবুজ স্বপ্ন
নালা তো নয়, যেন ময়লার ভাগাড়। সেই ময়লার স্তূপের এক পাশে দাঁড়িয়ে নিজের সম্পর্কে বলছেন এক তরুণ। ১৩ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে তিনি বলে যাচ্ছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আমি তাহসীন বলছি। নালাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আমি পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সংগ্রহ করি। সেগুলো রিসাইকেল করে বিক্রি করে যে অর্থ পাই, সে টাকা দিয়ে গাছের চারা রোপণ করি।’ বাংলাদেশি তরুণের ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল—ইউনিসেফের ফেসবুক পেজে।
এই তরুণের খোঁজ মিলল ফেসবুকেই। পুরো নাম তাহসীন উদ্দিন। বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন কলেজে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তিনি লাল-সবুজ সোসাইটি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। জাতিসংঘের উদ্যোগে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত তরুণ জলবায়ু সম্মেলনের একজন অংশগ্রহণকারী হিসেবেই তাহসীনের ভিডিওটি দিয়েছিল ইউনিসেফ।
লাল–সবুজের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলছিলেন, ‘সংগঠনের হয়ে আমরা মূলত জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করি। প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে টাকা জোগাড় করে গাছ লাগানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করি। এ ছাড়া নিয়মিত সাইকেল রাইড, মেয়েদের স্কুলে স্কুলে গিয়ে আত্মরক্ষা শেখানো, মেয়েদের সাইকেল চালানো শেখানো, শিশুদের নিরাপদ অনিরাপদ স্পর্শ শেখানো, বিতর্ক কর্মশালা, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা সহায়তা, চিঠি লেখা প্রতিযোগিতাসহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করি।’
তাহসীনদের লাল–সবুজ বরিশাল বিভাগের তরুণদের নিয়ে কাজ শুরু করেছিল। এখন ঢাকা ও খুলনাতেও চলছে সংগঠনের কার্যক্রম। সদস্যসংখ্যা দুই শতাধিক। তবে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠার গল্পটিও চমকপ্রদ। কেমন সেটা? তাহসীন বলছিলেন, ‘আমাদের সংগঠনের জন্ম হয়েছে একটি মাসিক পত্রিকার মাধ্যমে।’ সেই গল্পও শোনা হলো তাঁর কাছে।
তাহসীন উদ্দিন যখন শিশুদের জন্য পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিলেন, তখন নিজেই শিশু! বরিশাল জিলা স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। ভাবলেন, নিজেদের কথাগুলো নিজেদের পত্রিকাতেই বলবেন। জুটল দুই বন্ধু—ফাহিম ফয়সাল আর নাজমুল নাঈম। নিজেরাই পত্রিকার নাম নির্বাচন করলেন—মাসিক লাল-সবুজ। স্কুলের বন্ধুদের লেখা গল্প, কবিতা, ছড়া, ফিচার নিয়ে প্রথম প্রকাশিত হলো মাসিক লাল-সবুজ। ২০১০ সালের কথা সেটা। সেই থেকে পত্রিকাটি এখনো অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
পত্রিকা অনিয়মিত হলেও তাহসীনের লাল-সবুজ স্বপ্ন থেমে থাকেনি। পত্রিকা থেকে আজ সেটা সংগঠন—লাল সবুজ সোসাইটি। এই সংগঠনের মাধ্যমেই তাহসীন তরুণদের যুক্ত করতে চান, সঙ্গী করতে চান দেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের।