ড্যাশ ডায়েট: উচ্চ রক্তচাপের রোগীর খাবার

উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে
ছবি: প্র স্বাস্থ্য

উচ্চ রক্তচাপ কেবল ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, এ জন্য দরকার জীবনাচরণে পরিবর্তন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের রোগীদের গবেষকেরা ড্যাশ (ডায়েটারি অ্যাপ্রোচ টু স্টপ হাইপারটেনশন) ডায়েট অনুসরণ করতে বলেন। এটি খুবই সহজ এবং সাধারণ। এই ডায়েটের মূল বিষয় চারটি—

১. প্রচুর তাজা ফলমূল, শাকসবজি ও দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে।

২. সম্পৃক্ত চর্বি, উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার ও ট্রান্সফ্যাট পরিহার করতে হবে।

৩. গোটা শস্যের তৈরি খাবার, বাদাম, মাছ ও মুরগি খাওয়া যাবে।

৪. সোডিয়াম, চিনি, চিনিযুক্ত পানীয় ও রেডমিট গ্রহণ সীমিত রাখতে হবে।

গবেষকেরা বলেন, ড্যাশ ডায়েট চর্চা করলে রক্তচাপ মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব।

কীভাবে শুরু করবেন?

  • ড্যাশ ডায়েটের শুরুতে প্রথমেই লবণ বা সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন। ২৪ ঘণ্টায় নিজের জন্য ২৪০০ মিলিগ্রাম বা এক চা–চামচ পরিমাণ লবণ বরাদ্দ করুন। মনে রাখবেন, এই পরিমাণ রান্না করা খাবারসহ হিসাব করতে হবে।

  • দুপুর ও রাতের খাবারে শাকসবজির পদ অবশ্যই রাখবেন।

  • সকাল ও বিকেলের নাশতায় রাখুন তাজা ফলমূল।

  • মাখন, মার্জারিন, সালাদ ড্রেসিং–জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। খেতে হলে লো ফ্যাট, লো সোডিয়াম বেছে নিন।

  • প্রতিদিন লো ফ্যাট বা স্কিমড মিল্ক (ফ্যাট তোলা দুধ) বা দুগ্ধজাত খাবার রাখুন তালিকায়।

  • স্ন্যাক্স হিসেবে চিপস, ফাস্ট ফুড বা ডেজার্ট–জাতীয় খাবারের বদলে বেছে নিন লবণহীন বাদাম, টকদই, কিশমিশ, পপকর্ন ইত্যাদি।

  • যেকোনো খাবার কেনা বা অর্ডার দেওয়ার আগে লবণের পরিমাণ দেখে নিন। সয়াসস, টেস্টিং সল্ট, কেচাপ, আচার ইত্যাদি দিয়ে তৈরি খাবারে লবণ বেশি থাকে।

কী কী খাবেন না

  • কলিজা, মগজ, হাড়ের মজ্জা। এই অংশগুলোতে বেশি পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে। ক্যালরি এবং ফ্যাট কম থাকলেও চিংড়িতে আছে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল। সাড়ে তিন আউন্স চিংড়িতে আছে ১৮৯ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল।

  • মাছের মাথা, ডিম। রক্তের লিপিড প্রোফাইল বাড়িয়ে দেয় যেসব উপাদান, সেই এলডিএল বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের উৎস হচ্ছে মাছের মাথা বা মাছের ডিম।

  • নিয়মিত যাঁরা সপ্তাহে একবার ফাস্ট ফুড খান, তাঁদের ক্ষেত্রে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। যাঁরা একের বেশি অর্থাৎ দুই–তিনবার খান, তাঁদের হার আরও বেশি, ৫০ শতাংশ।

  • ঘি ও মাখনে আছে উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট। সেই সঙ্গে আছে পামিটিক অ্যাসিড, যা আর্টারি ব্লকের কারণ হতে পারে। বদলে জলপাই তেল, সূর্যমুখী তেল বা মার্জারিন ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • খাবারে নারকেল ও পাম তেল ব্যবহারের প্রবণতা খারাপ। নারকেল তেলের ৮৫ থেকে ৯০ ভাগই স্যাচুরেটেড ফ্যাট।

  • খাবার যত ভাজা বা ডিপ ফ্রাই হয়, তত তাতে যুক্ত হতে থাকে ক্ষতিকারক ফ্যাট। ডিপ ফ্রাই করা হলে তেল ট্রান্সফ্যাটে রূপান্তরিত হয়। এসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

  • রেডমিটে কেবল কোলেস্টেরল বেশি তা নয়, রেডমিট ভেঙে কারনিটাইন নামে একটি যৌগ দেহে তৈরি হয়, যা ট্রিমাথাইলেমাইন এন অক্সাইড নিঃসরণ করে। এটি এথেরোসক্লেরোসিসে ভূমিকা রাখে।

  • কেবল লবণ নয় চিনিযুক্ত পানীয়ও রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। যকৃতে চর্বি হিসেবে জমা হয়। কেক, পেস্ট্রি, পুডিং, আইসক্রিম ইত্যাদি খাবার চিনিযুক্ত।

উচ্চ রক্তচাপের রোগীর খাদ্যতালিকা

একজন প্রাপ্তবয়স্ক উচ্চ রক্তচাপের রোগীর খাদ্যতালিকা যেমন হতে পারে—

সকালের খাবার: হাতে বানানো লাল আটার রুটি ২–৩টি, মিশ্র সবজি ১ কাপ, ডিম সেদ্ধ ১টি, রং চা ১ কাপ।

দিনের মধ্যভাগের স্ন্যাক্স: যেকোনো কম মিষ্টিজাতীয় ফল ১-২টি।

দুপুরের খাবার: ভাত ২ কাপ, সবজি অথবা শাক ১ কাপ, ১ টুকরা বড় মাছ (সপ্তাহে ১ দিন সামুদ্রিক মাছ), ডাল ১ কাপ, সালাদ আধা কাপ।

সন্ধ্যার নাশতা: আগে ভেজানো কাঠবাদাম ৫ পিস।

রাতের খাবার: ভাত ১ কাপ অথবা রুটি ২ পিস, সবজি ১ কাপ, মুরগির বুকের মাংস ১ পিস, ডাল ১ কাপ। ঘুমাতে যাওয়ার আগে টকদই ১ কাপ ও কালোজিরা আধা চা–চামচ।