জোর করে খাইয়ে কারও বিপদ ডেকে আনছেন না তো?
বাঙালি অতিথিপরায়ণ। আবার বাঙালি ভোজনরসিকও বটে। ঈদ কিংবা বিয়েতে সবার জন্য এলাহি খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত তো হয়ই, বিয়ের পরের কয়েকটা দিন নবদম্পতিকে এর-ওর বাড়ি নেমন্তন্ন রক্ষা করতে দেখা যায়। বিদেশ-বিভুঁই থেকে চেনাজানা কেউ কদিনের জন্য দেশে এলেও এবাড়ি-ওবাড়ি থেকে নেমন্তন্ন করার ধুম পড়ে। সেসবই তো দারুণ ব্যাপার। ভালোবাসা আর মায়ার বন্ধনে সবাইকে জড়িয়ে রাখার সুন্দর ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু খাবার নিয়ে কাউকে জোরাজুরি করতে গেলে এই চমৎকার সময়েও বাধতে পারে বিপত্তি। সেটা কী রকম? জেনে নিন আজ।
খাবার নিয়ে জোরাজুরি করা ঠিক নয়। বেশি খেলে পেটে নিদারুণ অস্বস্তি হতে পারে যে কারোরই। অতিরিক্ত খেলে যে কেবল হাঁসফাঁস করতে হয়, সেটাই নয়। হতে পারে বদহজম। পেটব্যথা করতে পারে, বমিও হয়ে যেতে পারে খানিক পরে। সাময়িক এসব সমস্যা ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি কিংবা জটিল সমস্যাতেও ভুগতে হতে পারে কাউকে কাউকে। এমনটাই জানালেন ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খান।
সবার জন্য সুস্থতা
‘এক দিন একটু বেশি খেলে কিছু হবে না’ জাতীয় কথা বলতে শোনা যায় অনেককেই। অথচ সুস্থ থাকতে সব সময় নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করা সবার জন্যই জরুরি। আর যাঁরা কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত, তাঁদের জন্য জীবনযাপনের কিছু ‘নিয়মকানুন’ মেনে চলাটা কিন্তু চিকিৎসারই অংশ হয়ে দাঁড়ায়। এই এক দিনের বেশি খাওয়াতেই হিতে বিপরীতও হতে পারে।
ওজন বাড়ার ঝুঁকি
কারও কারও নির্দিষ্ট কোনো রোগ না থাকলেও একটু বেশি খেলেই মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। তিনি হয়তো বহু কষ্টে একটা ‘স্বাস্থ্যকর’ ওজনে আসতে পেরেছেন, কিন্তু ‘শুভাকাঙ্ক্ষী’দের অনুরোধ রাখতে গিয়ে তাঁর হয়তো খাওয়াদাওয়া হয়ে গেল বেশি। ফলে ওজনটাও গেল বেড়ে। এই বাড়তি ওজন তাঁর জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আর স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে চাইলে তাঁকে নতুন করে ওজন কমানোর ‘যুদ্ধে’ নামতে হবে। একটানা কিছুদিন কেবল এর-ওর বাড়ি নেমন্তন্ন খেয়ে বেড়ালে কিন্তু ওজন বাড়তে পারে যে কারোই।
কোনো রোগ থাকলে
কম বয়সেও কারও কারও ডায়াবেটিস কিংবা অন্যান্য রোগ থাকে। কিডনির রোগ কিংবা ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির খাবারদাবার খেতে হয় নিয়মমাফিক। এদিক-ওদিক করার জো নেই। খাবারদাবার এলোমেলো করে ফেললেই মারাত্মক প্রভাব পড়ে এই রোগীদের শরীরে। কিডনির সমস্যা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া এবং ডায়াবেটিসের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া—দুটিই কিন্তু প্রাণঘাতী পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
যাঁদের ইউরিক অ্যাসিড বাড়তি থাকে, তাঁদেরও খাবার খেতে হয় বুঝেশুনে। নইলে বাড়ে ব্যথা-বেদনা। অন্যদিকে কারও থাকে উচ্চ রক্তচাপ, কারও রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি। কেউ অ্যাসিডিটিতে ভুগছেন, কারও হয়তো পিত্তথলির সমস্যা। কারও আবার নির্দিষ্ট কোনো খাবারে থাকে অ্যালার্জি। রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাবারদাবার ঠিকঠাক থাকা চাই এই রোগীদের সবারই। এমনকি চা-কফিসহ নির্দিষ্ট কিছু খাবার খেলে মাইগ্রেনের ব্যথাও বাড়তে পারে কারও কারও। তাই ‘সামান্য’ এক কাপ চা বা কফি খাওয়ার জন্যও কাউকে কখনো জোর করতে নেই। ডায়রিয়ায় ভুগলেও কিন্তু কিছু খাবার খেতে নিষেধ করা হয়। যেমন শাক কিংবা দুধের তৈরি খাবার। ডায়রিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি বা সদ্যই ডায়রিয়া সেরেছে, এমন ব্যক্তি নেমন্তন্ন রক্ষা করতে গিয়ে কেবল ‘গুরুপাক’ খাবার না খেলেই যে নিরাপদ থাকবেন, তা কিন্তু নয়। বরং ‘মিষ্টান্ন’ খেলেও তাঁর ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শিশুর সঙ্গেও জোরাজুরি নয়
শিশুদের পাকস্থলীর আকার ছোট। স্বাভাবিকভাবে তাদের পাকস্থলীর ধারণক্ষমতাও কম। পেটব্যথা বা বমির মতো সমস্যায় তারা ভুগতে পারে খুব সহজেই। তা ছাড়া সব শিশু সব খাবারে অভ্যস্ত না-ও হতে পারে। তার বাসায় যে ধরনের খাবার তৈরি হয়, তার চেয়ে ভিন্নধারার খাবার খেতে তাকে জোর না করাই ভালো। শিশুটির কোনো খাবারে অ্যালার্জি থাকলে বা অন্য কোনো কারণে নিষেধ থাকলেও সে হয়তো তা বলতে পারবে না। তাই শিশুর অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া তাকে কিছু না খাওয়ানোই ভালো।