আমার খোলা হাওয়া
চারদিকে বেশ ভ্যাপসা গরম। দিন গড়িয়ে বিকেল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইট–পাথরের এই শহরে এই উত্তাপ যেন আরও ছড়িয়ে পরে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র ব্যবহার না করে এমনিতেও ঘর ঠান্ডা রাখা যায়। এ ক্ষেত্রে মেনে চলতে হবে অন্দরসাজের কিছু কৌশল। করোনাভাইরাসের এ সময় বিশেষজ্ঞরা বলছেন ঘরে প্রাকৃতিক আলো–বাতাসের ব্যবস্থা যেন থাকে।
হাইভের স্থপতি রাফিয়া মারিয়াম আহমেদ বললেন, এই সময় ঘরে প্রাকৃতিক হাওয়া–বাতাস ঢোকানো ছাড়া সত্যিই কোনো বিকল্প নেই। তবে অন্দরসাজের অন্যান্যও কিছু বিষয়ের দিকেও দিতে হবে বাড়তি নজর। সূর্যের তীব্রতাকে গ্রহণ করে রাতের বেলায় ঘরের দেওয়ালগুলো যেন ছড়াতে থাকে উত্তাপ। এই সময় হালকা আলো বা ওয়ার্ম লাইট ঘরের তাপমাত্রাকে সহনীয় রাখতে সাহায্য করে।
রাফিয়া মারিয়মের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই মনে পড়ল আমার এক সহকর্মীর বাসার কথা। যার বাসায় রাতের বেলায় প্রতিটি কোণ থেকেই ছড়িয়ে পরে ল্যাম্পশ্যাডের আলো। তার কাছ থেকেই তখন জানতে পেরেছিলাম কারণটা আর কিছুই নয়, ঘর যাতে ঠান্ডা থাকে সে জন্য এই আয়োজন। সত্যিই তাই, ওই বাড়িতে পা রাখতেই যেন ছুঁয়ে যায় একপশলা শীতল হাওয়া।
ঘরকে ঠান্ডা রাখার বিষয়টি কিছুটা মনস্তত্ত্বের সঙ্গে জড়িত বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন ঘরের এককোণে একটা মাটির চারিতে কিছু তাজা সুগন্ধি ফুল রাখুন। দেখবেন, ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই ফুলের সুগন্ধ ঘরের হাওয়াকে করে তুলছে মোহনীয়। দেয়ালে হালকা রঙের ব্যবহারও মনে একধরনের স্বস্তি আনতে সহায়তা করে, মন প্রশান্ত হলে তাঁর প্রভাব পড়ে শরীরে। চোখের এই স্বস্তিটুকুতেই যেন ঘর হয়ে উঠে আরামদায়ক।
ঘরে বেশি আসবাবপত্র থাকলে সেই ঘরকে স্বাভাবিকভাবেই ঘিঞ্জি বলে মনে হয়, অপর দিকে হালকা আসবাবের ব্যবহার ঘরে একধরনের শীতল আমেজ এনে দেয়—বললেন রাফিয়া মারিয়াম আহমেদ। একইভাবে কৃত্রিম ফোয়ারায় পানি পড়ার শব্দেও ঘরে একধরনের ঠান্ডা আবহ তৈরি হয়। মনস্তত্ত্বের ব্যাপারটা এমন যে গরমের দিনে ভারী গয়নায় জমকালো পোশাকের কারও সাজ দেখলে যেমন মনে আসে অস্বস্তি, তেমনি হালকা রঙের পোশাকে স্নিগ্ধ সাজ দেখলেই মনে হয়ে ওঠে প্রশান্ত।
অন্দরসাজে কিছু রদবদলও ঘরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। যেমন জানালায় হালকা কাপড়ের পর্দার ব্যবহার, যে ঘরে গরম বেশি আসে সেই ঘরে টিয়া সবুজ, গোলাপি, হালকা আকাশি এমন এক রঙের সুতি কাপড়ের পর্দা লাগিয়ে দিন। দেখুন বাইরে থেকে আসা রোদের প্রকোপ পর্দার রঙের প্রতিফলনের কারণে কী নান্দনিক হয়েই না ঢুকছে আপনার ঘরে। ঘরের গাছের বিষয়টি তো এখন বেশ জনপ্রিয়। ঘর ঠান্ডা রাখতে এর জুড়ি মেলা ভার। যাঁরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ছাড়া ঘুমাতে পারেন না, তাঁরা বিছানায় শীতল পাটির ব্যবহার করে দেখতে পারেন। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি এই পাটি নিয়ে আসে শীতল আবহ।
ঘর শীতল রাখতে আরও যা
l বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঘরের পর্দা টেনে রাখুন। এই সময় পর্যন্ত বাইরে প্রচুর রোদ থাকে। যে কারণে পর্দা টেনে রাখলে বাইরের গরম বাতাস আর ঘরের ভেতরে ঢুকতে পারবে না।
l অনেকেই ঘরে একাধিক জানালা থাকলে কোনো একটি জানালাকে বন্ধ রেখে তার সামনে আসবাব রেখে দেন। এসি ব্যবহার করলে আলাদা কথা। তবে যাঁরা ব্যবহার করছেন না তাঁরা আসবাব সরিয়ে নিতে পারেন। যাতে খুব সহজেই জানালা দিয়ে প্রাকৃতিক আলো–বাতাস ঘরে খেলা করতে পারে।
l খুব বেশি গরম পড়লে বালতিতে হালকা বরফ পানি সরাসরি ফ্যানের নিচে রেখে দিন। এই পদ্ধতি ঘরকে খুব সহজেই ঠান্ডা করে। জানালার পর্দাতেও স্প্রে করে পানি ছিটিয়ে দিতে পারেন। এই পদ্ধতিতে বাইরের গরম বাতাস ভেতরে ঠান্ডা হয়ে ঢোকে।