শারলি টেম্পল এবং ভালোবাসা দিবসের খানা-খাদ্য

রুই মাছের মাথার বিরিয়ানি হতে পারে এই ভালোবাসা দিবসে আপনার প্রিয়জনের জন্য বিশেষ খাবার। ছবি: উপল আনোয়ার
রুই মাছের মাথার বিরিয়ানি হতে পারে এই ভালোবাসা দিবসে আপনার প্রিয়জনের জন্য বিশেষ খাবার। ছবি: উপল আনোয়ার

শারলি নামটির মধ্যে কেমন যেন একটা মাদকতা আছে, আবেদন আছে। ‘দ্য ডেভিলস্ অ্যাডভোকেট’ কিংবা ‘ম্যাড ম্যাক্স: ফিউরি রোড’ নামে হলিউডের চলচ্চিত্রগুলি যারা দেখেছেন কিংবা মধ্য তিরিশের দশকের ‘কার্লি টপ’ নামের চলচ্চিত্রটি দেখেছেন তারাই জানেন শারলি নামের মাহাত্ম্য। এই শারলির সঙ্গে রুই মাছের মাথার বিরিয়ানি সম্পর্ক কী? সম্পর্ক নেই। একেবারেই নেই। কিন্তু বিরিয়ানির মতো একটি ‘হেভি খানা’ খাওয়ার পর শারলি নামের কেউ যদি আপনার সামনে এসেই যায়, তাকে ফেরাবেন না। শারলি মানে শারলিজ থেরন, শারলি মানে শারলি টেম্পল; দুই নারী। ধীরে ধীরে আসছি সে প্রসঙ্গে।

রুই মাছের মাথার বিরিয়ানি, সুস্বাদু এবং অভিনব। ছবি: উপল আনোয়ার
রুই মাছের মাথার বিরিয়ানি, সুস্বাদু এবং অভিনব। ছবি: উপল আনোয়ার

সুবাসিত সুখাদ্যে আর সুস্বাদু পানীয়ে যদি মন না ভরে, তাহলে দিবসটা যাই হোক খুব ভালো কাটে না। ভালোবাসা দিবসে প্রিয় মানুষকে চমকে দেওয়ারও একটা বিষয় তো থাকে। মন ভরলেও শুধু ফুলের সুবাসে কি আর পেট ভরে? ভরে না। তাই ভালোবাসার দিনে চাই জমিয়ে খাওয়া। আপনি অর্ডার দিয়ে খাবার এনে খেতে পারেন আবার পছন্দের রেস্টুরেন্টে গিয়েও খেতে পারেন, কেউ আপনাকে ঠেকাবে না। কিন্তু যদি বাসায় নিজের মতো করে রাঁধতে পারেন কোনো ব্যতিক্রমী খাবার, একবার ভাবুন তো ব্যাপারটা? কতটা খুশি হবেন আপনার প্রিয় মানুষটি। খাবার শুধু নারীরাই রান্না করবে আর পুরুষেরা খাবে—ই চিরাচরিত নিয়ম এখন আর চলে না। বরং ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে পুরুষেরা রান্না করতে পারেন যেকোনো ধরনের রান্না। তাতে একদিকে যেমন আপনার গতানুগতিক জীবনে পরিবর্তন আসবে, তেমনি খুশি হবে আপনার প্রিয় মানুষটি। চেষ্টা করে দেখুন, বিফলে মূল্য ফেরত।

শারলি টেম্পল মকটেল, অভিনেত্রী, কণ্ঠ শিল্পী, নৃত্য শিল্পী, ব্যবসায়ী এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক শারলি টেম্পল এর নামে প্রচলিত কোমল পানীয়। ছবি: উপল আনোয়ার
শারলি টেম্পল মকটেল, অভিনেত্রী, কণ্ঠ শিল্পী, নৃত্য শিল্পী, ব্যবসায়ী এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক শারলি টেম্পল এর নামে প্রচলিত কোমল পানীয়। ছবি: উপল আনোয়ার

কী রাঁধবেন সেটা নিশ্চয়ই আপনার সিদ্ধান্ত। আমি আপনাকে সহায়তা করতে পারি মাত্র। আপনার জন্য একটা অদ্ভুত খাবারের রেসিপি বলে দিই। আমি নিশ্চিত, নওগাঁ অঞ্চল ছাড়া বেশির ভাগ মানুষ এর নামও শোনেননি আগে।

এত ভণিতা না করে বলেই দিই, আজকের রেসিপি রুই মাছের মাথার বিরিয়ানি। নওগাঁ অঞ্চলের মানুষ বিশেষ দিনে এটি খেয়ে থাকেন বলে জানা যায়। তাদের নিজস্ব রান্নার পদ্ধতি আছে এ ব্যাপারে। কিন্তু সে পদ্ধতিকে কিছুটা সহজ করে দেওয়া হলো। এখানে ব্যবহার করা উপকরণগুলোর পরিমাণ যে হুবহু আপনাকে মেনে চলতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। আপনার স্বাদ মতো উপকরণের ব্যবহার করতে পারেন।

সারা দিন ঘোরাফেরার পর শারলি টেম্পল আপনাকে করে তুলবে ফুরফুরে, তরতাজা। ছবি: উপল আনোয়ার
সারা দিন ঘোরাফেরার পর শারলি টেম্পল আপনাকে করে তুলবে ফুরফুরে, তরতাজা। ছবি: উপল আনোয়ার

উপকরণ:
বড় রুই মাছের মাথা একটি, চিনিগুঁড়া বা বাসমতী চাল ২ কাপ, তেজপাতা ২ টি, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, জিরা বাটা ১ টেবিল চামচ, শুকনো মরিচ গুঁড়ো ১ চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, পেঁয়াজ বাটা ১ / ২ কাপ, ছোট এলাচ ৪টি, দারুচিনি ২ টুকরো, ঘন দুধ ২ টেবিল চামচ, টক দই ১ / ২ কাপ, কাঁচামরিচ বাটা ১ চা চামচ, চিনি ১ চা চামচ, লবণ পরিমাণ মতো, ঘি ২ টেবিল চামচ, পেস্তা বাদাম কুচি ১ টেবিল চামচ, কিশমিশ ১ টেবিল চামচ, কেওড়া জল ১ টেবিল চামচ, ভাজা মসলা গুঁড়ো ১ চা চামচ (দারুচিনি, লবঙ্গ, সাদা গোলমরিচ, মৌরি, মেথি, তেজপাতা, জৈত্রী, জায়ফল, শুকনা মরিচ অল্প পরিমাণ নিয়ে হালকা ভেজে গুঁড়ো করে নিতে হবে।)

প্রণালি:
• প্রথমে চাল ধুয়ে ১ / ২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
• মাছের মাথা ধুয়ে একটু বড় টুকরো করে শুকনো মরিচ গুঁড়ো আর লবণ দিয়ে মাখিয়ে নিন।
• একাটা কড়াইয়ে ঘি নিন। ঘি গরম হলে পেঁয়াজ কুচি নেড়ে নেড়ে ভেজে নিন। বেরেস্তার মতো বাদামি হয়ে এলে সব বাটা মসলা, টকদই দিয়ে কষিয়ে নিন। অল্প অল্প পানি দিয়ে কষাতে থাকুন। কষানো হলে মাছের মাথা দিয়ে আবার কষাতে থাকুন। এবার ২ কাপ পানি ও লবণ দিয়ে ঢেকে দিন সবকিছু সেদ্ধ হওয়ার জন্য। মাঝে মাঝে নেড়ে দিন যেন পুড়ে না যায়। মাছের মাথা সিদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে গেলে চিনি দিয়ে চুলার জাল বন্ধ করে দিন।

এক গ্লাস শারলি টেম্পল আপনার ক্লান্তি দূর করতে পারে। ছবি: উপল আনোয়ার
এক গ্লাস শারলি টেম্পল আপনার ক্লান্তি দূর করতে পারে। ছবি: উপল আনোয়ার

দুধ দিয়ে পোলাও রান্না করে নিন। রান্না হয়ে গেলে হাঁড়ির ওপর থেকে কিছু পোলাও তুলে রান্না মাছের মাথা কাঁচা মরিচ দিয়ে মেখে সেখানে দিয়ে দিন। তারপর হাঁড়ির মুখ বন্ধ করে ১০ / ১৫ মিনিট অল্প আঁচে দমে রাখুন। তারপর নামিয়ে ফেলুন। সালাদ অথবা আচারের সঙ্গে গরম-গরম পরিবেশন করে দেখুন। ভালোবাসা দিবস আপনার অনেক রঙিন হয়ে যাবে।

এবার আসি শারলির কথায়। শারলিজ থেরন নয়, শারলি টেম্পল এর কথা বলছি। অভিনেত্রী, কণ্ঠ শিল্পী, নৃত্য শিল্পী, ব্যবসায়ী এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক এ নারীর নামে রয়েছে একটি বিখ্যাত মকটেল, মানে (নন অ্যালকোহলিক) রঙিন পানীয়। তিনি যখন ছোট এবং শিশু অভিনেত্রী তখন পশ্চিম হলিউডের চেইসেন’স নামের একটি বারের এক বার টেন্ডার শিশু অভিনেত্রী শারলি টেম্পলের পান উপযোগী একটি পানীয় তৈরি করেছিলেন। কালক্রমে যেটি ‘শারলি টেম্পল মকটেল’ হিসেবে পরিচিতি পায়।

এই ভালোবাসা দিবসে আপনাদের জন্য রইল সেই রঙিন পানীয় তৈরির রেসিপি। রুই মাছের মাথার বিরিয়ানি খাওয়ার পর ধীরেসুস্থে শারলি টেম্পল নামের পানীয়টি পান করবেন। আর অবশ্যই শারলি টেম্পলের কথা নয়, ভাববেন আপনার প্রিয় মানুষটির কথা।

শারলি টেম্পল (১ গ্লাসের জন্য)

উপকরণ:
• ১ / ৪ গ্লাস সেভেন আপ অথবা স্প্রাইট
• ১ / ২ গ্লাস অরেঞ্জ জুস
• ১ টেবিল চামচ গ্রেনাডিন সিরাপ অথবা রুহ আফজা
• বরফের কিউব।

কীভাবে করবেন:
• একটি পাত্রে সেভেন আপ বা স্প্রাইট আর অরেঞ্জ জুস মিশিয়ে নিন।
• একটি গ্লাসে বেশ কিছু বরফের কিউব নিন এবার জুস আর সফট ড্রিংক মিশ্রণ ঢালুন তাতে। তারপর গ্রেনাডিন সিরাপ দিয়ে দিন। গ্রেনাডিন সিরাপ নিচে গিয়ে জমবে কিন্তু নাড়বেন না। এবার একটা স্ট্র দিয়ে ছবির মতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন। খাবার সময় স্ট্র দিয়ে নেড়ে নেড়ে খেতে হবে।

একের বেশি গ্লাস বানাতে হলে রেসিপি অনুসারে উপকরণের পরিমাণ বাড়িয়ে নিন।

নিন, সারা দিন ঘুরেফিরে এসে বিশ্রাম করে রেঁধে ফেলুন এই খাবারগুলো কিংবা রেঁধেবেড়ে খেয়ে ঘুরে ফিরে এসে বিশ্রাম নিন। ভালোবাসা দিবস ভালো কাটুক, মন ফুরফুরে হোক।
বিষণ্নতার শহরে ভালোবাসা আসুক, প্রেম আসুক।
রেসিপি: মোস্তারিয়া ইতি