হরেক রকম হোটেল
দেখতে কোনোটা বইয়ের তাক, কোনোটা আবার নিছক পাখির বাসা কিংবা সিলিন্ডার। এসব ভিন্নধর্মী জিনিসেই করা হয়েছে রাত যাপনের বন্দোবস্ত। বিশ্বের এমন পাঁচটি ব্যতিক্রমী হোটেলের খোঁজ রইল এখানে।
বালুর প্রাসাদ
২০১৫ সালে নেদারল্যান্ডসের ওস ও স্নিক শহরে আয়োজন করা হয়েছিল বালুর দুর্গ তৈরির প্রতিযোগিতা। যেখানে নির্মাতারা সত্যি সত্যি বালু দিয়ে তৈরি করেছিলেন দুর্গ। তখনই তাঁদের মাথায় বুদ্ধি এল, এগুলোকে বসবাসের উপযোগী করে তৈরি করেন হোটেল।
যেই ভাবা সেই কাজ, ২০১৫ সালের পর থেকে প্রতিবছর গ্রীষ্মে নেদারল্যান্ডসের এই দুই শহরে বালু দিয়ে ‘স্যান্ড হোটেল’ তৈরি করে দর্শনার্থীদের থাকার ব্যবস্থা হয়। হোটেলগুলোতে আছে শোবার ঘর, খাট, এমনকি বৈদ্যুতিক সংযোগও। হোটেলটির দেয়াল থেকে মেঝে পর্যন্ত, এমনকি ভেতরের শোপিসগুলোও বালুর তৈরি!
সিলিন্ডারে বসবাস
নিউজিল্যান্ডের লিটল রিভার অঞ্চলে সারি সারি সাজানো সিলিন্ডার দেখিয়ে যদি কাউকে বলা হয়, এখানেই আপনকে কটা দিন থাকতে হবে! প্রস্তাব পেয়ে লোকটি নিঃসন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাবে। কারণ, কে বুঝবে এই সিলিন্ডারের ভেতরে আছে সুরম্য দ্বিতল বাড়ি।
অদ্ভুত শোনালেও ব্যাপারটা সত্যি। নয়টি বিশাল আকারের সিলিন্ডার দিয়ে ক্রাইস্টচার্চ থেকে খানিক দূরেই তৈরি করা হয়েছে বিশেষ এই প্রকল্প। যেখানে প্রতিটি সিলিন্ডারের ভেতরে আছে শোবার ঘর, বাথরুম, রান্নাঘর, ড্রয়িংরুমসহ ডুপ্লেক্স বাড়ি। তবে সবচেয়ে চমৎকার আমেজটা নাকি পাওয়া যায় রাতের বেলায়, যখন শোবার ঘরের ছাদের জানালা দিয়ে শুয়ে শুয়ে তারা–ঝলমলে আকাশ দেখা যায়।
মহাকাশযানে এক রাত
ফ্লাইং সসারে চেপে ভিনগ্রহ থেকে এলিয়েনদের পৃথিবীতে আসার কল্পকাহিনির সঙ্গে যাদের পরিচয় আছে, তাদের কাছে এক যেন চমকজাগানিয়া খবর! বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির পাঠকদের এক রাত একটি সসারে কাটানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন যুক্তরাজ্যের ওয়েলশের এক দম্পতি।
২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিক শেষে ওয়েলশের এই যুগল কিনে নেন অলিম্পিকে ব্যবহৃত বড় আকারের একটি কনটেইনার। এরপর প্রায় এক বছর কাজ করে সেটিকে দেন ফ্লাইং সসারের রূপ। চারপাশে এলইডির আলোকসজ্জা, সঙ্গে ভেতরের মহাকাশযানের কায়দায় সাজানো কক্ষ তৈরি করে বৈজ্ঞানিক কল্পকথার পরিবেশ। সঙ্গে দরজায় সদা প্রস্তুত এলিয়েনের পুতুল তো আছেই!
বইয়ের তাকে বইঘুম
যদিও পড়ুয়াদের জন্য বই পড়তে পড়তে সেই বই নিয়েই ঘুমিয়ে পড়াটা নতুন কিছু নয়, টোকিওর একটি প্রতিষ্ঠান তাদের জন্য করে দিচ্ছে বইয়ের তাকেই ঘুমানোর ব্যবস্থা।
২০১৫ সালে জাপানের রাজধানীর ইকেবুকুরো এলাকায় প্রথমবারের মতো খোলা হয় ‘বুক অ্যান্ড বেড’ নামের বুকশেলফ হোটেলটি। ধীরে ধীরে হোটেলটি এত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে বর্তমানে জাপানের আর ছয়টি এলাকায় বুকশেলফ হোটেল চালু করে প্রতিষ্ঠানটি। হোটেলটিতে প্রতিটি ঘর দৈর্ঘ্যে ৬ ফুট ও প্রস্থে ৪ ফুট। যেগুলোকে ঘিরে আছে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সহস্রাধিক বইয়ের সমৃদ্ধ তাক।
পাখির বাসায় শয্যা
রজনীকান্ত সেনের সেই কবিতার কথা মনে আছে? যেখানে চড়ুই পাখি বাবুই পাখিকে তার পাকা বাড়ির বড়াই দেখিয়েছিল। যার উত্তরে বাবুই পাখি বলেছিল, ‘পাকা হোক্, তবু ভাই, পরের ও–বাসা;/ নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর—খাসা!’
উঁচু উঁচু গাছে পাখির বাসার মতো ঝুলন্ত সেই ‘খাসা’ বাসায় থাকার সাধ মেটানোর জন্য যেতে হবে যুক্তরাজ্যের কর্নওয়ালে। ক্যানোপি অ্যান্ড স্টার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান মাটি থেকে ১০ মিটার উঁচুতে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে তৈরি করে রেখেছে গোলাকার ছোট ছোট কক্ষ। আরাম করে গাছের সঙ্গে দোল খেতে খেতে এক রাত কাটিয়ে দিতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকে।
গ্রন্থনা: আকিব মো. সাতিল
সূত্র: লিস্টভার্স