দেয়ালে আঁকি নকশা
দেয়াল সাজানোর আছে নানা পদ্ধতি। পেরেক ঠুকে ছবি টাঙিয়ে অথবা শোপিস ঝুলিয়ে। অনেকে আবার আঠা দিয়ে লাগিয়ে নেন রঙিন ওয়ালপেপার। চাইলে রংতুলির সহায়তায় এঁকে নিতে পারেন ঘরের দেয়াল। খুব বড় করে নয়, বরং মজার মজার ছোট কিছু আঁকিবুঁকি। অবহেলার জায়গাগুলোতেই আঁকতে পারেন। সুইচ বোর্ডের ওপরে কিংবা ছাদের রং চটে যাওয়া দরজায়। একরঙা আর একঘেয়ে সাদামাটা জায়গায় চলে আসবে আনকোরা বৈচিত্র্য।
টেলিভিশন যে দেয়ালে বা দেয়ালের সামনে, সেই দেয়াল এঁকে ফেলা যায়। কারণ, সেই দেয়াল চোখে বেশি পড়ে। অন্য ঘরের ক্ষেত্রে যে দেয়ালে তুলনামূলক আসবাব কম থাকে, এমন দেয়াল বেছে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। শোবার ঘরে খাটের মাথার অংশের দেয়ালকেও বেছে নেওয়া যেতে পারে এ ক্ষেত্রে। আঁকানো দেয়ালে আলোর ব্যবহার করতে পারলে খুব ভালো। দেয়ালে আলোর ব্যবস্থা না থাকলে ল্যাম্পশেড দিয়ে আলোর ব্যবস্থা আঁকা দেয়ালের সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যাবে। তবে যে দেয়াল প্রায় ফাঁকা থাকে, সেখানে শুধুই এঁকে ফেললে দেখতে ভালো লাগবে না। দেয়ালে মানিয়ে যায় এমন কিছু উপাদান পাশাপাশি রাখলে দেখতে ভালো লাগবে। ঘরের দেয়াল আঁকায় এমন পরামর্শ অন্দরসজ্জা ইন্টেরিয়র ডিজাইন অ্যান্ড হোম ডেকরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফজালের।
দেয়ালে এঁকে ফেলার জন্য আপনার নিজস্ব ভাবনাটাই যথেষ্ট। এঁকে ফেলতে পারেন গাছ। সেই গাছে বসে থাকা পাখি দেওয়া যেতে পারে, কিংবা আঁকা যেতে পারে ল্যাম্পপোস্ট নয়তো খোলা জানালা। ইচ্ছেমতো ফুটিয়ে তোলা যেতে পারে যেকোনো জ্যামিতিক নকশাও। ছাদবাগানে অনায়াসেই এঁকে ফেলা যায় বাঁশবাগানের ছবি। সেখানে মাছ চাষ করলে কোনো জলজ ফুলের বা নদীতলের আবহ ফুটিয়ে তুললে জায়গাটি হয়ে উঠবে দৃষ্টিনন্দন। শিশুদের ঘরে মাছ, ডলফিন কিংবা শিশুরা পছন্দ করে এমন যেকোনো ছবি আঁকলে ওদের মন থাকবে ফুরফুরে। ক্যানভাস হিসেবে বেছে নেওয়া যায় সুইচ বোর্ড। প্রতিদিন সুইচ বোর্ডে হাত রেখে পাখা, বাতি জ্বালানো, মুঠোফোন চার্জ দেওয়ার কাজগুলো করতে হয়। সেই সুইচ বোর্ডের ওপর, পাশ কিংবা নিচের খালি দেয়ালে ইচ্ছেমতো নকশা ফুটিয়ে তোলা যায় অন্দরসাজে।
দেয়াল আঁকতে চাইলে যেকোনো রংকেই বেছে নেওয়া যায়। যেকোনো রঙের দেয়ালে কালো রং ফুটে উঠবে। সঙ্গে নাহয় থাকল পছন্দমতো লাল, সবুজ, হলুদ, গোলাপি কিংবা অন্য কোনো রং। দেয়ালে আঁকতে চাইলে প্রথমে দেয়ালে পেনসিল দিয়ে হালকাভাবে ছবিটি এঁকে নিতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে রং করে নিন। একাধিক রং ব্যবহার করতে চাইলে আগে অন্য রং দিয়ে ভরাট করার কাজ করে নিয়ে তারপর মূল ছবিটি কালো বা অন্য কোনো গাঢ় রং লাগবে।
শখের বশে নিজের বাসার দেয়াল এঁকেছেন গৃহিণী নাসরিন হাসান। তিনি বলেন, দেয়ালে আঁকাআঁকি করতে চাইলে ডিসটেম্পার, প্লাস্টিক পেইন্ট, লাক্সারি পেইন্ট, এনামেল পেইন্ট থেকে শুরু করে অ্যাক্রিলিক পেইন্ট, নেইল পলিশ ও আইলাইনারকেও ব্যবহার করা যায়। শুধু আঁকার হাত ভালো থাকলে আর রঙের ব্যবহার সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকলেই রংতুলি নিয়ে বসে পড়া যায়। তবে রঙের সঙ্গে মিডিয়া হিসেবে অন্য কিছু মিলিয়ে পাতলা না করাই ভালো, তাতে রং দেয়াল গড়িয়ে পড়ে যেতে পারে।
নিজে করতে না চাইলে পেশাদার হাত দিয়েও এঁকে নিতে পারেন দেয়াল। বার্জার, এশিয়ান পেইন্টের যেকোনো শাখায় যোগাযোগ করলে তাদের নিজস্ব কর্মী বাসায় এসে কাজটি করে দেবেন। কিংবা আশপাশের যেকোনো রঙের দোকানে খোঁজ করলে তারাও জানাতে পারবে দেয়াল আঁকিয়ের সন্ধান। আঁকা দেয়ালের কাছাকাছি গাছ ঝুলিয়ে, ল্যাম্পশেড রেখে, কৃত্রিম ঝরনার ব্যবস্থা করে কিংবা শতরঞ্জি বা কুশন বিছিয়ে রেখে বাসায় আনুন অভিনবত্বের ছোঁয়া।