শুঁটকির স্বাদ শুকনা নয়

ঈদের পর মাংস খেয়ে হাঁপিয়ে উঠলে শুঁটকির বৈচিত্র্যময় স্বাদ আপনাকে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে। সঠিক প্রণালিতে রান্না করতে পারলে শুঁটকির মতো মজার খাবার খুব কমই আছে। কয়েক রকম শুঁটকি রান্নার রেসিপি জানাচ্ছেন ফাতিমা আজিজ।

টক ঝাল মিষ্টি কোরাল শুঁটকি। ছবি: খালেদ সরকার
টক ঝাল মিষ্টি কোরাল শুঁটকি। ছবি: খালেদ সরকার

টক ঝাল মিষ্টি কোরাল শুঁটকি
উপকরণ
কোরাল শুঁটকির ফিলে ১২৫ গ্রাম, লবণ অল্প, গোলমরিচের গুঁড়া সিকি চা-চামচ, আদাবাটা সিকি চা-চামচ, লেবুর রস আধা চা-চামচ ও কাঁচা মরিচ (মিহি করে কুচি) ২ চা-চামচ।
ব্যাটারের জন্য—ময়দা সিকি কাপ, কর্নফ্লাওয়ার ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, ডিম অর্ধেক, মরিচগুঁড়া আধা চা-চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, পানি প্রয়োজনমতো ও তেল ডিপ ফ্রাইয়ের জন্য।
সিরাপের জন্য—সিরকা ৪ টেবিল চামচ, লেবুর রস ২ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, রেড চিলি ফ্লেক্স ১ চা-চামচ, পানি ২ টেবিল চামচ, জলপাই তেল ১ টেবিল চামচ, পুদিনাপাতা ও রোস্টেও সাদা তিল সাজানোর জন্য, রসুনকুচি ২ চা-চামচ ও বাদামি চিনি ৫ টেবিল চামচ।

প্রণালি
শুঁটকি দেড় ইঞ্চি লম্বা করে কেটে তিন–চার ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। একটি পাত্রে শুঁটকির টুকরাগুলো নিয়ে লবণ, গোলমরিচের গুঁড়া, কাঁচা মরিচকুচি, আদাবাটা ও লেবুর রস দিয়ে মেখে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন। এর মধ্যে ময়দার সঙ্গে তেল ছাড়া অন্য সব উপকরণ একত্রে মিশিয়ে একটি ব্যাটার তৈরি করুন। ব্যাটার খুব বেশি পাতলা বা ঘন হবে না। প্যানে তেল গরম করে ১ টেবিল চামচ তেল ব্যাটারে ভালো করে মিশিয়ে নিন। মেরিনেট করা ফিলেগুলো ব্যাটারে গড়িয়ে গরম ডুবো তেলে মুচমুচে করে ভেজে তেল ছেঁকে উঠিয়ে পোর টাওয়েলে রাখুন। সিরাপের জন্য প্যানে অলিভ ওয়েল গরম করে রসুনকুচি সোনালি করে ভেজে নিয়ে তাতে লেবুর রস, সিরকা ও চিনি এবং পানি দিয়ে জ্বাল দিন। চিনি গলে গেলে লবণ ও রেড চিলি ফ্লেক্স দিয়ে নাড়ুন। সিরাপ ঘন হয়ে এলে ভেজে রাখা শুঁটকির ফ্রাইগুলো দিয়ে মিশিয়ে নিন। সার্ভিং ডিশে ঢেলে ওপরে তিল ও পুদিনাপাতা দিয়ে সাজিয়ে নিন।

শুঁটকি নারকেল স্টার ফ্রাই। ছবি: খালেদ সরকার
শুঁটকি নারকেল স্টার ফ্রাই। ছবি: খালেদ সরকার

শুঁটকি নারকেল স্টার ফ্রাই
উপকরণ
কাঁচকি মাছের শুঁটকি ১০০ গ্রাম, লেবুপাতা ২টি, পেঁয়াজকুচি ২০টি, কোরানো নারকেল (আধা বাটা) ১ কাপ, কাঁচা মরিচ ৫টি, হলুদগুঁড়া সিকি চা-চামচ, তেঁতুল (বিচি ছাড়া) ১ চা-চামচ, জিরা আধা চা-চামচ, শুকনা মরিচ ৬টি, রসুন ৬ কোয়া, লবণ সিকি চা-চামচ ও তেল সিকি কাপ।

প্রণালি
তেল, অর্ধেক পেঁয়াজকুচি, লেবুপাতা, ৩টি শুকনা মরিচ এবং নারকেল ছাড়া বাকি উপকরণ ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন অথবা পাটায় পিষে নিন। একটি মাটির হাঁড়িতে নারকেলবাটা, শুঁটকি মাছ ও মসলার মিশ্রণ দিয়ে মেখে নিন। সামান্য পানি দিয়ে মাখাতে হবে। এবার হাঁড়িটি চুলায় চাপিয়ে দিন। ঢেকে ১০ মিনিট রান্না করুন। একবার নেড়ে পুনরায় ঢেকে দিন। তারপর চুলা থেকে নামিয়ে ঢাকনা খুলে রাখুন। কড়াইয়ে তেল গরম করে তাতে এক চিমটি কালো সরিষার ফোড়ন দিয়ে বাকি পেঁয়াজকুচি, লেবুপাতা ও শুকনা মরিচের ফোড়ন দিন। পেঁয়াজ সোনালি রং হয়ে এলে শুঁটকির হাঁড়িতে ফোড়নের মিশ্রণ ঢেলে মিশিয়ে নিন। অল্প আঁচে ২-৩ মিনিট চুলায় রেখে নামান।

শিম চিংড়ির সাম্বাল। ছবি: খালেদ সরকার
শিম চিংড়ির সাম্বাল। ছবি: খালেদ সরকার

শিম চিংড়ির সাম্বাল
উপকরণ
প্রথম ধাপ: পেঁয়াজ ২০০ গ্রাম, আম-আদা (গ্যালেংগাল) বা আদা ২ টুকরা ও তেল ৫ টেবিল চামচ। ব্লেন্ড করে নিন।
দ্বিতীয় ধাপ: পাকা মরিচকুচি ১০০ গ্রাম, চিংড়ি শুঁটকি ৪ টেবিল চামচ ও তেল ৫ টেবিল চামচ। শুঁটকি ২০ মিনিট ভিজিয়ে ধুয়ে ব্লেন্ড করুন।
তৃতীয় ধাপ: শুকনা মরিচ ৫০ গ্রাম, তেল ৫ টেবিল চামচ। ফোটানো গরম পানিতে ২০ মিনিট শুকনা মরিচ ভিজিয়ে রেখে তেল দিয়ে ব্লেন্ড করুন।
অন্যান্য উপকরণ: পরিষ্কার চিংড়ি শুঁটকি ৫০০ গ্রাম, বরবটি ২৫০ গ্রাম (১ ইঞ্চি আকার), রোস্টেড চিংড়ি শুঁটকির গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, চিনি ৩ টেবিল চামচ, তেঁতুলের ক্বাথ ৩০ গ্রাম, বড় পেঁয়াজ স্লাইস ১টি, পানদানপাতা ৩টি, লবণ স্বাদমতো, তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি
প্যান বা কড়াইয়ে ২ টেবিল চামচ তেল গরম করে পেঁয়াজ ও পালংশাকের মিশ্রণ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন। আদা ও পেঁয়াজের সুন্দর গন্ধ বের হলে লাল পাকা মরিচবাটা ও চিংড়ি শুঁটকির পেস্ট দিয়ে আরও ৮ থেকে ১০ মিনিট কষিয়ে নিন। সব শেষে মরিচবাটা দিয়ে কষিয়ে নিন। ভালো করে কষানো হলে মসলায় একটা সুন্দর গন্ধ বের হবে এবং মসলা থেকে তেল ছাড়া শুরু করবে। তারপর চিংড়ি শুঁটকির গুঁড়া, চিনি, তেঁতুলের ক্বাথ ও পেঁয়াজকুচি এবং পানদান পাতা দিয়ে ১৫ মিনিট রান্না করুন। লবণ দিয়ে আরও ৬ মিনিট রান্না করুন। এবার একটি প্যানে ৪ টেবিল চামচ সাম্বাল নিয়ে তাতে বরবটি দিন। বরবটি সেদ্ধ হয়ে এলে বাকি চিংড়ি মাছ দিয়ে মিশিয়ে রান্না করুন। মাখা মাখা হলে নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

লইট্টা শুঁটকির পাতুরি। ছবি: খালেদ সরকার
লইট্টা শুঁটকির পাতুরি। ছবি: খালেদ সরকার

লইট্টা শুঁটকির পাতুরি
উপকরণ
বাঁশপাতা মাছের শুঁটকি ২৫০ গ্রাম, আদা-রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, মরিচগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, সরিষাবাটা (১টি কাঁচা মরিচসহ) আধা টেবিল চামচ, ধনেগুঁড়া আধা টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, টমেটোকুচি আধা কাপ, তেল ৪ টেবিল চামচ, রসুনকুচি ৩ কোয়া ও কলাপাতা।

প্রণালি

শুঁটকি আকার বুঝে ৩-৪ টুকরা করে নিন। পানিতে ৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। প্যানে তেল গরম করে মাছের শুঁটকি সোনালি করে ভাজুন। এবার পেঁয়াজকুচি, মরিচের গুঁড়া, আদা-রসুন ও সরিষাবাটা, হলুদ এবং ধনেগুঁড়া দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নাড়ুন। লবণ দিন। ২ মিনিট পর টমেটোকুচি দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন। মসলা থেকে তেল উঠলে সামান্য পানি দিয়ে ভুনা করে নিন। তেল ছেড়ে দিলে নামিয়ে রাখুন। ২ টেবিল চামচ তেল গরম করে রসুনকুচি সোনালি করে ভেজে ভুনা শুঁটকিতে মিশিয়ে দিন।

এবার একটি কলাপাতা ধুয়ে ঠিকমতো দুই টুকরা করে নিন। এবার কলাপাতার একটি টুকরাতে রান্না করা শুঁটকি দিয়ে আরেকটা কলাপাতা দিয়ে ঢেকে চারপাশে টুথপিক গেঁথে বন্ধ করে দিন। প্যানে তেল ব্রাশ করে সাবধানে কলাপাতায় মোড়ানো শুঁটকি ভুনা প্যানে রেখে মাঝারি আঁচে ঢেকে দিন। ৫ মিনিট পর সাবধানে উল্টে দিন। ৫ মিনিট পর চুলা বন্ধ করে পাতুরি একটি প্লেটে আলতোভাবে তুলে নিন।

ড্রাই ফিশ এস্কাবেচ। ছবি: খালেদ সরকার
ড্রাই ফিশ এস্কাবেচ। ছবি: খালেদ সরকার

ড্রাই ফিশ এস্কাবেচ
উপকরণ
রুপচাঁদা অথবা সুন্দরী মাছের শুঁটকি ৫০০ গ্রাম, জলপাই তেল ১ টেবিল চামচ, রসুনকুচি ৩ কোয়া, পেঁয়াজ স্লাইস ২টি, আদা (জুলিয়ান কাট) ১ টুকরা, সয়াসস ২ টেবিল চামচ, পানি ১ কাপ, ব্রাউন সুগার সিকি কাপ, সিরকা পৌনে এক কাপ, ময়দা ২ টেবিল চামচ, পানি আধা কাপ, লাল ও সবুজ ক্যাপসিকাম (জুলিয়ান কাট) অর্ধেক করে। টমেটো ২টি, গাজর অর্ধেক, লেবুর রস আধা কাপ, পার্সলি/ধনেপাতা (সাজানোর জন্য) ১ মুঠো, সয়াবিন তেল ডিপ ফ্রাইয়ের জন্য ও গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ।

প্রণালি
সুন্দরী শুঁটকি হলে ভিজিয়ে আঁশ পরিষ্কার করে নিন। আর যদি রুপচাঁদা শুঁটকি হয় তাহলে ৫-৬ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পেপার টাওয়েল দিয়ে শুকনা করে মুছে নিন। একটি কড়াইয়ে তেল গরম হলে শুঁটকি মাছে এক চিমটি লবণ মেখে ডুবো তেলে একটু মুচমুচে করে ভেজে তেল ছেঁকে পেপার টাওয়েলে উঠিয়ে রাখুন।
অন্য একটি প্যানে জলপাই তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজকুচি দিয়ে ৩-৪ মিনিট ভেজে তাতে আদা-রসুন স্লাইস দিয়ে আরও ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ভেজে নিন। এরপর সয়াসস, সিরকা, পানি ও ব্রাউন সুগার দিয়ে কয়েক মিনিট জ্বাল দিন। লবণ ও গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে নাড়ুন। হালকা নেড়ে রেড ও গ্রিন বেল পেপার, গাজর, টমেটো এবং লেবুর রস দিয়ে আলতোভাবে নাড়ুন।
পানিতে ময়দা গুলে ওপরের মিশ্রণে মিশিয়ে নাড়ুন। কিছুক্ষণ রান্না করার পর ভাজা মাছগুলো দিয়ে খুব সাবধানে কয়েক সেকেন্ড পর উল্টে দিন। সার্ভিং ডিশে প্রথমে টমেটো ও বেল পেপারে মিশ্রণ ঢেলে তার ওপর মাছগুলো দিন। এক পাশে ড্রাই ফিশ এস্কাবেচ, আরেক পাশে স্টিম রাইস ও ধনেপাতা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

শুঁটকির চাটনি। ছবি: খালেদ সরকার
শুঁটকির চাটনি। ছবি: খালেদ সরকার

শুঁটকির চাটনি
উপকরণ
ফ্যাপসা শুঁটকি ৮টি, সরিষার তেল সিকি কাপ, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, রসুন ৬ কোয়া, মরিচগুঁড়া দেড় চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিনি আধা চা-চামচ, সিরকা ২ চা-চামচ, ধনেপাতার কুচি দেড় টেবিল চামচ ও তেঁতুল (বিচি ছাড়ানো) ১ চা-চামচ।

প্রণালি

শুঁটকি মাছগুলো ৪-৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। প্যানে ২ চা-চামচ তেল দিয়ে শুঁটকি মাছগুলো অল্প কিছুক্ষণ টেলে তুলে রাখুন। একই প্যানে আরও ২ চা-চামচ তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি হালকা সোনালি করে ভেজে নিন। রসুনের কোয়াগুলো দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ভাজুন। প্যান থেকে নামিয়ে ঠান্ডা হলে পাটায় পিষে নিন। তারপর টালা শুঁটকিগুলো বেটে নিয়ে আরেকটি ভিন্ন পাত্রে রাখুন। অন্য একটি প্যানে বাকি তেল গরম করে রসুন ও পেঁয়াজের মিশ্রণ ও তেঁতুল দিয়ে নেড়ে তাতে মরিচগুঁড়া, লবণ, চিনি ও কাঁচা আমের ক্বাথ দিয়ে কষিয়ে নিন। ভালো করে কষানো হলে শুঁটকি বাটা দিয়ে মিশিয়ে নাড়ুন। ২ চা-চামচ পানি ও সিরকা দিয়ে কষিয়ে নিয়ে ধনেপাতার কুচি ও কাঁচা মরিচ দিয়ে নাড়ুন। আঁচ কমিয়ে দিন। ২ চা-চামচ কাঁচা সরিষার তেল দিয়ে ঢেকে চুলা বন্ধ করে দিন।

সৌজন্যে: প্রথম আলো বর্ণিল খাবারদাবার, ২০১৯