সে যুগে পরিভ্রমণ মানেই দুর্গম পথে যাত্রা। তবু দুঃসাহসী পরিব্রাজকেরা ছুটতেন নতুন তথ্য কিংবা কম খরচের সামগ্রী পাওয়ার আশায়। এভাবেই অনেক সময় তাঁরা আবিষ্কার করতেন নতুন দেশ, মহাদেশ; মানুষের সামনে হাজির করতেন অজানা সংস্কৃতি-প্রযুক্তির। এমন অনন্যসাধারণ পাঁচজন পরিব্রাজকের কথাই রইল।
লেইফ এরিকসন
আমেরিকা আবিষ্কারের কৃতিত্বটা এখনো ক্রিস্টোফার কলম্বাসকেই (১৪৫১-১৫০৬) দেওয়া হয়। তবে আধুনিক গবেষকেরা বেশ জোরেশোরেই দাবি তুলছেন, কলম্বাস আমেরিকা মহাদেশে পা রাখা প্রথম পরিব্রাজক নন। তাঁদের দাবি, গ্রিনল্যান্ড থেকে আসা পরিব্রাজক লেইফ এরিকসনই (৯৭০-১০২০) প্রথম আমেরিকা মহাদেশের কানাডা অংশে জাহাজ ভিড়িয়েছিলেন। এমনকি তিনি বিয়ে করেছিলেন স্থানীয় এক রাজকন্যাকেও। সেটা কিনা ১০০০ সালের দিকে, অর্থাৎ কলম্বাস জন্ম নেওয়ারও প্রায় ৫০০ বছর আগে!
মার্কো পোলো
ইতালীয় পরিব্রাজক মার্কো পোলো (১২৫৪-১৩২৪)। বাবা এবং চাচার সঙ্গে মূলত ব্যবসার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন ভ্রমণে। এই অভিযাত্রীরা সিল্ক রোড (প্রাচীন বাণিজ্যিক পথ) দিয়ে ভেনিস থেকে পারস্য, আফগানিস্তান হয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন সে যুগের চীনে। সেখান থেকে ভারতে, ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায়। প্রায় ২৪ বছর পর তিনি ফিরে আসার তিন বছরের মধ্যে বিদ্রোহের দায়ে বন্দী হন। কারাগারে বসে লেখা তাঁর ট্রাভেলস অব মার্কো পোলো বইয়ে ২৪ বছর ভ্রমণের একটা ধারণা পাওয়া যায়।
ইবনে বতুতা
মরক্কোতে জন্ম ইবনে বতুতার। ১৩২৫ সালে এই ভ্রমণপ্রিয় মানুষ পবিত্র হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছিলেন। তবে তাঁর ভ্রমণ পরে রূপ নিয়েছিল বিশ্বভ্রমণে। পরের ২৯ বছরে তিনি বর্তমান সময়ের তিন মহাদেশের চল্লিশটির বেশি দেশ ভ্রমণ করেন। মরক্কো থেকে শুরু করে তিনি একে একে মিসর, ইয়েমেন, সৌদি আরব, আজারবাইজান, তুরস্ক হয়ে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, ভারত, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করেছেন। গিয়েছিলেন চীনে, এসেছিলেন বাংলাদেশের চট্টগ্রামেও।
ফার্দিনান্দ ম্যাগিলান
স্পেন থেকে ইন্দোনেশিয়ার ‘মরিচ দ্বীপ’-এর খোঁজে বেরিয়েছিলেন পর্তুগিজ পরিব্রাজক ফার্দিনান্দ ম্যাগিলান। সঙ্গে ছিল পাঁচটি জাহাজে ২৭০ জন সাহায্যকারী। সেই বহর তিন বছর পর যখন স্পেনে ফিরে আসে, তখন বেঁচে ছিলেন মাত্র ১৮ জন। টিকে ছিল একটি মাত্র জাহাজ।
ম্যাগিলানের এই বহরই প্রথম নৌপথে বিশ্ব ঘুরেছিল। প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরকে জোড়া লাগানো ম্যাগিলান প্রণালির আবিষ্কারকও তিনি। এমনকি প্রশান্ত মহাসাগরের নামকরণও করেছিলেন ফার্দিনান্দ ম্যাগিলান।
জেমস কুক
পরিব্রাজক হিসেবে সাতটি মহাদেশ, উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরু এবং প্রতিটি মহাসাগর পাড়ি দেওয়াসহ বহু রেকর্ডের মালিক জেমস কুক (১৭২৮-১৭৭৯)। ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তা জেমস কুকের পরিব্রাজক হিসেবে যাত্রা শুরু হয় ১৭৬৮ সালে। তিনি ১০০ সঙ্গী নিয়ে তাঁর জাহাজ এন্ডেভারে আসীন হয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষে বৈজ্ঞানিক একটি মিশনে বের হন। সেই যাত্রায় তিনি একে একে নিউজিল্যান্ড, অ্যান্টার্কটিকা এবং হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের খোঁজ পেয়েছিলেন।
গ্রন্থনা: আকিব মো. সাতিল
সূত্র: হিস্ট্রি ডটকম, টাইম ম্যাগাজিন, ইন্ডিয়া টুডে