ফ্যাশন ও মডেলিংয়ের বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশি মডেলদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আয়োজন করা হয়েছে ‘স্যান্ডেলিনা প্রেজেন্টস ফেস অব বাংলাদেশ ২০১৯’। ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে অনুষ্ঠিত হয় ফেস অব বাংলাদেশ ২০১৯-এর চূড়ান্ত পর্ব। এ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন মারুফ রহমান ও শিরিন শীলা। রানার্সআপ হয়েছেন মেহেদি হাসান ও সাহেলা মজুমদার। পঞ্চম স্থান অর্জন করেছেন মানসী কান্তা সরকার।
এই পাঁচজন মডেল যাবেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেখানে হবে ‘এশিয়া মডেল ফেস্টিভ্যাল’–এর ১৪তম আসরের মূল পর্ব।
পাঁচ হাজার থেকে পাঁচজন
প্রায় পাঁচ হাজার তরুণ-তরুণী ‘ফেস অব বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার জন্য নাম নিবন্ধন করেছিলেন। এরপর ধাপে ধাপে চলে বাছাইপর্ব। শেষমেশ নির্বাচিত হন ২০ জন—১০ মেয়ে, ১০ ছেলে। চূড়ান্ত পর্বে নানা কিছুর বিচারে সেরা পাঁচ নির্বাচন করা হয়।
ভালো লাগা থেকে এগিয়ে চলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে তৃতীয় বর্ষে পড়েন ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়ে শিরিন শীলা। ফেস অব বাংলাদেশে তিনিই চ্যাম্পিয়ন। শীলার সারা দিনই কাটে ক্লাস, পরীক্ষা আর ল্যাবে। ফলাফল ঘোষণার পর শিরিন শীলা বলেন, ‘আমার বিশ্বাস ছিল, আমি পারব। শতকষ্টের মধ্যেও নিজের ভালো লাগার মডেলিংকে ধরে রেখেছি। কিন্তু পড়াশোনার কোনো ক্ষতি হতে দিইনি।’ ভালোবাসা থেকেই মডেলিং করেন। তবে পেশা গড়তে চান পদার্থবিজ্ঞানে।
‘পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিশেষ ক্যাটাগরিতে আমার নাম ঘোষণা করা হয়, তখন ভেবে নিলাম, আমার মনে হয় দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়া হচ্ছে না। কিন্তু ছেলেদের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আমার নাম যখন ঘোষণা করা হলো, নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না।’ এ অনুভূতি মারুফ রহমানের। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরকৌশলে পড়েন তিনি। বাড়ি রাজশাহী। মারুফ রহমান ২০১৫ সাল থেকেই মডেলিং করেন। অভিনয়ও করতে চান ভবিষ্যতে।
ফেনীর মেয়ে সাহেলা মজুমদার উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে পরিবারের আগ্রহে মডেলিং শুরু করেন। সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাহেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও টিউশনি করিয়েও ভালোবেসে করে যাচ্ছেন মডেলিং। বললেন, ‘মডলিং তো করতেই চাই, পাশাপাশি অভিনয় করার ইচ্ছাও আছে।’ সাহেলা ফেস অব বাংলাদেশের রানারআপ।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক মেহেদি হাসানের বাবা চাইতেন তিনি পুলিশ বিভাগে যোগ দেন। ‘কিন্তু আমার তেমন আগ্রহ ছিল না। বাবার কাছ থেকে একটি সুযোগ চেয়ে নিই আমি। বাবাও আমার প্রতি বিশ্বাস রেখে আমাকে সুযোগ দেন।’ এভাবেই মডেলিংয়ের শুরু মেহেদি হাসানের। আর ফেস অব বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় ছেলেদের বিভাগে হলেন রানারআপ। জানালেন, পরিবার থেকে এখন বেশ সমর্থন পাচ্ছেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে চান। আর থাকতে চান এ জগতেই।
ছোটবেলা থেকেই মডেলিংয়ের প্রতি ভালো লাগা ছিল মানসি কান্তা সরকারের। ১৯৯৪ সালে মানসি যখন মায়ের গর্ভে, তখন মিস ইউনিভার্স হন সুস্মিতা সেন। ‘সেই সময়েই মায়ের এক বান্ধবী আমার নাম রাখে সুস্মিতা। পরে অবশ্য নামটি পারিবারিকভাবে আর সেটা রাখা হয় নাই।’ বড় হয়ে নাম বদলে গেলে রুপালি জগতের প্রতি ভালো লাগা একটুও কমেনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মানসির। নিজের আগ্রহ তো আছেই, পাশাপাশি পরিবারের সমর্থনও পাচ্ছেন পঞ্চম স্থানে থাকা মানসি কান্তা সরকার।
শেষ প্রতিযোগিতায় ২০
চূড়ান্ত পর্বে চলে ২০ প্রতিযোগীর লড়াই। নানা ধরনের পোশাক পরে তাঁরা হাঁটেন ফ্যাশন মঞ্চে। পোশাকের মধ্যো ছিল টি–শার্ট, টপ, স্কার্ট, গাউন, শাড়ি। ছেলেদের পরনে ছিল পাঞ্জাবি, ব্লেজার, শেরওয়ানি, চাদর।
ফেস অব বাংলাদেশের চূড়ান্ত পর্বের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি—বিজিএমইএর সভাপতি এবং নাগরিক টেলিভিশনের চেয়ারম্যান রুবানা হক। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে পোশাক দিয়ে দেশকে তুলে ধরছি আমরা। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান তাঁর বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশ নানা ক্ষেত্রে জয়ী হয়েছে। বাংলাদেশ জয়ী হোক, সেটা আমরা সব সময় চাই। তরুণদের মধ্যো মডেলিংকে পেশা হিসেবে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। মডেলিংকে সারা বিশ্বের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।’
প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের বিচারক ছিলেন কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান, নাগরিক টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী আব্দুন নূর তুষার এবং কোরিয়ার এশিয়া মডেল ফেস্টিভ্যালের প্রতিনিধি উ জি ইয়ং, মুনদাই জিং ও আনসু কিং। আগে সিদ্ধান্ত ছিল, বাংলাদেশ থেকে চারজন মডেলকে নির্বাচন করা হবে মূল পর্বের জন্য। পরে বিচারকেরা ২০ জন থেকে ৫ জনকে বেছে নেন বিজয়ী হিসেবে।
‘স্যান্ডেলিনা প্রেজেন্টস ফেস অব বাংলাদেশ’–এর আয়োজন করে ক্রসওয়াক কমিউনিকেশন্স, নাগরিক টেলিভিশন এবং কোরিয়া–বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগ কোরবান। সহযোগিতায় ছিল প্রথম আলো ডটকম, পারসোনা, ক্যানভাস, লা মেরিডিয়ান ও রেডিও এবিসি। এ আয়োজনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল স্যান্ডেলিনা।
চূড়ান্ত পর্বের অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন সভ্যতা ও তাঁর দল, জেফার, ফাইরুজ। নৃত্য পরিবেশন করেন পূজা সেনগুপ্ত। গিটার ও স্যাক্সোফোনে ‘সি স’ গানটি বাজিয়ে শোনান রাহিন ও জিশনু।
লক্ষ্য বাংলাদেশকে তুলে ধরা
প্রতিযোগিতার বাংলাদেশ পর্ব শেষ। এখন লক্ষ্য দক্ষিণ কোরিয়ার মূল পর্বে ভালো ফল করা। তবে পাঁচ প্রতিযোগীই জানালেন, তাঁরা বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চান। লাল-সবুজের পতাকা যেন থাকে সবার ওপরে।
ক্রসওয়াক কমিউনিকেশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মারুফ বলেন, ‘তরুণদের নিয়ে এ ধরনের প্রতিযোগিতা আরও হওয়া উচিত। তরুণদের স্বপ্ন, তাঁদের ইচ্ছাপূরণের এ আয়োজনের সঙ্গে থাকতে পেরে আমরা গর্বিত।’