ভোরে হাঁটতে যাওয়া, প্রতিদিন সুডোকু বা শব্দজট মেলানো, দিনে অন্তত সাত-আটটি সংবাদপত্র পড়া, নিয়মিত ই-মেইল চেক করা এবং রাতে স্কাইপে নাতির সঙ্গে কথা বলা—অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর দৈনন্দিন অভ্যাস। জানা যাক বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য এই ব্যস্ত মানুষের জীবনযাপন
সূর্যোদয় রমনা পার্কে গিয়ে দেখা তাঁর বহু বছরের অভ্যাস। বোঝাই যাচ্ছে কতটা ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন। পুরো রমনা পার্ক এক চক্কর দিতে সময় লাগে ৩২ মিনিট। যদিও কয়েক মাস ধরে সকালে নিয়ম করে প্রতিদিন হাঁটতে যেতে পারছেন না। কিন্তু ঘুম থেকে সকালেই উঠে পড়েন। যেদিন হাঁটতে যান, বাসায় ফিরেই ঘণ্টা দেড়েক আবার ঘুমিয়ে নেন। উঠে নাশতার টেবিলে। এরই ফাঁকে বসে যান প্রথম আলোর সুডোকু ও ডেইলি স্টার পত্রিকার ক্রসওয়ার্ড মেলাতে। যাঁকে নিয়ে এত কথা, তিনি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। প্রকৌশলী, শিক্ষক, পরামর্শক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা—নানা পরিচয়ে পরিচিত সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য।
ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় আলাপচারিতায় জানালেন, ‘সকালের চা হাতে নিয়ে তিনটি পত্রিকার শিরোনামগুলো পড়ি। টিভিতে শুনতে থাকি সকালের খবর। কখনো কখনো বিভিন্ন চ্যানেলে সরাসরি গানের অনুষ্ঠান হয়। সেসবও দেখি। একই সঙ্গে চলতে থাকে এসব।’ এরপর গোসল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বেরিয়ে পড়েন।
বাড়িতে সাধারণত খদ্দরের পাঞ্জাবি পরেন। তবে ঈদ বা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সাদা কাপড়ে সাদা সুতার এমব্রয়ডারি করা পাঞ্জাবি বেছে নেন। গরমের সময় নীলের বিভিন্ন শেডের সিল্কের হাওয়াই শার্ট বা স্ট্রাইপের শার্টই পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। শীতে সাদা স্ট্রাইপের শার্ট পরেন। এর ওপরে চাপিয়ে নেন কখনো হ্যারিস টুইডের জ্যাকেট, কখনো গাঢ় নীল ব্লেজার। ব্লেজারের সঙ্গে টাই পরেন। আনুষ্ঠানিক আয়োজনে পরেন স্যুট।
মজার ব্যাপার হলো, গত ১৫ বছরে তিনি নিজের জন্য কোনো শার্ট কেনেননি। সবই উপহার পেয়েছেন। জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘পোশাক নিয়ে অতো ভাবি না। বিশেষ কোনো ব্র্যান্ডের প্রতিও দুর্বলতা নেই। তবে ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানিয়ে যায় এমন পোশাকই বেছে নিই। কোনো কিছুতেই বাহুল্য পছন্দ করি না। যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকু কেনাকাটা করি।’ পায়ে যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে, তাই স্যান্ডেল সু-ই বেশির ভাগ সময় পরেন।
কোনো মিটিং না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুপুরে বাসায় আসেন। খাবার খেয়ে একটু ঘুমান। এরপর আবার যান বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর মিটিং বা সেমিনার থাকলে তার জন্য আগেই নেন প্রস্তুতি। কাজের ফাঁকে আরও দু-তিনটি পত্রিকা পড়েন। সন্ধ্যার পরে কোনো মিটিং বা দাওয়াত না থাকলে বাসায় চলে আসেন। বসে যান সকালের পত্রিকাগুলো নিয়ে। দিনে সাত আটটা পত্রিকা পড়া হয় তাঁর। এবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব খবর পড়েন। এর মধ্যে টিভিতে রাতের খবর শোনেন। ‘রাতের খাবার খেয়ে আবার কাজ নিয়ে বসি। নিজের পড়ার ঘরে ই-মেইল দেখি। দিনের যে কাজগুলো বাকি থাকে, সেগুলো করে ফেলি। পরদিনের কাজের জন্য প্রস্তুতি নিই। এরপর স্কাইপে নাতির সঙ্গে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করি। ওর জন্য রাত ১২টা পর্যন্ত জেগে থাকি।’
বিছানার পাশে বই থাকে। জামিলুর রেজা চৌধুরীর পড়ার ঘর দেখলে বোঝাই যায় তাঁর সঙ্গে বইয়ের সখ্য কতখানি। তবুও তাঁর আক্ষেপ নানা ব্যস্ততার কারণে আজকাল তেমন একটা বই-ম্যাগাজিন পড়তে পারছেন না। অনেক বই জমে গেছে পড়ার জন্য। তবে দ্য ইকোনমিস্ট পড়েন নিয়মিতই।
একটা সময়ে উত্তম-সুচিত্রার সব সিনেমা দেখতেন। পথে হলো দেরি, শাপমোচন, সাগরিকা তাঁর প্রিয় সিনেমা। রবীন্দ্রসংগীত খুব প্রিয় জামিলুর রেজা চৌধুরীর। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান ভালো লাগে তাঁর কাছে। বেড়াতে খুব পছন্দ করেন। নিজের দেশের বাইরে সুইজারল্যান্ড তাঁর প্রিয় জায়গা। সেখানকার পাহাড় ও হ্রদ তাঁকে টানে। কোথাও বেড়াতে গেলে পৃথিবীর সুউচ্চ ভবনগুলোর ছোট ছোট স্মারক কেনেন। আইপ্যাড, কিন্ডেল থাকলেও সব সময়ের সঙ্গী ল্যাপটপ ও মুঠোফোন।