পাঁচ রাজ্যের করোনা প্রতিবেদন চেয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গসহ পাঁচ রাজ্যের ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ তলব করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার তলব করা এই প্রতিবেদনের ওপর ১৭ জুন শুনানি হবে। এদিকে সংক্রমণ ও মৃত্যুর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে করোনায় অতি আক্রান্ত এলাকা ‘কনটেনমেন্ট জোনের’ সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।


‘স্টেটাস রিপোর্ট’ তলব করা অন্য চার রাজ্য হলো—দিল্লি, মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও তামিলনাড়ু। পরবর্তী সময়ে একই নোটিশ অন্যান্য রাজ্যেও পাঠানো হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অশোক ভূষণের নেতৃত্বে গড়া তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই রিপোর্ট তলব করেন।

পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা

পশ্চিমবঙ্গে প্রথম করোনার হদিস মেলে এ বছরের ১৮ মার্চ। সেই থেকে প্রথম ৭৩ দিনে পশ্চিমবঙ্গে করোনায় সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার। আর সর্বশেষ ১৩ দিনে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১০ হাজারে। আর গতকাল শুক্রবার ছিল পশ্চিমবঙ্গের করোনার হিসাবে নতুন রেকর্ডের দিন। গতকাল রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এই রাজ্যে ৪৭৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এ যাবৎকালে এটিই হলো এক দিনে সংক্রমণের সর্বাধিক সংখ্যা। এর মধ্যে রয়েছে কলকাতারই ১১৩ জন। মারা গেছে ৯ জন। তার মধ্যে ৪ জন কলকাতার। সব মিলিয়ে এখন পশ্চিমবঙ্গে করোনায় সংক্রমণের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৪৪। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫১ আর সুস্থ হয়েছে ৪ হাজার ২০৬ জন।


শুক্রবার শুধু করোনার এই চিত্রই ধরা পড়েনি। ধরা পড়েছে আরও একটি চিত্র। সেটি কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার চিত্র। দেখা গেছে, ১ জুন এই রাজ্যে আনলক-ওয়ান শুরু হওয়ার পর করোনার সংক্রমণ, মৃত্যুর সংখ্যার সঙ্গে বেড়েছে কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যাও। যেখানে ১ জুনের আগে এই রাজ্যে কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা ছিল ৮৪৪, সেটি ১০দিনে বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ৮৪৪ থেকে সেই সংখ্যা হয়েছে ১ হাজার ৮০৬। পাশাপাশি কলকাতায় এই কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় তিন গুণ, হয়েছে ৩৫১ থেকে ১ হাজার ৯টি। যদিও রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর বলেছে, এই রাজ্যে সুস্থতার হার ৪১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।

তবে পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলায় ১৫ দিন আগেও যেখানে ছিল না কোনো করোনা সংক্রমণ বা মৃত্যুর ঘটনা, আজ সেখানেও শুরু হয়েছে করোনার সংক্রমণ। এখন কোচবিহারেই ঘোষিত হয়েছে ৩টি কনটেনমেন্ট জোন। আর উত্তর চব্বিশ পরগনায় ২১৯, পূর্ব বর্ধমানে ১০৩, হাওড়ায় ৭৬, হুগলিতে ৭১ এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় ৬১টি এলাকা চিহ্নিত হয়েছে কনটেনমেন্ট জোন হিসেবে। এ ছাড়া কলকাতায় রয়েছে ১ হাজার ৯টি এই কনটেনমেন্ট জোন।


সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ

স্টেটাস রিপোর্ট তলবের পর্যবেক্ষণে সুপ্রিম কোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, দিল্লির হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার আসন ফাঁকা থাকলেও রোগীরা ভর্তি হতে পারছে না। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালেও করোনা রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছে না।

পাচ্ছে না নমুনা পরীক্ষার সুযোগ। দিল্লির হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে রোগীর সঙ্গে ফেলে রাখা হচ্ছে করোনার মৃতদেহ। রোগীদের সঙ্গে করা হচ্ছে অমানবিক ব্যবহার। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালেও করোনার উন্নত চিকিৎসার অভাব রয়েছে। মৃত্যু হলে সে খবরও পাচ্ছে না বিভিন্ন রাজ্যে রোগীর আত্মীয়স্বজন। শেষবারের জন্য মৃত ব্যক্তির পরিবারের কাউকে মৃতদেহ শেষবারের জন্য দেখতে দেওয়া হচ্ছে না। করোনা রোগীরাও বহু জায়গায় নমুনা পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না। আরও বেশি করে করোনা রোগীর নমুনা পরীক্ষার ওপর জোর দিয়ে এ-সংক্রান্ত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।