ভারতে ১৫ দিনে করোনা সংক্রমণ এক লাখ
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভারত যথেষ্ট সফল কি না, সেই প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উঠতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, আগামী দুই সপ্তাহের সংক্রমণের লেখচিত্র বুঝিয়ে দেবে ভারতে নিয়ন্ত্রণের সাফল্য বা ব্যর্থতা কতখানি।
মঙ্গলবার রাতে দেশে মোট সংক্রমণ ২ লাখ ছাড়িয়ে যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ হাজার ৯০৯ জন নতুন করে সংক্রমিত হওয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে যায় ২ লাখ ৭ হাজার ৬১৫তে। মোট মৃত ৫ হাজার ৮১৫ জন। সরকার ও প্রশাসনকে চিন্তায় ফেলেছে সংক্রমণের গতি। জানুয়ারি মাসের শেষে ভারতে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। সেই থেকে ১ লাখ সংক্রমণে পৌঁছাতে সময় নিয়েছিল ১১০ দিন। কিন্তু সংক্রমণ ১ থেকে ২ লাখে পৌঁছেছে মাত্র ১৫ দিনে। ফলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকার দাবি কতটা সংগত, সেই প্রশ্ন উঠে গেছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সূত্রমতে, আগামী দুই সপ্তাহে সংক্রমণের হার কমলে তা অবশ্যই স্বস্তিদায়ক হবে। নইলে দুশ্চিন্তা বাড়বে। কেননা গোটা দেশে ৭০ শতাংশ নিষেধাজ্ঞা ইতিমধ্যেই প্রত্যাহৃত হয়েছে। অর্থনীতির স্বার্থে আগামী দিনে তা আরও শিথিল হবে।
করোনা সংক্রমণ ১ লাখ ছাড়িয়েছে এমন ১০টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় নিয়েছে ভারত। মোট ১১০ দিন। সবচেয়ে কম সময়ে রোগীর সংখ্যা ১ লাখে পৌঁছায় স্পেনে। মাত্র ৫৯ দিন। সেই তালিকায় ইতালি দ্বিতীয়। ৬০ দিনে ১ লাখ সংক্রমণ। যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছে ৬৭ দিন, ব্রাজিল ৬৮, জার্মানি ৭১, পেরু ৭৫, যুক্তরাজ্য ৭৭, ফ্রান্স ৮১ ও রাশিয়া ৯০ দিন। ২ লাখের বেশি সংক্রমিত দেশগুলোর মধ্যে ভারতের স্থান সপ্তম। মোট সংক্রমণের তালিকায় সবার ওপরে যুক্তরাষ্ট্র। তারপর ব্রাজিল, রাশিয়া, স্পেন, যুক্তরাজ্য ও ইতালি। যে হারে প্রতিদিন সংক্রমণ বেড়ে চলেছে, তা অব্যাহত থাকলে মনে করা হচ্ছে অল্প দিনে যুক্তরাজ্য, স্পেন ও ইতালিকে ভারত পেছনে ফেলে দেবে। ভারতে সংক্রমণ বৃদ্ধির বর্তমান হার ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ভারত চতুর্থ স্থানে উঠে আসবে।
ভারতে মোট সংক্রমণের ৬৬ শতাংশ মাত্র চারটি রাজ্যের অবদান। মহারাষ্ট্র (৭২ হাজার ৩০০), তামিলনাড়ু (২৪ হাজার ৫৮৬), দিল্লি (২২ হাজার ১৩২) ও গুজরাট (১৭ হাজার ৬১৭)।
জনসংখ্যার নিরিখে ভারতের মোট সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা অবশ্য বিরাট নয়। এই পরিসংখ্যান তুলনামূলকভাবে স্বস্তিদায়ক হলেও অস্বস্তির বিষয় পরীক্ষার অপ্রতুলতা। কোভিড পরীক্ষা করা হচ্ছে শুধু সন্দেহভাজনদেরই। উপসর্গহীন মানুষের মধ্যে ‘র্যানডম টেস্ট’ এখনো হচ্ছে না। ফলে আক্রান্তের হারও ঠিক কতটা তা জানা কঠিন। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, সামাজিক সংক্রমণ এখনো হয়নি। তবে যে হারে জনজীবন স্বাভাবিক করে তোলা হচ্ছে তাতে আগামী দিনগুলো কোনো বার্তা দেবে, সে দিকেই বিশেষজ্ঞরা তাকিয়ে রয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, জুন মাসই বুঝিয়ে দেবে প্রকৃত ছবিটা কেমন।