করোনায় আক্রান্তদের সেবার ফাঁকে আব্রাহাম-আবুর একসঙ্গে প্রার্থনা
হাতে প্রচুর কাজ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ডাকে সাড়া দিতে হবে। তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনতে হবে। দম ফেলার ফুরসত নেই ইসরায়েলের আব্রাহাম মিন্টজ ও জোহর আবু জামার। এই মাত্র শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা ৪১ বছর বয়সী এক নারীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বিয়ার শেভার শহর থেকে এনেছেন তাঁরা। এর আগে ৭৭ বছর বয়সী আরেক ব্যক্তিকে আনতে গিয়েছিলেন তাঁরা। সামনে আরও কাজ বাকি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। ঘড়ির কাঁটা ছয়টা ছুঁইছুঁই করতে আব্রাহাম ও আবু বুঝতে পারলেন তাঁদের পালার দায়িত্বে এখনই কিছুটা ফাঁকা সময়।
ইসরায়েলের ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম বা জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদমের (এমডিএ) এই দুই সদস্য প্রার্থনার জন্য থামলেন। করোনা মহামারি থেকে মুক্তির জন্য দুই ধর্মের দুজন একসঙ্গে প্রার্থনা শুরু করলেন। ইহুদি ধার্মিক আব্রাহাম কাঁধে সাদা-কালো শাল ঝুলিয়ে জেরুজালেমের দিক মুখ করে প্রার্থনা করলেন আর আবু জামা জায়নামাজ বিছিয়ে কেবলামুখী হয়ে নামাজ পড়লেন।
জরুরি সেবায় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্যারামেডিক হিসেবে তাঁদের সপ্তাহে দুই বা তিনবার কাজ করতে হয়। এভাবে তাই যৌথ প্রার্থনার বিষয়টি একেবারে নতুন নয়। তবে, অনেকের কাছে এই করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে এটি অনুপ্রেরণার একটি ছবি হয়ে উঠতে পারে। এই ভিন্ন ধর্মের দুই ব্যক্তির প্রার্থনার ছবি তুলেছেন তাঁদেরই এক সহকর্মী, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে ছবিটিতে প্রচুর লাইক দিয়েছেন নেটিজেনরা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ইনস্টাগ্রামে একজন প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখেছেন, ‘জরুরি উদ্ধারকাজে নিয়োজিত কর্মীদের জন্য আমি গর্বিত। আপনি কোন ধর্ম বা কোন সম্প্রদায়ের তাতে কোনো কিছু যায়–আসে না।’ টুইটারে একজন লিখেছেন, ‘একটাই যুদ্ধ। একটাই জয়। চলো একসঙ্গে লড়ি।’
বার্তা সংস্থা সিএনএনকে বিয়ার শিভা অঞ্চলের ৯ সন্তানের বাবা আব্রাহাম বলেছেন, খুব সহজ একটা বিষয় কিন্তু খুব শক্তিশালী। আমার বিশ্বাস, আবু ও আমি এবং বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ বুঝতে পারছে যে আমাদের প্রার্থনা করতে হবে। এটাই এখন বাকি আছে।
সাত সন্তানের বাবা রাহাত অঞ্চলের আবু জামা বলেন, ‘বিশ্বাস এবং ব্যক্তিত্বের দিক থেকে আমরা একই জিনিসগুলোতে বিশ্বাস করি এবং আমাদের কিছু মিল রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, তিনি এমন একজন ব্যক্তি, যিনি সম্মানের অনুভূতি প্রদান করেন এবং গ্রহণ করেন এবং এটি গুরুত্বপূর্ণ।’
এমডিএতে মিন্টজ পূর্ণকালীন কর্মী হিসেবে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেন। আবু জামা আগে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে আরও বেশি করে সাহায্য করার জন্য তিনি ড্রাইভিং প্রশিক্ষকের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।
এমডিএর মুখপাত্র জাকি হেলার বলেন, ইসরায়েলজুড়ে এমডিএ টিম এখন দিনে এক লাখের বেশি কল পায়, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। প্যারামেডিকসের সাধারণ কাজের পাশাপাশি এমডিএ দলের সদস্যরা করোনাভাইরাসের রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছানো ও নির্দিষ্ট কোয়ারেন্টিনে পৌঁছানোর কাজ করেন। এর বাইরে করোনা পরীক্ষা ও রক্ত সংগ্রহের কাজের দায়িত্বও তাঁদের ঘাড়ে। প্রতিষ্ঠানটির পূর্ণকালীন কর্মী ২ হাজার ৫০০, আর স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন ২৫ হাজার।
এমডিএর মহাপরিচালক এলি বিন তাঁর দলের বিষয়ে কথা বলার সময় গর্ব করে বলেন, ‘এমডিএর লোকেরা ভাইরাসের মুখোমুখি হয়ে এর ওপর চোখ রাখছেন। গ্লাভস, মাস্ক পরে তাঁরা মাঠে নেমে গেছেন। তাঁরা ইসরায়েলের প্রকৃত বীর।’
আব্রাহাম মিন্টজ বলেন, ‘ভাইরাসকে সবাই ভয় করে। আমরাও করি। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস আছে, সবকিছুই ঈশ্বরের নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখি।’
সহকর্মীর কথাতেই সাঁয় দেন আবু জামা। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সৃষ্টিকর্তা আমাদের সাহায্য করবেন এবং আমরা এ থেকে মুক্তি পাব। এ বৈশ্বিক সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা উচিত।’
১৫ মিনিটের প্রার্থনার বিরতি নিয়ে আবার তাঁদের অ্যাম্বুলেন্সে ফিরতে হবে। আব্রাহাম ও আবু জামা জানেন, সামনে তাঁদের অনেক কাজ বাকি।