করোনার প্রথম টিকা নেওয়া কে এই জেনিফার
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি হয়েছে। এর পরীক্ষামূলক প্রথম ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে এক মার্কিন নারীর শরীরে। ওই নারীর পর আরও দুজনকে এই পরীক্ষামূলক ডোজ প্রয়োগ করা হয়।
ওই নারীর নাম জেনিফার হ্যালার। গতকাল সোমবার জেনিফারের শরীরে প্রথম করোনার প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হয়।
৩৪ বছর বয়সী জেনিফার হ্যালারের দুই সন্তান আছে। তিনি একটি স্টার্টআপের অপারেশনস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন।
সোমবার থেকে মারণ ভাইরাসের ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। জেনিফার হ্যালারই বিশ্বে প্রথম, যাঁর ওপর পরীক্ষামূলকভাবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হলো।
সিয়াটলের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা একটি কমিউনিটির সদস্যরা সবার আগে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে গ্রহণের জন্য নির্বাচিত হন। সেই ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের মধ্যে প্রথম স্বেচ্ছাসেবক হলেন জেনিফার হ্যালার। মাইক্রোসফটের প্রয়াত সহপ্রতিষ্ঠাতা পল অ্যালেনের স্ট্রোটোলঞ্চ স্পেস ভেঞ্চারে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। বর্তমানে মেশিন লার্নিং নিয়ে কাজ করা সিয়াটলভিত্তিক স্টার্টআপ কোম্পানি অটানলিতে বাড়িতে বসে কাজ করছিলেন তিনি।
সিয়াটলের কায়সার পার্মানেন্তে ওয়াশিংটন রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম ইনজেকশনের মাধ্যমে টিকা নেন জেনিফার হ্যালার। এরপর নিজের বাড়িতেই আছেন। তিনি বলেন, ‘টিকা নেওয়ার পর আমি খুব ভালো আছি। আমার হাতে কোনোও যন্ত্রণা হয়নি। এটি অন্যান্য ফ্লুর ভ্যাকসিনের চেয়ে অনেক ভালো।’
করোনাভাইরাসের টিকায় পরীক্ষামূলক প্রয়োগে জেনিফার হ্যালারের অংশগ্রহণকে সমর্থন করেছেন অটানলির প্রধান নির্বাহী স্কট ফেরিস। তিনি বলেছেন, ‘আমি তাঁর এই ভ্যাকসিন নেওয়ায় গর্বিত। অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে হালারের কাজ হলো দলের মনোবল বজায় রাখা। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে সবাই ঘরে বসে কাজ করায় সবার মনোবল ধরে রাখা আরও চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। আমরা এখন ভার্চ্যুয়াল হ্যাপি আওয়ার পালন করব।’
করোনা-ভ্যাকসিন নেওয়া তালিকার দ্বিতীয় স্বেচ্ছাসেবী হলেন মাইক্রোসফটের নেটওয়ার্কের কর্মী নিল ব্রাউনিং। তিনি ছাড়া আরও একজন এই ডোজ নিয়েছেন। মোট তিনজন সোমবার এ প্রতিষেধক নেন।
ভ্যাকসিনটির নাম মর্ডানাস ‘এমআরএনএ-১২৭৩’। ভ্যাকসিনটিতে সার্স-সিওভি-২ করোনভাইরাস থেকে মেসেঞ্জার আরএনএর নিষ্ক্রিয় খণ্ড ব্যবহার করা হয়। এ পরীক্ষার প্রথম দফার লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের শরীরের জন্য নিরাপদ কি না, তা পরীক্ষা করা। গবেষকদের দাবি, এতে ভাইরাসের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় সংক্রমণের ঝুঁকি নেই। আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে কায়সার পারমানেন্তের গবেষক লিসা জ্যাকসনের নেতৃত্বে একদল গবেষক এই ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কতখানি কার্যকর, তা পরীক্ষা করে দেখবেন।
লাইভ সায়েন্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যাকসিনটি নিরাপদ ও বিশ্বব্যাপী ব্যবহার উপযোগী হতে পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি পর্যায়ক্রমিক ধাপ পেরোতে হবে। প্রথম ধাপে ভালোভাবে পার হলে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে তা সাধারণের ব্যবহারের উপযোগী হতে পারে। প্রথম ধাপে শেষে দ্বিতীয় ধাপে বেশিসংখ্যক মানুষের ওপর বেশি সময় ধরে এ ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হবে। তৃতীয় ধাপে ৩০০ থেকে ৩ হাজার মানুষের ওপর এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে এ ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হবে। এভাবে যদি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সব ধাপে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়, তবে তা মানুষের ব্যবহারের জন্য উপযোগী ঘোষণা করা হতে পারে। তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক পোস্ট, আল জাজিরা ও বিবিসি