ইরানের ৫২ স্থাপনায় হামলার হুমকি দিয়ে বিপাকে ট্রাম্প
ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী ৫২ স্থাপনায় হামলার হুমকি দিয়ে ফেঁসে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনায় সামরিক হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল। এ ছাড়া সংস্কৃতির ধারক ও বাহক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রক্ষার কনভেনশনে সই করা দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানও রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, গত শুক্রবার ভোরে ইরাকের বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানি জেনারেল কাশেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প হামলার ওই হুমকি দিয়েছিলেন। কাশেম সোলাইমানি হত্যার ঘটনায় ইরান চরম প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেন, ইরান হামলা চালালে দেশটির ৫২টি স্থাপনায় খুব দ্রুত ও শক্তিশালী হামলা চালানোর জন্য মার্কিন সেনারা প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এ মন্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে বিষয়টি অস্বীকার করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও নমনীয় মনোভাব দেখান। তবে ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে অটল থেকে বলেন, ‘তারা আমাদের মানুষ মারতে পারে, তারা আমাদের লোকজনকে নির্যাতন ও বিদ্রূপ করতে পারে, তারা সড়কে বোমা পুঁতে আমাদের লোকজনকে মারতে পারে, আর আমরা তাদের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা স্পর্শ করতে পারব না? এটা তো হতে পারে না।’
সমালোচনার মুখে গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা কেলিয়ানে কনওয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষে বলেন, তিনি (ট্রাম্প) ঐতিহ্যবাহী স্থাপনায় হামলার কথা বলেননি। তিনি শুধু প্রশ্ন করেছিলেন। উপদেষ্টা বলেন, ‘ইরানের অনেক কৌশলগত সামরিক স্থাপনা আছে যেগুলোকে আপনারা সাংস্কৃতিক স্থাপনাও বলতে পারেন।’
এসব স্থাপনায় হামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপের বলেন, ‘সশস্ত্র সংঘাতের আইন-কানুন অনুসরণ করব আমরা।’ এর মানে কি যুক্তরাষ্ট্র ওই সব স্থাপনায় হামলা চালাবে না, কারণ এ ধরনের স্থাপনায় হামলা যুদ্ধাপরাধ। জবাবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সশস্ত্র সংঘাতের আইনে সেটাই বলা আছে।’
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফের কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে মার্কিন ডেমোক্র্যাট সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন এবং ক্রিস মারফি ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেছেন, ট্রাম্প যুদ্ধাপরাধের হুমকি দিচ্ছেন।
গতকাল যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত। সেটার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আশা করে যুক্তরাজ্য।
ইরানের বেশ কয়েকটি স্থাপনা রয়েছে সেগুলোর কোনোটি ধর্মীয়, কোনোটি নয়। ধর্মনিরপেক্ষ এবং ধার্মিক ইরানিরা সেই সব স্থাপনা নিয়ে গর্ব বোধ করেন। তাঁরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুমকির নিন্দা জানিয়েছেন। দেশটির মধ্যে নানা বিভক্তি থাকলেও অতীতের এইসব স্থাপনার প্রতি তাঁদের ভালোবাসা এতটাই যে, তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে এর চেয়ে ভালো ইস্যু আর হতে পারে না। আর সেই সুযোগটিই নিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একাধিক টুইটে তিনি ট্রাম্পকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে তুলনা করেছেন। আইএস সিরিয়ায় বহু ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ধ্বংস করেছে।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর মহাপরিচালক অড্রে আজৌলে বলেন, বিশ্বের প্রকৃতি, ঐতিহ্যবাহী স্থান ও স্থাপনা রক্ষায় ১৯৭২ সালের কনভেনশনে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশই সই করে। সশস্ত্র সংঘাতের সময়ে ঐতিহ্যবাহী সম্পদ রক্ষায় ১৯৫৪ সালের কনভেনশনেও এ দুটি দেশ সই করেছে। ইসরায়েলবিরোধী পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালে ইউনেসকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করে নেয় ট্রাম্প প্রশাসন।
ইরানের ২৪টি স্থাপনা ইউনেসকোর ঐতিহ্যবাহী স্থান ও স্থাপনার তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর স্মৃতিবিজড়িত পারসেপোলিস উল্লেখযোগ্য, যা প্রাচীন পারস্য সাম্রাজ্যের রাজধানী। সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত ইসফাহান শহরে অবস্থিত নকশ-ই জাহান স্কয়ার। তেহরানের গুলিস্তান প্যালেস, যা কাজার রাজবংশের আবাসস্থল। কাজাররা ১৭৮৫ থেকে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত ইরান শাসন করেছিল। এ ছাড়া ইরানে আরও বহু ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রয়েছে, যা ইউনেসকোর তালিকাভুক্ত নয়।