সোলাইমানিকে হত্যা করা হয় যেভাবে
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডসের শাখা কুদস ফোর্সের প্রধান কাশেম সোলাইমানি প্রায় নিয়মিতই সিরিয়ার দামেস্কে, ইরাকের বাগদাদে যাতায়াত করতেন। চার্টার উড়োজাহাজে চেপে তিনি এসব সফর করতেন। গত বৃহস্পতিবারের সফরটিও তাঁর এমন একটি সফর ছিল। গিয়েছিলেন বিশ্বের অন্যতম সুরক্ষিত বিমানবন্দরগুলোর একটিতে। এড়িয়েছিলেন সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতাও। কিন্তু এড়াতে পারলেন না মৃত্যু।
সোলাইমানিকে নিয়ে তাঁর উড়োজাহাজটি বাগদাদের বিমানবন্দরে অবতরণ করে গত শুক্রবার ভোরে। সেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল দুটি গাড়ি। বিমানবন্দরে রানওয়েতে ছিল পরিচিত মুখ, সোলাইমানির পুরোনো সহযোগী আবু মাহদি আল-মুহানদিস। তাঁদের দুজনেরই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ প্রয়োগের ইচ্ছা থাকলেও সে উদ্দেশে নয়, বরং তাঁরা জরুরি ইস্যুতে আলোচনায় বসতে যাচ্ছিলেন।
মুহানদিস ছিলেন ইরাকের ইরান–সমর্থিত মিলিশিয়া হাশেদ আল-শাবির উপপ্রধান। এই মিলিশিয়া সদস্যরাই কয়েক দিন ধরে বাগদাদের অত্যন্ত সুরক্ষিত গ্রিন জোনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করেছে। দূতাবাসে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে।
অর্থনীতির নিম্নগতি, তীব্র বেকারত্বের সঙ্গে সঙ্গে ইরানপন্থী সরকার নিয়ে ইরাকবাসীর মনে ক্ষোভ দিন দিন বেড়েছে। কিছুদিন আগে এ নিয়ে হয়েছে টানা বিক্ষোভ। চাপের মুখে সরকার পতন হয় দেশটিতে। সোলাইমানি চলমান ঘটনাগুলো বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছিলেন, বিশেষ করে ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মাত্রা দিন দিন বাড়ার বিষয়টি। এসব বিষয় সামাল দিতেই মুহানদিসের সাহায্য পেতে মরিয়া ছিলেন সোলাইমানি।
হামলার দিন, বিমানবন্দরে নেমে মুহানদিসের গাড়িতে ওঠেন জেনারেল সোলাইমানি। পেছনে থাকা দ্বিতীয় গাড়িটিতে ছিল তাঁদের দেহরক্ষীরা। রানওয়ে অতিক্রম করে সড়কে উঠছিল সোলাইমানিকে বহনকারী গাড়িটি। এদিকে তাঁদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিল মার্কিন এমকিউ ড্রোন, সে তথ্য সঙ্গে সঙ্গে চলে যাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন ও মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) কাছে।
সোলাইমানির গাড়িটি বিমানবন্দরে নিরাপত্তাবেষ্টনী পেরিয়ে পেছনের গাড়িটি থেকে কিছুটা দূরে যাওয়া মাত্র ড্রোন থেকে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এতে সোলাইমানিকে বহনকারী গাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়, আগুন ধরে যায় এতে। এরপরই ছোড়া হয় তৃতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি। এর আঘাতে নিরাপত্তা প্রহরীদের গাড়িটিও ধ্বংস হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাশেদ আল-শাবির নেতা মুহানদিস না গিয়ে ইরাকের যুক্তরাষ্ট্রপন্থী কোনো কর্মকর্তা সোলাইমানিকে স্বাগত জানাতে গেলে ঘটনা অন্য রকম হতে পারত। কারণ, এমন কেউ গেলে হামলা না চালানোর নির্দেশ ছিল কর্তৃপক্ষের।