আসামে সবচেয়ে বড় বন্দিশিবির করছে ভারত
ভারতের আসাম রাজ্যে দেশটির সবচেয়ে বড় বন্দিশিবির নির্মাণের কাজ চলছে। আসামের রাজধানী গুয়াহাটি থেকে ১২৯ কিলোমিটার দূরে গোয়ালপাড়ার মাতিয়ায় ২৫ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে এই ডিটেনশন ক্যাম্প বা বন্দিশিবির। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটিতে কোনো বন্দিশিবির নেই বলে দাবি করেছিলেন। অথচ শুধু আসামেই রয়েছে ছয়টি বন্দিশিবির। জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) ঘিরে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অনেককে বন্দী রাখা হয় ওই সব শিবিরে।
এনআরসি নিয়ে প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিল উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যে। তখন ওই রাজ্যে এনআরসি-বিরোধী আন্দোলনও শুরু হয়েছিল। তবে আন্দোলন উপেক্ষা করে বিজেপিশাসিত আসাম সরকার রাজ্যে এনআরসি কার্যকর করে। এ বছরের ৩১ আগস্ট এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়। সেই তালিকা থেকে বাদ যায় ১৯ লাখ নাগরিকের নাম। তাঁদের বেশির ভাগ বাঙালি হিন্দু-মুসলমান। বাদ পড়াদের অনেককে আটক রাখা হয় রাজ্যের ছয় জেলার ছয়টি বন্দিশিবিরে। গত ২৭ নভেম্বর আসাম সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, বন্দিশিবিরগুলোতে ১ হাজার ৪৩ জন ‘বিদেশি বন্দী’ আটক রয়েছেন। এর মধ্যে বন্দিশিবিরে ২৮ জনের মৃত্যুও হয়েছে।
ভারতজুড়ে যখন এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বাতিলের দাবিতে বিজেপিবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে, তখন ২২ ডিসেম্বর রাজধানী নয়াদিল্লির রামলীলা ময়দানে বিজেপি আয়োজিত এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক ঘোষণায় বলেছিলেন ভারতে কোনো বন্দিশিবির নেই।
অথচ অনেকেই জানেন, আসামের তেজপুর, গোয়ালপাড়া, শিলচর, ডিব্রুগড়, কোঁকড়াঝাড় ও জোরহাট জেলায় বন্দিশিবির রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আসামে তৈরি করা হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় বন্দিশিবির। এ ছাড়া কর্ণাটক রাজ্যেও রয়েছে বন্দিশিবির। বিজেপিশাসিত কর্ণাটকের সমাজকল্যাণ দপ্তরের কমিশনার আর এস পেদ্দাপ্পাইয়া কর্ণাটকে প্রথম বন্দিশিবির চালুর কথা স্বীকারও করেছেন। রাজ্য সরকার সমাজকল্যাণ দপ্তরের একটি ছাত্রাবাসকেও ইতিমধ্যে বন্দিশিবিরে রূপ দিয়েছে। এখন কর্ণাটকে বিভিন্ন দেশের ৮৬৬ জন বিদেশি বন্দী রয়েছেন।
আসামে ২৫ বিঘা জমির ওপর নির্মাণাধীন দেশটির সবচেয়ে বড় বন্দিশিবিরের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬ কোটি রুপি। বন্দিশিবিরের চারদিকে তোলা হয়েছে ২০ থেকে ২২ ফুট উঁচু দেয়াল। এ মাসে সেটি উদ্বোধনের কথা থাকলেও নির্মাণকাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। তবে দুদিকের দেয়াল নির্মাণ করে সেখানে লাল রং দেওয়া হয়েছে। দূর থেকে মনে হয় যেন দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল জেলখানা।
নির্মাণাধীন বন্দিশিবিরের তত্ত্বাবধায়ক মুকেশ বসুমাতারি বলেছেন, বন্দিশিবিরটিতে তৈরি করা হচ্ছে ১৫টি বাড়ি। প্রতিটি বাড়ি হবে চারতলা। প্রতিটি বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে ২০০ জন বন্দীর। ক্যাম্পে আরও থাকবে স্টাফ কোয়ার্টার, হাসপাতাল, স্কুল, অফিস কমপ্লেক্স, রান্নাঘর, খাওয়ার ঘরসহ কমিউনিটি হল। আলাদা জায়গায় ছয়টি ব্লকে তৈরি করা হচ্ছে টয়লেট কমপ্লেক্স। প্রতিটি ব্লকে থাকছে ১৫টি টয়লেট এবং ১৫টি বাথরুম। ওই এলাকায় অস্থায়ীভাবে তৈরি হয়েছে চায়ের দোকানসহ মুদি দোকানও।
আসাম সরকারের সূত্র উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যম জানায়, আরও ১০টি বন্দিশিবির তৈরি করা হবে আসামে। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে আসামে ছয়টি বন্দিশিবির তৈরি হয়।