মৃত্যুদণ্ডের রায় চ্যালেঞ্জ করলেন পারভেজ মোশাররফ
রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছেন পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। বিশেষ আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে তিনি দেশটির লাহোর হাইকোর্টে একটি আরজি দাখিল করেছেন।
পাকিস্তানের ডন অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, পারভেজ মোশাররফের পক্ষে তাঁর আইনজীবী আজহার সিদ্দিকী ৮৬ পৃষ্ঠার আরজিটি দাখিল করেছেন। আগামী বছরের ৯ জানুয়ারি লাহোর হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পারভেজ মোশাররফের এই আবেদনের ওপর শুনানি হবে।
আরজিতে বলা হয়েছে, পারভেজ মোশাররফের বিরুদ্ধে মামলায় ইসলামাবাদের বিশেষ আদালতের বিচারে অনেক সংগতি ও অনিয়ম ছিল। তাড়াহুড়ো করে বিচার-প্রক্রিয়াটি শেষ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে আরজিতে।
১৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় পারভেজ মোশাররফকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। ২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারির কারণে তাঁকে এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ওই সময় এক সামরিক অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মোশাররফ।
অনেক দিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করা সাবেক এই সামরিক শাসককে তাঁর অনুপস্থিতিতেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এর আগে রাষ্ট্রদ্রোহের গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে ইসলামবাদের বিশেষ আদালত পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। পাকিস্তানের ইতিহাসে এ ধরনের রায়ের ঘটনা এই প্রথম। বিশেষ আদালতের তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। আলোচিত মামলাটির যুক্তিতর্কের ওপর শুনানি শেষে এই রায় দেওয়া হয়।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সামরিক প্রধান পারভেজ মোশাররফ এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। সাবেক সামরিক এই স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে ২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর জরুরি অবস্থা জারির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। মামলাটি ২০১৩ সাল থেকে চলে আসছে। তিনি প্রথম কোনো সামরিক শাসক, যিনি সংবিধান লঙ্ঘন করার জন্য বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।
২০১৪ সালের ৩১ মার্চ মোশাররফকে অভিযুক্ত করা হয়। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে বিশেষ আদালতের কাছে বিচারের জন্য সব তথ্যপ্রমাণ পেশ করা হয়। তবে আপিল ফোরামে মামলাটি তোলার পর বিচারকাজ দীর্ঘায়িত হয়ে পড়ে এবং মোশাররফ ২০১৬ সালের মার্চে পাকিস্তান ছেড়ে চলে যান। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তাঁকে দেশ ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
পারভেজ মোশাররফ সামরিক ক্যুর মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে ক্ষমতা দখল করেন এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
মামলাটির ক্ষেত্রে বিশেষ আদালতকে ছয়বার পুনর্গঠন করা হয়।
এ মাসের শুরুতে হাসপাতালের বিছানা থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় এই মামলাকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেন পারভেজ মোশাররফ।
২০০৭ সালের নভেম্বরে তিনি দেশটির সংবিধান বাতিল করে জরুরি অবস্থা জারি করেন। এর বিরুদ্ধে ওই সময় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। অভিশংসনের ঝুঁকি এড়াতে তিনি ২০০৮ সালে পদত্যাগ করেন।
১৯৯৯ সালে নওয়াজ শরিফকে হটিয়ে সামরিক ক্যুর মাধ্যমে পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতায় বসেন। নওয়াজ শরিফ ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে জেনারেল মোশাররফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার উদ্যোগ নেন। মোশাররফ এই মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে যুক্তি তুলে ধরেন, ২০০৭ সালে সরকার ও মন্ত্রিপরিষদের সম্মতিতে তিনি জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। তবে তাঁর যুক্তি আদালত খারিজ করেন দেন এবং তাঁর কার্যকলাপকে অবৈধ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।
পাকিস্তানের সংবিধান অনুসারে, কারও বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের গুরুতর অভিযোগ উঠলে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। জেনারেল মোশাররফ ২০১৬ সালে দুবাইয়ে অবস্থান করার পর একাধিকবার আদেশের পরও তিনি আদালতে হাজিরা দিতে অস্বীকৃতি জানান।
২০১৪ সালে জেনারেল মোশাররফকে রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে অভিযুক্ত করার ঘটনাটি দেশটির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল।