বিশাল জয়ে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বুথ ফেরত জরিপের ফল বলছে বরিস জনসনের কনজারভেটিভ দল ৩৬৮ আসনে জয় পেতে যাচ্ছে, যা ২০১৭ সালের চেয়ে ৫০ আসন বেশি। অন্যদিকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জেরিমি করবিনের লেবার পার্টি মাত্র ১৯১ আসনে জয় পাবে বলে বুথ ফেরত জরিপে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সময় রাত ১০টা (বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায়) ভোটগ্রহণ শেষ হয়। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়া মাত্রই বুথ ফেরত জরিপের এই ফল প্রকাশ করা হয়। দেশটিতে বুথ ফেরত জরিপের এই আভাস ভুল হওয়ার ঘটনা নেই।
বিবিসি, স্কাই এবং আইটিভি পক্ষে জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ইপসস মোরি এ জরিপ পরিচালনা করে। দেশব্যাপী ১৪৪টি ভোট কেন্দ্রে বুথ ফেরত ২২ হাজার ৭৯০ জন ভোটারের মতামত বিশ্লেষণ করে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
জরিপের এই আভাস সত্যি হলে এটি হবে ১৯৮৭ সালে মার্গারেট থেসারের তৃতীয় দফা বিজয়ের পর কনজারভেটিভ দলের সবচেয়ে বড় বিজয়। অন্যদিকে লেবার দলের জন্য ১৯৩৫ সালের পর সবচেয়ে খারাপ ফলাফল। ২০১৭ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টি ২৬২ আসনে বিজয় পেয়েছিল। জরিপের ফল সত্যি হলে লেবারের আসন এবার ৭১টি কমবে।
এ ছাড়া বুথ ফেরত জরিপ বলছে, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি ৫৫, লিবারেল ডেমোক্র্যাট ১৩ আসন পাবে। ব্রেক্সিট পার্টি নির্বাচনে চমক দেখাবে বলে প্রত্যাশা করলেও দলটি একটি আসনও পাবে না বলে আভাস দেওয়া হয়েছে।
৬৫০ আসনের হাউস অব কমন্সে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ৩২৬ আসন। নির্বাচনের প্রকৃত ফলাফল জরিপের ফলের কাছাকাছি হলেও কনজারভেটিভরা পার্লামেন্টের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ পাবে।
জরিপের ফল সত্যি হলে এটি হবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের পক্ষে জনগণের জোরালো রায়। এর মধ্য দিয়ে আর পাঁচ বছরের জন্য যুক্তরাজ্যে কনজারভেটিভ দলের শাসন পাকাপোক্ত হবে। দেশটিতে ২০১০ সাল থেকে ক্ষমতায় আছে কনজারভেটিভরা।
সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় এবং দলীয় আইনপ্রণেতাদের বিরোধিতার কারণে গত তিন বছরেও ব্রেক্সিট কার্যকর করতে পারেনি ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভরা। তাই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরতে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এই নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন। ক্ষমতায় ফিরলে ৩১ জানুয়ারি ব্রেক্সিট কার্যকর করবেন তিনি।
অন্যদিকে লেবার নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, এ নির্বাচন দশ বছর ধরে কনজারভেটিভ সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির অবসানের মাধ্যমে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য প্রজন্মের একমাত্র সুযোগ। ক্ষমতায় গেলে করবিন ব্রেক্সিট প্রশ্নে পুনরায় গণভোটের আয়োজন করবেন।
যুক্তরাজ্যে পাঁচ বছর পর পর সাধারণ নির্বাচন হওয়ার নিয়ম। কিন্তু গত পাঁচ বছরেরও কম সময়ে এটি দেশটিতে তৃতীয় নির্বাচনের ঘটনা। এ ছাড়া ১৯৭৪ সালের পর এবারই প্রথম শীতের মৌসুমে নির্বাচন হচ্ছে। আর প্রায় এক শ বছরের ইতিহাসে এটি ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে ১৯২৩ সালে দেশটিতে ডিসেম্বরে নির্বাচন হয়েছিল।
যুক্তরাজ্যে ভোটকেন্দ্রে অপেক্ষার ঘটনা বিরল। কিন্তু গতকালের নির্বাচনে অনেক আসনে ভোটারদের সারিবদ্ধ হয়ে ভোট দিতে দেখা যায়। শীতের তীব্রতা এবং বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানুষ ভোট কেন্দ্রে গেছে।
লেবার দলীয় ছায়া অর্থমন্ত্রী জন ম্যাকডোনাল্ড বলেন, জরিপের ফল দেখে তিনি আশাহত। তিনি বলেন, ফলাফল আরও কাছাকাছি হবে বলে তাঁরা প্রত্যাশা করেছিলেন। ব্রেক্সিট ইস্যু এমন ফলাফলে প্রভাব রেখেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।