স্ত্রীর পরিণতি মায়ের মতো হতে দেব না: প্রিন্স হ্যারি
ব্রিটিশ রাজপরিবারের পঞ্চম উত্তরসূরি প্রিন্স হ্যারি বলেছেন, পরিবারকে তিনি সব সময় রক্ষা করবেন। ডিউক অব সাসেক্স জোর দিয়ে বলেছেন, স্ত্রীর পরিণতি তিনি মায়ের মতো হতে দেবেন না।
ব্রিটিশ টেলিভিশন চ্যানেল আইটিভি নির্মিত এক ডকুমেন্টারিতে হ্যারি বলেছেন, তিনি অতীতের পুনরাবৃত্তি চান না।
আর ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মারকেল জানিয়েছেন, ব্রিটিশ বন্ধুরা তাঁকে প্রিন্সকে বিয়ে করার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। সার্বক্ষণিক মিডিয়া তদন্তের ব্যাপারে বন্ধুরা তাঁকে আগেই জানিয়েছিলেন। বিবিসি অনলাইন গতকাল রোববার এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে।
রাজদম্পতি সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরকালে টম ব্র্যাডবি তাঁদের সাক্ষাৎকার নেন।
প্রিন্স হ্যারিকে (৩৫) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, প্রিন্সেস ডায়ানার মতো তাঁর স্ত্রীও একই মানসিক চাপের সম্মুখীন হতে পারেন, এ ব্যাপারে তিনি উদ্বিগ্ন কি না। ব্রিটিশ রাজপরিবারের বধূ ও হ্যারির মা ডায়ানা ১৯৯৭ সালে প্যারিসে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান।
উত্তরে হ্যারি বলেন, ‘আমি সব সময় আমার পরিবারকে রক্ষা করব। সুরক্ষা দেওয়ার জন্য এখন আমার একটি পরিবার রয়েছে। সুতরাং তিনি (ডায়ানা) যা যা করেছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে যা ঘটেছিল, তা প্রতিদিন আমার কাছে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমার মন খারাপের কারণ নয়। আমি কেবল অতীতের পুনরাবৃত্তি চাই না।’
সম্প্রতি বেশ কিছু সংবাদপত্রে সাসেক্স এবং কেমব্রিজের ডিউক ও ডাচেসের মধ্যে সম্পর্কে ফাটলের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রিন্স হ্যারি বলেছেন, ভাই প্রিন্স উইলিয়ামের সঙ্গে তাঁর ‘ভালো দিন’ এবং ‘খারাপ দিন’ আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভাই। আজীবন ভাই-ই থাকব। এই মুহূর্তে আমাদের পথ আলাদা। তবে আমি সব সময় তাঁর পক্ষে থাকব। কারণ, আমি জানি তিনিও সব অবস্থায় আমার পক্ষ নেবেন।’
প্রিন্স তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য এবং জীবনে চলমান চাপগুলোকে ‘সার্বক্ষণিক পরিচালনার’ বিষয় হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম, আমি প্রথা ভেঙে বেরিয়ে এসেছি। কিন্তু হঠাৎ করেই ঘটনাগুলো আবার ফিরে এল। এবার এ বিষয়গুলো সামলাতে হবে। সারাক্ষণ খুব সাহসী একটা মুখোশ পরে থাকতে হচ্ছে। তবে আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে প্রতিনিয়ত এমন অনেক কিছুর মুখোমুখি হতে হয়, যা আমাদের আহত করে। বিশেষ করে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মিথ্যের সঙ্গে আমাদের লড়তে হয়।’
ডাচেস মেগান ২০১৮ সালের মে মাসে উইন্ডসর ক্যাসলে প্রিন্স হ্যারিকে বিয়ে করেন। এই বছর তাঁদের পুত্র আর্চির জন্ম হয়। আফ্রিকা সফরটি ছিল প্রিন্স হ্যারি, মেগান এবং তাদের ছেলে আর্চির প্রথমবারের মতো রাজকীয় ভ্রমণ। বিয়ের পর থেকে রাজপরিবারের নতুন সদস্য হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন মেগান।
হ্যারি কূটনীতি শিখেছেন। কিন্তু ভাই সম্পর্কে তাঁর কথাগুলো নিশ্চিত করছে, জীবন যেভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তাতে তাঁদের সম্পর্ক আর আগের মতো নেই। অবশ্যই এ সম্পর্কে ভালোবাসা সব সময় থাকবে। তবে পরিস্থিতি বদলেছে।
মেগানের যোগাযোগ ক্ষমতা দুর্দান্ত। তিনি বেশ মেপে কথা বলতে জানেন। সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করে গুছিয়ে কথা বলেন তিনি। ট্যাবলয়েড পত্রিকার কভারেজ সম্পর্কে বলেন, ‘এটা যে সহজ হবে, তা কখনো ভাবিনি। তবে, ভেবেছিলাম ব্যাপারটা অন্তত স্বচ্ছ হবে, ন্যায়সংগত হবে।’ কয়েক মাস ধরে তাঁকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে তিনি স্পষ্টতই আতঙ্কিত। ব্রিটিশরা নিজেদের ন্যায্য বলে যে গর্ব করে, তিনি তাঁর কোনো প্রমাণ পাননি।
টম ব্র্যাডবি জানতে চান, ‘আপনাকে কি লড়াই করতে হয়েছে?’
উত্তরে মেগান বলেন, ‘হ্যাঁ।’ হ্যারি স্বীকার করেছেন, তিনি এখনো মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে লড়ছেন। এই দম্পতি রীতিমতো চাপ অনুভব করছেন এবং তা নিয়ে কথা বলছেন। হ্যারি এখন প্রতিটি ক্যামেরায়, প্রতিটি শিরোনামে তাঁর মায়ের ছায়া দেখতে পান। খুব দুঃখের একটা গল্প যেন ফিরে ফিরে আসছে।
বিষয়টাই বেশ বেখাপ্পা। কারণ, সবাই তাঁদের খুব পছন্দ করেন। হ্যারির শক্তি আর মেগানের সাহস রাজপরিবারের গতানুগতিক বলয় থেকে তাঁদের আলাদা করেছে। তবে তাঁদের ঘিরে এখন অসন্তোষের ছায়া ঘুরপাক খাচ্ছে।
মার্কিন-বংশোদ্ভূত সাবেক এই অভিনেত্রী জানান, রাজকীয় জীবনের সঙ্গে তাল মেলানো ‘কঠিন’ ছিল। তিনি বলেন, ট্যাবলয়েড মিডিয়ার জোর তদন্তের জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘আমি যখন আমার এখনকার স্বামীর সঙ্গে প্রথম দেখা করি, তখন বন্ধুরা সত্যিই খুশি হয়েছিল। কারণ, আমি খুব খুশি ছিলাম। তবে আমার ব্রিটিশ বন্ধুরা বলেছিল, নিঃসন্দেহে তিনি অসাধারণ। তবে তাঁকে বিয়ে করাটা উচিত হবে না। কারণ, ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড তোমার জীবন ধ্বংস করে দেবে।’
মেগান সেই সাক্ষাৎকারে বলেন, সংবাদপত্রের গভীর আগ্রহের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হওয়া এবং নতুন মা হওয়া সংগ্রাম ছিল।
মেগান গতকাল ‘দ্য মেইল’-এর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। বেআইনিভাবে তাঁর একটি ব্যক্তিগত চিঠি প্রকাশের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।