ভারতের মহাকাশ যান চন্দ্রযান-২ চাঁদের বুকে অবতরণের আগমুহূর্তেই নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর তা নিয়ে ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তানের এক মন্ত্রী কটাক্ষ করে বলেছেন, যে কাজ পার না, তা করতে যাও কেন। চন্দ্রযান-২ কে খেলনার সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেছেন, চাঁদের বদলে মুম্বাইয়ে নেমে পড়েছে।
একেবারে শেষ মুহূর্তে ‘চন্দ্রযান-২’-এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইসরোর। এরপরই টুইটারের একাধিক টুইট করে কটাক্ষ করেন পাকিস্তানের বিজ্ঞানমন্ত্রী ও প্রযুক্তি বিষয়কমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী।
মিশন চন্দ্রযান ২-এর পরিণতির জন্য ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীসহ দেশটির মানুষ মনে করছেন, ভারত ব্যর্থ নন বরং ৯৫ শতাংশ সফল। কিন্তু স্বভাবসিদ্ধভাবেই একেবারে উল্টো পথে হাঁটলেন পাকিস্তান। চন্দ্রযান-২ প্রত্যাশিত সাফল্য না পাওয়ায় পাকিস্তান যে কিছুটা খুশি তা দেশটির এক মন্ত্রীর বক্তব্যই ফুটে উঠেছে। একাধিক টুইট সেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ফাওয়াদ চৌধুরী।
চাঁদের পিঠে পা রাখার আগে ২ দশমিক ১ কিলোমিটার উচ্চতায় ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইসরোর। চাঁদের অন্ধকার দিকের রহস্য উন্মোচনের জন্য বেরিয়ে নিজেই অন্ধকারে হারিয়ে গেল বিক্রম। এবারের মতো সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছাতে পারল না ইসরোর। ভারতীয় মহাকাশবিজ্ঞানীদের এ পরিশ্রম আর সাহসকে দেশটির অভিনয়শিল্পী, তারকা, রাজনীতিবিদসহ পুরো ভারতবাসী খুশিতে আত্মহারা তখনই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের মন্ত্রী কটাক্ষ করলেন। মিশন চন্দ্রযান-২ নিয়ে একের পর এক টুইট করে ভারতকে কটাক্ষ করতে থাকেন ফাওয়াদ চৌধুরী। তিনি লিখেছেন, ‘… যে কাজটা করতে পারো না, সেটা করারই দরকার নেই। প্রিয় এন্ডিয়া।’ ভারত ইন্ডিয়ার বানান যেভাবে লেখে তার বদলে ‘এন্ডিয়া’ লিখেছেন পাকিস্তানের মন্ত্রী।
এরপরই পাকিস্তানের মন্ত্রীর টুইটের নিচের অনেকেই মন্তব্য করেছেন। একজন লেখেন, ‘চন্দ্রযান-২ ফাওয়াদ চৌধুরীকে সারা রাত ঘুমাতে দেয়নি, জাগিয়ে রেখেছিল।’ অনেক ভারতীয়ের সঙ্গে পাকিস্তানবাসীও সমালোচনা করেছেন মন্ত্রী তো হয়েছেন মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরীর। একজন নেটিজেন লিখেছেন, ‘নিজেদের লজ্জায় ফেলা বন্ধ করুন। ভারত অন্তত চাঁদে পা রাখার চেষ্টা করেছে। আর আমরা তো চাঁদকে দেখার জন্য লড়াই করতে থাকি। যে কোনও দেশের বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করা উচিত। সেখান থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া উচিত।’
তবে নেটিজেনদের বিরূপ মন্তব্য দমে যাননি ফাওয়াদ চৌধুরী। একজনের টুইটের প্রতিক্রিয়ায় তিনি রিটুইট করেছেন, ‘ঘুমিয়ে পড়, চাঁদের বদলে ওই খেলনাটা মুম্বাইয়ে নেমেছে।’ আবার অন্য এক টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘ভারতীয়রা অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। দেখে মনে হচ্ছে, আমার জন্য মিশন ব্যর্থ হয়েছে। আমি ৯০০ কোটি রুপি নষ্ট করতে বলেছিলাম? এবার মাথা ঠান্ডা করে ঘুমিয়ে পড়ুন।’
মনোবল ভেঙে যাওয়া ইসরোর বিজ্ঞানী ও দেশবাসীর উদ্দেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বক্তব্য নিয়েও কথা বলেছেন পাকিস্তানের মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী। তিনি বলছেন, ‘মোদির কথা শুনে মনে হচ্ছে, উনি রাজনীতিবিদ নন, আসলে মহাকাশচারী। লোকসভায় মোদিকে প্রশ্ন করা উচিত, কেন গরিব দেশে ৯০০ কোটি রুপি নষ্ট করা হলো।’
একেবারে শেষ মুহূর্তে ‘চন্দ্রযান-২ ’-এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ইসরোর। বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেননি মহাকাশবিজ্ঞানীরা। চূড়ান্ত অবতরণের আগে ওই রোবোটিক গবেষণা যানটি চন্দ্রপৃষ্ঠে আছড়ে পড়েছে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। ইসরোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, একবারে শেষ মুহূর্তে বিক্রম ল্যান্ডারের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণকক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এটি নামার কথা ছিল।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া চন্দ্রজয় করেছে। তবে তা চাঁদের অন্য অঞ্চলে। ভারতের নভোযান চাঁদে অবতরণ করলে তারা চন্দ্রজয়ী চতুর্থ দেশ হিসেবে তালিকায় উঠে আসত। এটিই হতো চাঁদের দক্ষিণ প্রান্তের সবচেয়ে কাছাকাছি যাওয়া প্রথম নভোযান।
এ অভিযান পরিচালনা করতে ভারতের ব্যয় হয়েছে এক হাজার কোটি রুপি। এ অর্থ এর আগে পরিচালিত যেকোনো দেশের চন্দ্রাভিযানের খরচের তুলনায় বহুগুণ কম। ইসরো বলছে, একই ধরনের অভিযানে মার্কিন সংস্থা নাসার ২০ গুণ অর্থ খরচ হয়ে থাকে।
গত ২৩ জুলাই অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় চন্দ্রযান-২। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় এক মিনিটের মধ্যে সেটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়। তার এক সপ্তাহ আগে প্রথমবারের উৎক্ষেপণ বাতিল হয়। তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভি, টাইমস নাউ