কী যে ঘটল চন্দ্রযানের ভাগ্যে
চাঁদের পৃষ্ঠ স্পর্শ করার আগেই নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ভারতের পাঠানো চন্দ্রযান–২–এর। গতকাল শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। চূড়ান্ত অবতরণের আগে ওই রোবোটিক গবেষণা যানটি চন্দ্রপৃষ্ঠে আছড়ে পড়েছে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (ইসরো) পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, একবারে শেষ মুহূর্তে বিক্রম ল্যান্ডারের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণকক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এটি নামার কথা ছিল।
বিবিসি, সিএনএন, এনডিটিভির খবরে জানা যায়, বিক্রম ল্যান্ডারটি এমনভাবে প্রোগ্রাম করা ছিল, যাতে এর চারটি রকেট কয়েকটি ধাপ সফলভাবে পার করতে পারে। ব্রেকিং রকেটগুলো এমনভাবে নকশা করা ছিল, যা বিক্রমের অনুভূমিক বেগ ঘণ্টায় ৩৬০০ মাইল থেকে অবতরণের প্রস্তুতির সময় শূন্যে নামিয়ে আনতে পারে। চন্দ্রপৃষ্ঠের ৭ দশমিক ৪ কিলোমিটারের মধ্যে এসে বিক্রম ল্যান্ডার কঠিন ব্রেক পর্যায় পার করে ফেলার কথা। এরপর বিক্রম লেজার ব্যবহার করে পৃষ্ঠের অবতরণস্থল শনাক্ত করার করার কাজটি করতে সক্ষম ছিল। এরপর ৪০০ মিটারের কাছাকাছি নেমে চারটি স্ট্যান্ডবিশিষ্ট এ যানটি এর ল্যান্ডিং সেন্সর কাজে লাগিয়ে সমতল জায়গা খুঁজে সেখানে নামার কথা। ১৩ মিটার ওপরে থাকতে একটি সেন্টার ইঞ্জিন এটাকে নিয়ন্ত্রণ শুরু করবে। তবে ২ দশমিক ১ কিলোমিটার আগেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় শেষ মুহূর্তে বিক্রমের ভাগ্যে কী ঘটেছে, ইসরোর পক্ষ থেকে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
বেঙ্গালুরুর ল্যান্ডার কন্ট্রোল সেন্টার থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছিল ঘটনাটি। তাতে দেখা যায়, চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণের ঠিক আগেভাগেই সবার মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। সবার রোমাঞ্চ বিষাদে পরিণত হয়। ওই সময় বিক্রমের সঙ্গে রেডিও যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
চাঁদের পৃষ্ঠে নভোযান প্রেরণকারী চতুর্থ রাষ্ট্র হিসেবে তালিকায় যুক্ত হতে চেষ্টা চালাচ্ছিল ভারত। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন সফলভাবে অভিযান পরিচালনা করেছে। রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে চন্দ্রাভিযানের পরিকল্পনা ছিল ভারতের। কিন্তু পরস্পরের সঙ্গে বোঝাপড়া না হওয়ায় চুক্তি হয়নি। পরে ভারত একাই চন্দ্রাভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়।
ভারতের চন্দ্রযান–২ মিশনের একাধিক অংশবিশিষ্ট রোবটযান বিক্রম ল্যান্ডার। সরাসরি সম্প্রচারে দেখা যায়, মিশন ব্যর্থ হওয়ার পরপর ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবান প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি বর্ণনা করেন।
আগেই বিজ্ঞানীরা ঘোষণা দিয়েছিলেন, চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণের জন্য কোনো নভোযানের শেষ ১৫ মিনিট গুরুত্বপূর্ণ সময়। একে ‘১৫ মিনিটের আতঙ্ক’ বলেই মনে করেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলেন, ভারত তখনই সম্পূর্ণ সফল হতে পারবেম যদি সে অবতরণের পর্ব শেষ ১৫ মিনিট সফলভাবে অতিক্রম করতে পারে। কারণ, এই অবতরণ অত্যন্ত জটিল। চন্দ্রযানকে এ সময় কার্যত পালকের মতো ভেসে চাঁদে নামতে হবে। একে বলে সফট ল্যান্ডিং। এর আগে রাশিয়া চেষ্টা করে সফল হতে পারেনি। চন্দ্রযান–২–এর এই সফট ল্যান্ডিংয়ের জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হয় ইসরো। এ জন্য তামিলনাড়ুর নামাক্কলের মাটি দিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠের মতো কৃত্রিম চন্দ্রপৃষ্ঠ তৈরি করা হয়।
চাঁদের মাটিতে খনিজ সম্পদের খোঁজ করতে গত ২২ জুলাই রওনা হয়েছিল চন্দ্রযান। গত ২০ আগস্ট চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল চন্দ্রযান–২। ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানে এখন পর্যন্ত সেটিই ছিল সবচেয়ে কঠিন ধাপ। এরপর গতকাল রাতে চন্দ্রপৃষ্ঠে নামার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইসরো চেয়ারম্যান শিবান বলেন, সবকিছুই পরিকল্পনামাফিক ছিল। ১ দশমিক ৩ মাইল পর্যন্ত স্বাভাবিক পারফরম্যান্স পাওয়া গেছে। এখন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।
গবেষকেরা বলছেন, মহাকাশ যুগ শুরু হওয়ার পর থেকে চাঁদে অবতরণের অর্ধেকের কম অভিযান সফল হয়েছে। এর আগে ইসরোর চেয়ারম্যান বলেছিলেন, ‘চাঁদের পৃষ্ঠে সফল অবতরণের বিষয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী। আমরা ব্যর্থতা থেকে শিখছি। যথেষ্ট উদ্দীপনা রয়েছে। যথাযথ পরীক্ষা করা হয়েছে।’