আফগানিস্তানে প্রত্যাহার হতে পারে ৫৪০০ মার্কিন সেনা

আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির দেয়ালচিত্রের পাশে অস্ত্র হাতে এক সেনা। ছবি: রয়টার্স
আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির দেয়ালচিত্রের পাশে অস্ত্র হাতে এক সেনা। ছবি: রয়টার্স

আফগানিস্তান থেকে ৫ হাজার ৪০০ সেনা প্রত্যাহার করে নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তালেবানদের সঙ্গে ‘নীতিগত’ চুক্তির অংশ হিসেবে ২০ সপ্তাহের মধ্যে এ সেনা প্রত্যাহার করা হবে। বহুল প্রত্যাশিত এ চুক্তির ব্যাপারে এই প্রথম কোনো টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এ তথ্য প্রকাশ করলেন ওয়াশিংটনের শীর্ষ মধ্যস্থতাকারী জালমে খালিলজাদ। তবে বিষয়টি এখনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, আফগান নেতাদের চুক্তির ব্যাপারে অবহিত করার পর টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে খসড়ার কথা জানান আফগান-আমেরিকান কূটনীতিক জালমে খালিলজাদ। এ সাক্ষাৎকার যখন প্রচার করা হচ্ছিল, তখন আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ হামলায় কমপক্ষে পাঁচজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। বিদেশিদের আবাসিক প্রাঙ্গণে এ বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে তালেবান।

তালেবান জানিয়েছে, বিদেশি সেনাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছিল।

এ হামলার কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তালেবানদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সমঝোতা হলেও আফগানিস্তানে নিত্যসহিংসতা ও সাধারণের প্রাণহানির ঘটনার কোনো শেষ হবে না।

২০০১ সালে মার্কিন হস্তক্ষেপের পর থেকে যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন আফগানিস্তানের আরও বেশিসংখ্যক অঞ্চল তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে। তালেবানরা আফগান সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনাতেও বসতে চায় না। তাদের ভাষায়, আফগান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের হাতের পুতুল।

টোলো নিউজকে দেওয়া খালিলজাদের সাক্ষাৎকার থেকে জানা গেছে, চুক্তি অনুসারে কাতারে নয় রাউন্ড শান্তি আলোচনা হবে। মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিনিময়ে তালেবানদের নিশ্চয়তা দিতে হবে যে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের ওপর হামলার জন্য আফগানিস্তান কখনো জঙ্গি সংগঠনগুলোর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হবে না।

খালিলজাদ বলেন, ‘আমরা রাজি হয়েছি যে যদি চুক্তি অনুসারে অগ্রসর হয়, তাহলে যে পাঁচটি ঘাঁটি (সেনা) এখন আমাদের রয়েছে, সেগুলো ১৩৫ দিনের মধ্যে ছেড়ে আমরা চলে যাব।’

আফগানিস্তানে এখন ১৪ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে।

সেনা প্রত্যাহারে খালিলজাদের দেওয়া খসড়ার ব্যাপারে তালেবান মুখপাত্র বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন।

বাকি সেনা প্রত্যাহার নির্ভর করবে আফগান সরকার ও তালেবানদের মধ্যের শান্তি আলোচনা শুরুসহ যুদ্ধবিরতি এবং সার্বিক পরিস্থিতির ওপর।

আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির মুখপাত্র সেদিক সেদ্দিকি গতকাল সোমবার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট চুক্তি পড়ার পর মতামত দেবেন। তিনি বলেন, তালেবানরা যে শান্তির রক্ষায় করা প্রতিশ্রুতি রাখবে, সেই প্রমাণ প্রয়োজন সরকারের।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান শাসনের সময় দেশটিতে ধর্মীয় কট্টর অবস্থা ছিল এবং নারীদের নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হতো।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলা এবং হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ওসামা বিন লাদেনকে তালেবান সরকার হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। আরও কয়েকটি দেশের সেনাদের নিয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর হামলায় তালেবানরা ক্ষমতাচ্যুত হয়। তারা বিদ্রোহী বাহিনীতে পরিণত হয় এবং সরকার হঠাতে দেশটিতে ক্রমাগতভাবে ভয়াবহ সব হামলা চালাতে থাকে।

২০১৪ সালে যৌথ বাহিনী তাদের যুদ্ধ অভিযান শেষ করে। তারা এখন আফগান বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে রয়ে গেছে। তবে মার্কিন সেনারা এখনো বিমান হামলাসহ যুদ্ধ অভিযানে রয়েছে।

ক্ষমতা অর্জনে তালেবানদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। বিবিসির মতে, তালেবানরা এখন আফগানিস্তানের ৭০ শতাংশ এলাকায় সক্রিয়।

২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর প্রায় সাড়ে তিন হাজার সদস্য নিহত হয়। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মার্কিন সেনা।

এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জানায়, ৩২ হাজারের বেশি বেসামরিক লোক আফগানিস্তানে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটস ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুসারে, নিরাপত্তা বাহিনীর ৫৮ হাজার ও বিরোধী পক্ষের ৪২ হাজার যোদ্ধা নিহত হয়েছে।