জাগুয়ারচাপায় দুই বাংলাদেশি নিহতের ঘটনায় আরও দুজন গ্রেপ্তার
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় গাড়িচাপায় দুই বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় রাঘিব পারভেজ ও মহম্মদ হামজা নামের আরও দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
একই ঘটনায় আগে গ্রেপ্তার হওয়া আরসালান পারভেজের বড় ভাই রাঘিব পারভেজ। আর মহম্মদ হামজা তাঁদের মামা।
দুই বাংলাদেশিকে চাপা দেওয়া জাগুয়ার গাড়ির চালক সন্দেহে গত শনিবার আরসালানকে গ্রেপ্তার করে কলকাতার পুলিশ। পরদিন আরসালানকে কলকাতার নগর দায়রা আদালতে তোলা হয়। তাঁকে ১১ দিনের পুলিশ হেফাজতে দেন বিচারক। পুলিশ আরসালানকে জেরা করে জানতে চায়, কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে চুপ থাকলেও একসময় পুলিশের জেরায় ভেঙে পড়েন আরসালান। আরসালান পুলিশকে জানান, ঘটনার দিন তিনি গাড়ি চালাননি। তিনি বাড়িতেই ছিলেন।
পরে পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে, সত্যিই আরসালান ওই দিন গাড়ি চালাননি। চালিয়েছিলেন তাঁর বড় ভাই রাঘিব।
পরে মামলাটি কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) চলে যায়। ডিবি পুলিশ আরসালান রেস্তোরাঁর সর্বময় কর্তা ও পারভেজ-রাঘিরের বাবা আখতার পারভেজকে তলব করে। জেরার মুখে আখতার পারভেজ জানান, রাঘিবই সেদিন গাড়ি চালিয়েছিলেন।
পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে, ঘটনার পরদিন রাঘিব তাঁর মামা মহম্মদ হামজার উদ্যোগে দুবাই চলে যান। আর পরিবারটির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, গাড়ির চালক হিসেবে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে আরসালানকে। ব্যবসায়িক কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ভারতের একটি নামকরা রেস্তোরাঁ হলো আরসালান। বিরিয়ানির জন্য এই রেস্তোরাঁর সুখ্যাতি রয়েছে দেশ-বিদেশে। কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে এই রেস্তোরাঁর শাখা রয়েছে। দুবাইতেও শাখা রয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তারা শাখা খুলতে যাচ্ছে। চেইন রেস্তোরাঁটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন রাঘিব। তিনি কারাগারে গেলে ব্যবসায় প্রচুর ক্ষতি হবে—এমনটা চিন্তা করে পরিবারের সদস্যেরা আরসালানকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই মতো শনিবার দুপুরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় আরসালানকে। তবে পুলিশের জেরায় আসল তথ্য জানিয়ে দেন আরসালান।
পরে পুলিশ অবিলম্বে রাঘিবকে দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়। দুর্ঘটনায় রাঘিব সামান্য আহত হয়েছিলেন। দুবাই থেকে ফিরিয়ে এনে তাঁকে ভর্তি করা হয় কলকাতার বেনিয়াপুকুর থানা এলাকার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে। সেখান থেকেই গতকাল বিকেলে পুলিশ গ্রেপ্তার করে রাঘিবকে। সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় রাঘিবের মামা হামজাকেও।
কলকাতায় গত শুক্রবার রাতে জাগুয়ারচাপায় দুই বাংলাদেশি নিহত হন। তাঁরা হলেন কাজী মুহম্মদ মইনুল আলম (৩৬) ও ফারহানা ইসলাম (৩০)। তাঁরা চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছিলেন বলে জানা গেছে। মইনুলের বাড়ি ঝিনাইদহে। আর ফারহানার বাড়ি ঢাকায়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, জাগুয়ার গাড়িটি কলকাতার বিড়লা প্লানেটরিয়ামের দিক থেকে শেক্সপিয়ার সরণি ধরে কলামন্দিরের দিকে যাচ্ছিল। লাউডন স্ট্রিটের ক্রসিংয়ের মুখে জাগুয়ারটি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মার্সিডিজ গাড়িকে সজোরে ধাক্কা মারে। চলে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুই বাংলাদেশিকে চাপা দেয় জাগুয়ারটি। গুরুতর আহত অবস্থায় দুই বাংলাদেশিকে নেওয়া হয় কাছের পিজি হাসপাতালে। পরে চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় মার্সিডিজের চালক ও আরোহী আহত হন। জাগুয়ারের চালক গাড়ি ফেলে পালিয়ে যান। পুলিশ জানায়, তিনবার সিগনাল ভেঙে জাগুয়ারটি দ্রুতগতিতে যাওয়ার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার পর জানা যায়, জাগুয়ার গাড়িটি কলকাতার একটি দামি চেইন রেস্তোরাঁ আরসালানের নামে রয়েছে। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন রেস্তোরাঁ মালিকের ছেলে আরসালান। তাঁর বয়স ২২ বছর। তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছুটিতে তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। ঘটনার দিন কে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন, সে বিষয়ে এখন নতুন তথ্য পাওয়া গেল।