ডিম ভেঙে 'নায়ক' সেই কিশোর দুর্গতদের পাশে
>• মাথায় ডিম ভেঙে অনলাইন দুনিয়ায় রীতিমতো ‘নায়ক’ উইলিয়াম কনোলি
• এখন তিনি ‘এগবয়’ বা ‘ডিমবালক
• সিনেটর অ্যানিংয়ের মাথায় ডিম ভাঙেন কনোলি
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ফ্রেজার অ্যানিংয়ের মাথায় ডিম ভেঙে অনলাইন দুনিয়ায় রীতিমতো ‘নায়ক’ বনে গেছে কিশোর উইলিয়াম কনোলি (১৭)। তাকে এখন ‘এগবয়’ বা ‘ডিমবালক’ নামে ডাকছেন লোকজন। অতি ডানপন্থী সিনেটর অ্যানিং নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে গত শুক্রবার সন্ত্রাসী হামলার পর এক বিবৃতিতে বর্ণবাদী ও ফ্যাসিবাদী মন্তব্য করেন। প্রতিবাদে গত শনিবার মেলবোর্নের মুরাবিনে এক সংবাদ সম্মেলন চলাকালে ওই কিশোর সিনেটর অ্যানিংয়ের মাথায় একটি ডিম ভাঙেন। সঙ্গে সঙ্গে সে অ্যানিংয়ের চড়থাপ্পড় ও কিলঘুষির শিকার হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লোকজন কিশোর কনোলিকে ‘নায়ক’ অভিহিত করছেন। তার সমর্থনে ইতিমধ্যে ইন্টারনেটে চাঁদা তোলার ক্যাম্পেইন হচ্ছে। ইতিমধ্যে তার যেকোনো আইনি ব্যয় নির্বাহ ও আরও ডিম কেনার উৎসাহ দিয়ে লোকজন ৪৪ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার অনুদান দিয়েছেন; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। অনুদান তোলার ওয়েবসাইট থেকে বলা হয়েছে, এখান থেকে প্রাপ্ত অর্থের সিংহভাগ ক্রাইস্টচার্চ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হতাহতদের সাহায্যে ব্যয় হবে। তবে ওয়েবসাইটটি কোনো প্রতারক চক্র চালাচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
অনলাইনে সক্রিয় বিভিন্ন প্রতারক চক্র
ক্রাইস্টচার্চ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সারা বিশ্ব থেকে শোক জানানো হচ্ছে। সারা বিশ্বের লোকজন হতাহতদের পাশে দাঁড়ানোর আগ্রহ পোষণ করছেন। এর ফলে অনলাইনে শুরু হয়েছে নামে-বেনামে অনুদান সংগ্রহের ক্যাম্পেইন। নিউজিল্যান্ডের সাইবার সিকিউরিটি বিভাগ গতকাল সবাইকে সতর্ক করে বলেছে, এ নিয়ে প্রতারক চক্র বেশ সক্রিয় তৎপরতা চালাচ্ছে অনলাইনে। ‘ফিশিং’ ই–মেইল ব্যবহার করে ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। এতে করে মানুষের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অ্যানিংয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে
অ্যানিংয়ের বর্ণবাদী মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক মহলেও তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এর আগে ওই মন্তব্যকে ‘খুবই ভয়ংকর’ ও ‘নিকৃষ্ট’ বলে অভিহিত করে বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় এ ধরনের চিন্তার কোনো স্থান নেই। মরিসন বলেন, প্রতিবাদকারী কিশোরকে আঘাত করার জন্য সিনেটরের বিরুদ্ধে সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হত্যাকারীকে ক্ষমা করলেন ফরিদ আহমেদ
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে হামলার পরপরই স্বামীকে বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিলেন হোসনে আরা আহমেদ (৪৪)। মসজিদে নারীদের নামাজ আদায়ের কক্ষে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে অন্য নারী ও শিশুদের বেরিয়ে যেতে পথ দেখিয়েছিলেন তিনি। এরপরই ছুটে যান স্বামীর খোঁজে। স্বামী ফরিদ আহমেদ হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন বলে হোসনে আরার দুশ্চিন্তা হচ্ছিল বেশি। তবে হামলা থেকে স্বামী বেঁচে গেলেও বাঁচতে পারেননি হোসনে আরা। হামলাকারীর গুলিতে নিহত হন তিনি। স্ত্রীর সেই হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন ফরিদ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘তাঁর (হত্যাকারী) জন্য প্রার্থনা করি, আল্লাহ তাঁকে সঠিক পথ দেখাবেন।’
ফরিদ আহমেদ আরও বলেন, প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে হামলার এই উদ্দেশ্য সফল হবে না। মুসলিম নেতারা এসব হামলার কারণে কাউকে ভয় পেতে বা ঘৃণা করতে দেবেন না। তিনি বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে হারিয়েছে। কিন্তু আমি হত্যাকারীকে ঘৃণা করি না। ব্যক্তি হিসেবে আমি তাঁকে (হামলাকারী) ভালোবাসি। কিন্তু আমি দুঃখিত, তিনি যা করেছেন, তা আমি সমর্থন করতে পারছি না। আমার মনে হয়, জীবনের কোনো একসময়ে তিনি হয়তো আঘাত পেয়েছেন। কিন্তু তিনি সেই আঘাতকে ইতিবাচক উপায়ে প্রকাশ করতে পারেননি। এ কারণে তিনি ভুল কাজ করেছেন।’