যুদ্ধবিমানের অপব্যবহার, পাকিস্তানের কাছে জবাব চায় যুক্তরাষ্ট্র!
ভারতের আক্রমণের জবাবে দেশটির আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছিল পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। যুদ্ধবিমান এফ-১৬ ব্যবহার করায় বিপাকে পড়েছে পাকিস্তান। এই প্রতি-আক্রমণ করতে গিয়ে পাকিস্তান নিয়ম ভেঙেছে বলে মনে করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর তারা এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য তথ্য চেয়েছে পাকিস্তানের কাছ থেকে। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের খবরে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
জি নিউজের খবরের বলা হয়েছে, কয়েকটি শর্তে পাকিস্তানের কাছে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিক্রি করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এগুলোর মধ্যে দুটি বিষয় হলো, শুধু সন্ত্রাসবাদ নির্মূলেই এফ-১৬ ব্যবহার করা যাবে, কোনো দেশের ওপর আক্রমণে এই বিমান ব্যবহার করা যাবে না। বিক্রির সময় এই নিয়ম মেনেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যুদ্ধবিমানগুলো কিনেছিল পাকিস্তান। আসলে এ ক্ষেত্রে শর্তের লঙ্ঘন হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ দমনে ব্যবহার না করে ভারতের বিপক্ষে আক্রমণের জন্য এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে পাকিস্তান। এটাকে অপব্যবহার হিসেবে দেখছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। তারা এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য তথ্য চেয়েছে পাকিস্তানের কাছ থেকে।
দুই দেশের সর্বশেষ সংকটের শুরু গত ১৪ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় দেশটির আধা সামরিক সিআরপিএফের গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জনের বেশি জওয়ান নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ এ হামলার দায় স্বীকার করে।
এই ঘটনার ১২ দিন পর গত মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বালাকোটে বিমান হামলা চালায় ভারত। নয়াদিল্লির দাবি, ওই হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদের বড় ঘাঁটি গুঁড়িয়ে গেছে। নিহত হয়েছে ৩০০ জঙ্গি। জঙ্গি ঘাঁটিতে আকাশপথে মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী।
এদিকে সেই হামলার পরদিনই ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে পাকিস্তানের একাধিক যুদ্ধবিমান। তার মধ্যে ছিল এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। পরে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ দেশের সৈন্য ঘাঁটিই ছিল পাকিস্তানের আক্রমণের লক্ষ্য। কিন্তু তা অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।
ভারতের বৈমানিকের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্র কেবল জঙ্গি দমনের শর্তে পাকিস্তানকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করতে এফ-১৬ ব্যবহার করা হয়নি বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। ভারত এফ-১৬ থেকে ছোড়া যায় এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ হাজির করেছে। তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এ ব্যাপারে ‘নালিশ’ও করছে। এ ছাড়া ওই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বিস্তারিত জানাচ্ছে। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছ থেকে এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য তথ্য চেয়েছে।
ভারতের যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘ওই প্রতিবেদন (ভারতের বিপক্ষে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান) সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। আমরা এ ব্যাপারে আরও তথ্য চেয়েছি।’
মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র লে. কর্নেল কন ফকনার বলেন, ‘বিদেশে সামরিক অস্ত্র বিক্রয় চুক্তিতে অপ্রকাশিত নিয়মের কারণে আমরা চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারি না।’
বিশ্বব্যাপী উচ্চপ্রযুক্তির নানা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রির বৃহত্তম বিক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি অস্ত্র বিক্রির পর দৃঢ়ভাবে ব্যবহারকারীকে পর্যবেক্ষণের চুক্তিও করে। এ ছাড়া প্রতিরক্ষা অস্ত্র সামগ্রীর অপব্যবহারের সব অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র খুব গুরুত্ব সহকারে আমলে নেয়। এরপরই তারা কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক সেভাবেই এফ-১৬ ব্যবহারকারী পাকিস্তান কোনো চুক্তির আদেশ লঙ্ঘন করেছে কি না, তার কিছু তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করবে যুক্তরাষ্ট্র।
পেন্টাগন বলেছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সামরিক অবস্থান শক্তিশালী করতে এফ-১৬ বিমান দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানকে। এ ছাড়া এ বিমান ব্যবহারের কিছু বিধিনিষেধও আরোপ করা আছে।