ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে স্নায়ুর চাপ সংবরণের কথা বলেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। আজ মঙ্গলবার সংসদে আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে মে বলেন, ‘ব্রেক্সিট চুক্তির আলোচনা চূড়ান্ত ধাপে এসে উপনীত হয়েছে। এখন আমাদের সবার উচিত স্নায়ুর চাপ সংবরণ করা।’ চুক্তির কাঙ্ক্ষিত সংশোধনের জন্য তিনি আইনপ্রণেতাদের কাছে আরও সময় চেয়েছেন।
চুক্তির পরিবর্তন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নেতাদের সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে সংসদে বিবৃতি দেওয়ার কথা ছিল আগামীকাল বুধবার। কিন্তু একদিন আগেই আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মে সংসদে আলোচনার ফলাফল তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পাদিত চুক্তির সংশোধনী নিয়ে আলোচনায় রাজি হননি ইইউ নেতারা। কিন্তু চুক্তি পাসের জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধনী আদায়ে তিনি এখনো আশাবাদী। ২৯ মার্চ বিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ার আগেই তিনি সংশোধিত চুক্তি নিয়ে হাজির হতে পারবেন বলে দৃঢ় প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
লক্ষণীয় ব্যাপার হলো—ইইউ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর ১৫ মার্চ ব্রেক্সিট চুক্তির অনুমোদন প্রশ্নে সংসদে ফের ভোটাভুটি হবে বলে জানানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে এটি স্পষ্ট যে, সেটি এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গেল।
সরকারের প্রত্যাশা, চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট এড়াতে শেষ মুহূর্তে গিয়ে চুক্তির পরিবর্তন বিষয়ে কিছুটা হলেও ছাড় দিতে রাজি হবে ইইউ। সংসদ নেতা অ্যান্ড্রিয়া লিডসমের কথায় অন্তত সেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিবিসি রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতাদের স্পষ্ট বার্তা হলো, চুক্তির একটিমাত্র বিষয় (ব্যাকস্টপ) সংশোধন হতে তাঁরা চুক্তিটি সমর্থন করবেন। এখন ইইউ যদি একরোখা মনোভাব দেখায় তাহলে তারা একটা ‘অস্বাভাবিক পরিস্থিতি’র জন্য দায়ী হবে। যেটি তাঁরা নিজেরাও চান না।
লিডসম বলেন, ব্যাকস্টপ ব্যবস্থার মাধ্যমে যুক্তরাজ্য স্থায়ীভাবে ইইউ’র অধীনে আটকা পড়বে। তাই এ বিষয়ে একটি সমাধান জরুরি। কিন্তু লিডসমের কথায় এও ইঙ্গিত মেলে যে ব্যাকস্টপ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সম্ভব হবে না। তিনি আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে বলেন, ব্যাকস্টপ বিষয়ে ‘শতভাগ বিশুদ্ধবাদী’ মনোভাব ধরে রাখলে চলবে না।
প্রধানমন্ত্রী ব্যাকস্টপ ব্যবস্থার পরিবর্তনের পাশাপাশি শ্রমিক ও কর্মী অধিকার, পরিবেশ সুরক্ষা ও ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণে সংসদের বৃহত্তর ভূমিকা নিশ্চিত করার মতো বিরোধী দলের দাবিগুলোকে সংযোজনের কথা বলেছেন। এতে আভাস মেলে যে ব্যাকস্টপ ব্যবস্থার পুরোপুরি সন্তোষজনক সংশোধন সম্ভব হবে না। তবে বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতাদের একটি অংশের সমর্থন নিয়ে তিনি চুক্তিটি পাস করিয়ে নিতে চাইছেন।
এদিকে যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রী স্টিভ বারক্লে ও ইইউ’র পক্ষে প্রধান সমঝোতাকারী মিশেল বার্নিয়ে গতকাল সোমবার এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক পরবর্তী বিবৃতিতে মিশেল বার্নিয়ে বলেন, আলোচনা গঠনমূলক হয়েছে। চুক্তির সংশোধনী নিয়ে আলোচনা না করার অবস্থানে তাঁরা অটল আছেন। তবে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উভয় পক্ষ সংলাপ চালু রাখবে এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজতে কাজ করে যাবে।