অবশেষে কংগ্রেসের রাজনীতিতে প্রিয়াঙ্কা
লোকসভা ভোটের আগে বড় চমক দিল কংগ্রেস। সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে নিয়ে আসা হলো রাজীব-সোনিয়ার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রকে। আজ বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে দলের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত করা হয়। প্রিয়াঙ্কাকে উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্বে আনা হয়েছে মধ্যপ্রদেশের তরুণ নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে। প্রিয়াঙ্কা ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
দলের পক্ষ থেকে সংবাদ বিবৃতিতে এ খবর জানানোর সময় প্রিয়াঙ্কা দিল্লিতে ছিলেন না। ছিলেন না তাঁর ভাই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও। দুই দিনের প্রচারে রাহুল গেছেন আমেথি। এই অবসরে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট এক বিবৃতিতে প্রিয়াঙ্কার নিযুক্তির খবর জানান। বিবৃতিতে আরও দুটি ঘোষণা রয়েছে। একটি হলো প্রবীণ নেতা গুলাম নবী আজাদকে হরিয়ানা রাজ্যের দায়িত্বে আনা, অন্যটি অশোক গেহলটের জায়গায় সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব কে সি বেনুগোপালের হাতে তুলে দেওয়া। লোকসভা ভোটের আগে প্রতিটি নিযুক্তিই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিবার ভোটের আগে প্রিয়াঙ্কার সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ নিয়ে জল্পনা চলে। কিন্তু কখনো তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দলীয় পদ গ্রহণ করেননি। উত্তর প্রদেশের যে দুই লোকসভা কেন্দ্র গান্ধী পরিবারের খাসতালুক বলে পরিচিত, ভোটের সময় রাহুলের আমেথি ও সোনিয়ার রায়বেরিলিতেই প্রিয়াঙ্কা নিজেকে আবদ্ধ রাখতেন। প্রচার চালাতেন ওখানেই। এই প্রথম তাঁর বৃহত্তর দায়িত্ব গ্রহণ।
কংগ্রেসের এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। উত্তর প্রদেশের যে অঞ্চলের দায়িত্ব নিলেন প্রিয়াঙ্কা, সেখানকার বারানসী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচন কেন্দ্র। এই পূর্বাঞ্চলে বিজেপি তাদের পায়ের তলার জমি শক্ত করে ফেলেছে। এবারের ভোটে জোট রাজনীতি প্রাধান্য পেলেও উত্তর প্রদেশের দুই প্রধান দল সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) রাজ্যে কংগ্রেসকে জোটবদ্ধ করেনি। আমেথি ও রায়বেরিলি ছেড়ে রেখে (এই দুই আসনে এসপি-বিএসপি প্রার্থী দেয় না) তারা বাকি আসনগুলো নিজেদের মধ্যে বাঁটোয়ারা করে নিয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি রাজ্যে একার শক্তিতে লড়াইয়ের কথা জানিয়েছেন। বোন প্রিয়াঙ্কাকে দলীয় দায়িত্বে এনে রাহুল রাজ্যের কংগ্রেস কর্মী ও সমর্থকদের উজ্জীবিত করার পাশাপাশি এ কথাও বোঝাতে চাইলেন যে উত্তর প্রদেশে দলকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে তিনি আগ্রহী। আর সে ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেবেন তাঁর ৪৭ বছর বয়সী ছোট বোন প্রিয়াঙ্কা।
এই ঘোষণা অন্য যে প্রশ্নটি সামনে আনছে, তা সোনিয়াকেন্দ্রিক। শারীরিক কারণে সোনিয়া রায়বেরিলি থেকে এবার ভোটে দাঁড়াবেন না, এমন একটা প্রচার রয়েছে। সেই জায়গায় প্রিয়াঙ্কা প্রার্থী হন কি না, সেই জল্পনা শুরু হলো।
সাধারণ সম্পাদকের পদে নিযুক্তি এবং উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলের দায়িত্ব নেওয়ার মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট, আগামী ভোটে প্রিয়াঙ্কা বৃহত্তর ভূমিকা নিতে চলেছেন। রায়বেরিলিতে প্রার্থী হোন বা না হোন, রাজ্যের বহু কেন্দ্রে প্রিয়াঙ্কাই হবেন কংগ্রেসের প্রধান আকর্ষণ। দলের এক সূত্র জানায়, প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়েই তাঁর প্রচার কর্মসূচি তৈরি করা হবে।
প্রিয়াঙ্কার সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশের কথা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই কংগ্রেসের পক্ষ থেকে টুইট করে বলা হয়, ‘আমরা টগবগ করে ফুটছি। আমরা এগিয়ে যেতে প্রস্তুত।’ খুশি হয়ে টুইট করেছেন প্রিয়াঙ্কার স্বামী রবার্ট ভদ্রও। স্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘তোমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে পাশে আছি।’ তবে বিজেপি আক্রমণাত্মক। দলের মুখপাত্র সংবিৎ পাত্র বলেন, ‘বিজেপির কাছে এটা আদৌ কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। এমনটা হওয়ারই ছিল। এটাই পরিবারতন্ত্র। ভবিষ্যতে রবার্টও রাজনীতিতে ঢুকবেন।’ বিজেপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘নেতা হিসেবে রাহুল ব্যর্থ। প্রিয়াঙ্কাকে তাই তিনি ক্রাচ হিসেবে ব্যবহার করছেন। পরিবারের বাইরে ওই দলটা কাউকে দেখতে পায় না।’