তাজমহল দেখতে গিয়ে কারাগারে বাদল, এখন শিক্ষক
বাগেরহাটের বাদল ফরাজি। তাজমহল দেখতে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার পর ধরা পড়েন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে। পরে নয়াদিল্লির একটি হত্যা মামলার এক আসামির নামের সঙ্গে মিল থাকায় সেই মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি। ওই মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে তাঁর দিন কাটছে দিল্লির তিহার কারাগারে।
ঘটনার শুরু প্রায় সাড়ে নয় বছর আগে। ২০০৮ সালের ১৩ জুলাই তাজমহল দেখতে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের পেট্রাপোলে যান বাদল ফরাজি। এর কিছুদিন আগে দিল্লির অমর কলোনিতে খুন হন এক বৃদ্ধা। ওই হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে বাদল সিং নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে। ওই হত্যা মামলায় বিএসএফ ভুল করে গ্রেপ্তার করে বাদল ফরাজিকে। ইংরেজি বা হিন্দি জানা না থাকায় তিনি বিএসএফের সদস্যদের নিজের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি। বোঝাতে পারেননি তিনি ওই বাদল নন। এরপর তাঁকে দিল্লি পাঠানো হলে জায়গা হয় কারাগারে।
ওই মামলার রায়ে ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বাদল ফরাজিকে দিল্লির সাকেত আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। রায়ের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে আপিল করা হলেও নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকে। রায়ের পর থেকে তিহার কারাগারের ৩ নম্বর সেলে জীবন কাটছে তাঁর।
এদিকে যে বাদল বাংলা ছাড়া আর কোনো ভাষা বুঝতেন না, তিনিই কারাগারে থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পাস করে কারাগার চত্বরের ইন্দিরা গান্ধী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন। এখন ইংরেজি ও হিন্দিতে অনর্গল কথা বলতে পারেন। তিহার কারাগারে এখন তিনি ইংরেজির শিক্ষক। সহবন্দীদের ইংরেজি শেখান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘স্নাতকের বাইরেও আমি আটটি ডিপ্লোমা কোর্স করেছি। আর পেছনে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। আমাকে সামনের দিকে এগোতে হবে।’
এদিকে তিহার কারাগারে বন্দীদের কাউন্সেলিংয়ের কাজ করতে আসা মানবাধিকারকর্মী রাহুল কাপুরের সঙ্গে যোগাযোগ হয় বাদলের। তাঁর কথা শুনে তাঁকে কারাগার থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া রাহুল বলেন, বাদলকে মুক্ত করতে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করেছেন তিনি। হাইকমিশন তাঁকে (রাহুল) জানিয়েছে, তারা এ ব্যাপারে সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। পাশাপাশি রাহুল আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাহুল বলেন, সম্প্রতি বাদলের মুক্তির বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আবেদন করেছেন তিনি, যাতে বাদল বাংলাদেশে ফিরতে পারেন। ইতিমধ্যে ‘জাস্টিস ফর বাদল’ শীর্ষক একটি আবেদনে স্বাক্ষর অভিযান শুরু করেছেন। আবেদনটি শিগগিরই ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কাছে পাঠাবেন।