২৪ অক্টোবর, মানে আজ ক্রীড়ামোদীদের জন্য এক বিশেষ দিন। আজ ক্রিকেট-ফুটবল উপহার দিতে যাচ্ছে ‘হাই ভোল্টেজ’ সব ম্যাচ। এক দিনে এত বড় বড় ম্যাচ পড়ায় কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবে—এ নিয়ে বিপাকে দুনিয়ার অনেকেই। দেশের ফুটবল-ক্রিকেটপ্রেমীরাও বিপাকে পড়েছেন রিমোট পাওয়া না–পাওয়ার সম্ভাবনা এবং আশঙ্কায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অনেক বাড়িতে ফুটবল-ক্রিকেটপ্রেমীরা আগেভাগেই রিমোট দখলে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে। হয়েছে হাতাহাতি, মারামারি এবং তুমুল মানসিক লড়াই।
আজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল। এরপর রাতে ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ। অন্যদিকে ফুটবলে মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-লিভারপুল, জুভেন্টাস-ইন্টার মিলান, পিএসজি-অলিম্পিক মার্শেই। কে, কোন ম্যাচ দেখবে, সেটি কেন্দ্র করেই বাড়ির অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী দর্শকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রিমোট দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অকুতোভয় ক্রীড়ামোদীরা। রিমোট দখলকে কেন্দ্র করে গতকাল গভীর রাত থেকে বেশ কিছু পরিবারে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয় বলে শোনা গেছে। দুঃখের বিষয় হলো, কারও বাড়িতে ঢুকে লাইভ টেলিকাস্ট করার অনুমতি পায়নি ‘একটু থামুন’–এর প্রতিনিধিরা। তবে বরাবরের মতো ইমোতে সফল ‘একটু থামুন’।
অনেক কষ্টে রিমোট দখল করতে পারা হাতিরপুলের যুবক রাকিনের সঙ্গে কথা হয়েছে। ইমোতে ভিডিওকল দেওয়ামাত্র কল রিসিভ করে তিনি বলতে শুরু করলেন, ‘ইয়েস, আমি পাইলাম, ইহাকে পাইলাম! অনেক কষ্টে বাসার অন্যদের সঙ্গে মারপিট করে রিমোট অর্জন করেছি, ভাই! কালকে নির্বিঘ্নে ইচ্ছেমতো ম্যাচ দেখতে পারব ভেবেই আনন্দে চোখে পানি চলে আসছে। এই দেখেন, আমার রিমোট। এটা আমার সম্পত্তি নয়, সম্পদ!’ পাশ থেকে ছুড়ে আসা হাঁড়ি-পাতিল ঠেকাতে ঠেকাতে চোখে আনন্দাশ্রু নিয়ে কথা বলছিলেন রাকিন।
রিমোট দখলকে কেন্দ্র করে কয়েকটি পরিবারে মধুর সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষে বালিশের আঘাতে চুলের স্টাইল নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে পানির আঘাতে বুক পকেটে রাখা ১০ টাকার নোট ভিজে নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো ‘রোমহর্ষক’ ঘটনাও ঘটেছে। রিমোট দখলে ব্যর্থ হওয়া চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা এলাকার বাসিন্দা জনি মিয়া বলেন, ‘নিজেকে আজ খুব ব্যর্থ মনে হচ্ছে। গার্লফ্রেন্ড চলে যাওয়ার পরও এত দুঃখ পাইনি, যতটা রিমোট দখল না করতে পারায় পেয়েছি। বিশ্বাস করেন ভাই, আমি চেষ্টার এতটুকু ত্রুটি রাখিনি কোথাও। সকাল থেকেই চোখে চোখে রেখেছিলাম, আর সুযোগের সন্ধানে ছিলাম। যেই না নিচে গেলাম একটা চা খেতে, এসেই দেখি রিমোটটি নাই হয়ে গেছে। এই শোক কাটিয়ে উঠে আগামী সপ্তাহে বিসিএস দিতে পারব বলেও মনে হয় না। সব শেষ আমার!’
কুমিল্লার বড়পাড়ার বাসিন্দা সাদিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সফল হয়েছেন ‘একটু থামুন’–এর ব্যর্থ প্রতিনিধি। রিমোট দখল করতে পাওয়ার অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সাদিয়া বলেন, ‘অবশেষে আমি সফল! রিমোট দখল নেওয়ার চেষ্টায় ন্যক্কারজনক কাজ করেছে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। এক গ্লাস পানি ছুড়ে মারে আমার মুখে। কিন্তু আমি ভেঙে পড়িনি। হাতের কাছের মুঠোফোনটাই ছুড়ে মারলাম প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখে। এভাবেই সবার সামনে রিমোটটাকে নিজের করে নিলাম!’
এদিকে রিমোট দখলে ব্যর্থ হওয়া যুবক-যুবতীদের ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে বিভিন্ন মোটিভেশনাল কোর্সের বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করেছেন দেশসেরা কয়েকজন মোটিভেশনাল স্পিকার। ইতিমধ্যে এক মোটিভেশনাল স্পিকার ‘তুমিও রিমোট পাবে’ নামক এক মোটিভেশনাল সেমিনারের আয়োজন করে ফেলেছেন। ৮০ শতাংশ ডিসকাউন্টে টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ৫০০ টাকা। তবে যাদের আর্থিক অবস্থা দুর্বল, তাদের ইনবক্সে যোগাযোগ করারও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। লাইভে এসে তিনি বলেন, ‘একদম হতাশ হবে না। কী হয়েছে? একটা রিমোটই তো! বিশ্বাস রাখো নিজের ওপর। আর পই পই করে হিসাব রাখো, কে তোমাকে রিমোট দেয়নি। আগামী বছর এই রিমোটের মালিক হবে তুমি। মনে রেখো, সব স্বপ্ন হবে সত্যি, বলেছেন মিঠুন চক্রবর্তী!’