আমরা আমাদের কত পুরুষ সম্পর্কে জানি? চার, পাঁচ, ছয়, সাত...তারপর? জানি না। জানার সুযোগও কম। এমন কিন্তু হতেই পারে, আপনি জানেনই না আপনার ধমনিতে বইছে শত শত বছর আগের কোনো রাজার রক্ত। অবাক হওয়ার কিছুই নেই। বিজ্ঞানী ও নৃতাত্ত্বিকেরা কিন্তু এমন কথাই বলছেন।
পৃথিবীতে এখন প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষের মধ্যে মঙ্গল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খানের ডিএনএ আছে! ২০০৩ সালের এক গবেষণায় এমনটিই জানানো হয়েছিল। তারপরের আরেক গবেষণায় জিন গবেষকেরা জানতে পেরেছেন, শুধু চেঙ্গিসের ডিএনএ–ই নয়, আরও বেশ কয়েকজন নৃপতির ডিএনএ এখনো অনেকের মধ্যে বিদ্যমান। এ বিষয়ে ইউরোপিয়ান জার্নাল অব হিউম্যান জেনেটিকস–এ গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটি হয়েছে যুক্তরাজ্যের ওয়েলকাম ট্রাস্ট স্যাঞ্জার ইনস্টিটিউটের জিন বিশেষজ্ঞ ক্রিস টায়লার–স্মিথের নেতৃত্বে। এই ইনস্টিটিউটের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রসায়নে দুবার নোবেল পুরস্কার পাওয়া ব্রিটিশ জৈব রসায়নবিদ ফ্রেডেরিক স্যাঞ্জারের নাম। তিনি প্রথমবার নোবেল পেয়েছিলেন প্রোটিনের কাঠামো নিয়ে গবেষণা করে এবং দ্বিতীয়বার পেয়েছিলেন ডিএনএ সিকোয়েন্স গবেষণায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে।
সে যা–ই হোক, বিজ্ঞানীরা এশিয়ার প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের ওয়াই ক্রোমোজম পরীক্ষা করে এসব তথ্য পেয়েছেন। তাঁরা ২০ জনের মধ্যে এমন ১১টি ওয়াই ক্রোমোজম সিকোয়েন্স পেয়েছেন, যা আরও বেশি লোক বহন করছে। ১১টি সিকোয়েন্সের মধ্যে একটি মঙ্গল সম্রাট চেঙ্গিস খানের। তার মানে চেঙ্গিস ছাড়া আরও কমপক্ষে ১০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির ডিএনএ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে আছে।
ডিএনএর নিউক্লিক অ্যাসিড সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করাই ডিএনএ সিকোয়েন্সিং। ডায়াগনোসিস, বায়োটেকনোলজি, ফরেনসিক বায়োলজি, ভাইরোলজি এবং নৃতাত্ত্বিক গবেষণায় ডিএনএ সিকোয়েন্সিং পদ্ধতি ব্যাপকভাবে অনুসরণ করা হয়।
চেঙ্গিস খান ছাড়া আরও ১০ জনের ডিএনএর কথা যে বলা হচ্ছে, ওই ১০ জনের মধ্যে মাত্র ১ জনকে শনাক্ত করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। বাকি ৯ জন সম্পর্কে এখনো তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে গবেষকেরা ধারণা করছেন, এই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত এবং তাঁদের সময় ২ হাজার ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৭০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। আর যাঁর সম্পর্কে জানা গেছে, তাঁর নাম জায়োকাঙ্গা (Giocangga)। তিনিও এশীয় এবং ১৬ শতকের চিং (Qinq) সাম্রাজ্যের শাসক। মজার ব্যাপার হলো, এই জায়োকাঙ্গার ডিএনএ আধুনিক উত্তর চীনের প্রায় ১৫ লাখ মানুষের মধ্যে বিদ্যমান বলে গবেষকেরা জানিয়েছেন। জায়োকাঙ্গা মারা যান ১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে।
বিজ্ঞানবিষয়ক ব্রিটিশ জার্নাল নেচার নিউজ–এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অসংখ্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকত। এর ফলে তাঁদের সন্তানের সংখ্যাও ছিল অনেক। এর ফলেই তাঁদের বংশধরেরা বর্তমান সময় পর্যন্ত টিকে আছে।
সূত্র: নেচার নিউজ ও ইউরোপিয়ান জার্নাল অব হিউম্যান জেনেটিকস