খেলার মাঠের কথাই ধরা যাক। ক্রিকেটে টসের পর দুই দলের অধিনায়কের করমর্দন, কিংবা ফুটবলে ম্যাচ শেষে প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলানো ছিল চিরচেনা দৃশ্য। করোনাকাল বদলে দিয়েছে সেই রীতি। ইদানীং মাঠে হাত মেলানোর বদলে মুষ্টি বা কনুই মেলানোর চল হয়েছে। অনেকে আজকাল সাক্ষাতেও শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়ে পরস্পরের মুষ্টিবদ্ধ হাতে আলতো করে ঘুষিও দিচ্ছেন। নতুন করে জনপ্রিয় হওয়া এই পদ্ধতিকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘ফিস্ট বাম্প’। বাংলায় আপাতত চাইলে ‘মুষ্ঠি মিলন’ বলে চালাতে পারেন। তরুণদের মধ্যেই মূলত এই পদ্ধতি বেশি জনপ্রিয়।
পৃথিবীর ইতিহাসে ২০২০ সাল যে অজস্র পরিবর্তন এনেছে, শুভেচ্ছা বিনিময়ের ধরনও নিশ্চয়ই তার মধ্যে জায়গা পাবে। হাত মেলানোর রীতি বহুল প্রচলিত হলেও সব দেশে যে একই নিয়ম, তা নয়। নিউজিল্যান্ডের মাওরি জনগোষ্ঠী যেমন নাকে নাক ছুঁইয়ে পরস্পরকে সম্ভাষণ জানান। ইথিওপিয়ার মানুষ কাঁধে কাঁধ ছোঁয়ান। ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর পুরুষেরা একে অপরের কপালে কপাল ছুঁয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তবে জাপানের মতো এশিয়ার কিছু কিছু দেশের সম্ভাষণরীতি আগে থেকেই বেশ ‘স্বাস্থ্যসম্মত’—হালকা মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানান তাঁরা। ইউরোপের কিছু কিছু দেশে গালে চুমু খাওয়াও সম্ভাষণের অংশ।
কিন্তু হাত মেলানোর চল কীভাবে শুরু হয়েছিল, জেনে হয়তো বিস্মিতই হবেন। খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে করমর্দন শুরু হয়েছিল শান্তি স্থাপনের সংকেত হিসেবে—এর মাধ্যমে বোঝানো হতো, দুজনের কারও হাতেই কোনো অস্ত্র নেই। রোমান সভ্যতায় হাত মেলানোর পরিসর ছিল আরেকটু বড়। পরস্পরের সঙ্গে বাহু মিলিয়ে সম্ভাষণ করত তারা। উদ্দেশ্য একই—জামার আস্তিনের নিচে কোনো অস্ত্র লুকানো নেই, তা জানান দেওয়া। আজকের দিনে অবশ্য যতই কনুই মেলান বা ‘মুষ্ঠি মিলন’ করুন, হাতে অস্ত্র (পড়ুন ভাইরাস) নেই—তা নিশ্চিত করতে পারবেন না।
সূত্র: হিস্ট্রি ডটকম ও ডিপ ইংলিশ ডটকম