‘লোকে জানুক যে আমি এখন এই গাঁয়ের মোড়ল’

বাংলা অঞ্চলের প্রবল প্রতাপশালী চরিত্র নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র (১৭১০-৮৩)। পণ্ডিতদের মতে, তাঁর সভার অনেক রত্নের এক রত্ন ছিলেন গোপাল ভাঁড়। এ বিষয়ে পণ্ডিতেরা স্থির সিদ্ধান্তে না এলেও এই মতের পক্ষেই রয়েছে অধিকাংশের সায়। যেমন বঙ্গসাহিত্যে হাস্যরসের ধারা বইয়ে অজিতকুমার ঘোষ লিখেছেন, ‘গোপাল রসিক-চূড়ামণি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজসভার ভাঁড় ছিলেন।’ সে যাহোক, গোপাল ভাঁড় বললেই গোলগাল এক চরিত্র আমাদের চোখের সামনে ভাসে। আর তাঁর গল্প? শোনেনি এমন কেউ আছে! আসুন, আবার পড়া যাক গোপাল ভাঁড়ের গল্প...

আঁকা: তুলি

‘কথাটা সম্পূর্ণ করুন’

কৃষ্ণনগরে ছিল এক স্যাকরা। তার সোনার দোকানে কেউ গয়না বানাতে এলে সে বলত, ‘হরি হর! হরি হর!’

ওই স্যাকরার হরি নামে একজন কর্মচারী ছিল। কেউ গয়না বানানোর জন্য পুরোনো সোনা নিয়ে এলে সোনা গলানোর সময় সে বলত, ‘হরি হর! হরি হর!’ অর্থাৎ সোনা হরণ করো। গোপাল একদিন তার মেয়ের বিয়ের জন্য কিছু পুরোনো সোনা নিয়ে ওই দোকানে এসেছিল। সে স্যাকরার ওই কথা শুনেই ব্যাপারটা বুঝতে পারল।

গোপাল তখন বলল, ‘স্যাকরা মশাই, কথাটা সম্পূর্ণ করুন। হরি হর! হরি হর! সোনা মেরে থলে ভর।’

এরপর কোনো দিন স্যাকরা হরিনাম করত না।

প্রচারের লোভে

গোপাল মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের খুব প্রিয়পাত্র, এ কথা সবাই জানে। তার ওপর গোপালের বুদ্ধিও খুব প্রখর। তাই সবাই মিলে তাকে একবার গ্রামের মোড়ল করল।

একদিন ভোরবেলা একজন এসে গোপালকে ডাকতে লাগল, ‘গোপাল, ও গোপাল?’

গোপাল বাড়িতেই ছিল কিন্তু কোনো জবাব দিল না।

লোকটি তখন বলতে লাগল, ‘গোপালবাবু, ও গোপালবাবু, বাড়ি আছেন?’

গোপাল তবু কোনো কথার জবাব দিল না।

তখন সে ডাকতে লাগল, ‘ও মোড়ল মশাই, মোড়ল মশাই?’

গোপালের বউ তখন বিরক্ত হয়ে বলল, ‘বলি জেগে ঘুমোচ্ছ নাকি, কালা? লোকটা সেই কখন থেকে ডাকছে, সাড়া দিচ্ছ না যে!’

গোপাল একটু হেসে বলল, ‘আরও কিছুক্ষণ ডাকুক না, লোকে জানুক যে আমি এখন এই গাঁয়ের মোড়ল।’

সূত্র: গোপাল ভাঁড়ের ৫ ডজন গল্প (প্রথমা প্রকাশন)

সংকলন ও সম্পাদনা: আখতার হুসেন

আরও পড়ুন