যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিকে তথ্যপ্রযুক্তির রাজধানী বললে কেউ দ্বিমত করবেন বলে মনে হয় না। শুধু তা-ই নয়, দেশে দেশে প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনকেন্দ্র বোঝাতেও প্রায়ই সিলিকন ভ্যালির উল্লেখ করা হয়। যেমন ভারতের সিলিকন ভ্যালি বেঙ্গালুরু। এস্তোনিয়ার টালিনকে ইউরোপের সিলিকন ভ্যালি বলা হয়। আর চীনের সিলিকন ভ্যালি হলো শেনঝেন। এখন অবশ্য হাইডিয়ান ডিস্ট্রিক্টের জংগুয়ানচুন শহরের নামও শোনা যাচ্ছে বেশ।
শেনঝেন যে চীনের প্রযুক্তিকেন্দ্র, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তবে ঠিক সিলিকন ভ্যালি কি না, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে যেখানে সেমিকন্ডাক্টর, সফটওয়্যার আর নতুন নতুন সব প্রযুক্তির কারবার, চীনের শেনঝেন সেখানে অনেকটাই স্মার্টফোননির্ভর। হার্ডওয়্যার বা যন্ত্রাংশ নিয়ে কারবার তাদের। শেনঝেনের হুয়াচাংবে মার্কেটে ঘণ্টা কয়েক ঘুরলেই একদম শূন্য থেকে সচল স্মার্টফোন তৈরির সব যন্ত্রাংশ জোগাড় করা সম্ভব। প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে এরপর নিজেই স্মার্টফোন তৈরি করে নিতে পারবেন।
এই শেনঝেনেই হুয়াওয়ে টেকনোলজিস, জেডটিই, টেনসেন্ট হোল্ডিংস, ড্রোন নির্মাতা ডিজেআই এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনকারী বিওয়াইডি অটোর মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর।
যে শহর তরুণদের
শেনঝেন তরুণদের শহর। এ শহরের বাসিন্দাদের সিংহভাগের বয়স ২০ কিংবা ৩০–এর ঘরে। গড় বয়স ৩২। পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের দেখা মেলে কদাচিৎ। এর মূল কারণ সম্ভবত, কম বয়সীরা সহজে নতুন প্রযুক্তি, যন্ত্র ও সেবার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন।
১৯৮০ সালে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণার পর থেকে শেনঝেন দ্রুত উন্নতি করেছে। তবে দুই যুগ পর এসে দেখা গেল, খ্যাতি নয়, শেনঝেনের কুখ্যাতিই বেশি। কারণ, রাজ্যের হেন নকল ফোন নেই, যা শেনঝেনে পাওয়া যেত না। সে দুর্নাম অবশ্য ঘোচার পথে। অনুকরণ থেকে উদ্ভাবনের পথে হাঁটছে তারা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বেশ কাজ হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির সৃষ্টিতে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির যেমন অবদান আছে, চীনের সিলিকন ভ্যালিতেও তা-ই। যেসব চীনা শিক্ষার্থী স্ট্যানফোর্ডে পড়াশোনার জন্য গিয়েছিলেন, দেশে ফিরে এসে শেনঝেনে নতুন নতুন সব প্রযুক্তিনির্ভর স্টার্টআপ দাঁড় করালেন তাঁরা। নতুন একটা ধারা তৈরি করলেন। এরপর অনেক তরুণ অনুসরণ করেছেন তাঁদের।
তা ছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়নও ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বের অন্যতম ‘ফিন্যান্সিয়াল হাব’ হংকংয়ের সঙ্গে বুলেট ট্রেনে বড়জোর ১৫ মিনিট দূরে শেনঝেন। হংকং আর শেনঝেনকে লোকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক আর সিলিকন ভ্যালির মধ্যে সম্পর্কের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করল।
তবে সিলিকন ভ্যালি যেমন গোটা বিশ্বের মেধাবীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে, শেনঝেন তেমন নয়। তাঁরা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে গিয়ে সব সংস্কৃতির সঙ্গে মিশেছেন। এরপর নিজ দেশে ফিরে এসে গড়ে তুলেছেন চীনের সিলিকন ভ্যালি।