এক শব্দে এর উত্তর হলো, ‘না’। এক বাক্যে বললে, খুব একটা বেশি সময়ের জন্য নয়। তবে গোটা এক নিবন্ধ লিখতে বসে এক বাক্যে লেখা শেষ করলে তো আর চলে না। তাই চলুন, ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা যাক। জানার চেষ্টা করা যাক, মৃত্যুর পর কেন নখ ও চুল বাড়ে না এবং কেন বাড়ে বলে মনে হয়।
আসলেই কি বাড়ে না
মৃত্যুর পর মরদেহের কোষগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আর অক্সিজেন না পেলে গ্লুকোজ উৎপাদন সম্ভব হয় না। এই গ্লুকোজই কোষের ‘খাবার’। খাবার না পেলে চুল ও নখের নতুন কোষ গঠনের প্রশ্নও আসে না।
আরেকটা ব্যাপার হলো, ২০০৭ সালে দ্য বিএমজে জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, যে হরমোনের প্রভাবে চুল ও নখের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত হয়, মৃত্যুর পর সে প্রক্রিয়াও আর সক্রিয় থাকে না।
তবে আমরা জানি, নখ ও চুলের কোষ এমনিতেই কেরাটিন নামের ‘মৃত’ উপাদানে তৈরি। ব্যক্তির মৃত্যুতে সেগুলোর কাজ কেন থেমে যাবে? কারণ, নখের সিংহভাগ উৎপাদন মূলত জার্মিনাল ম্যাট্রিক্স অংশে হয়। মৃত্যুর পর এই ম্যাট্রিক্সের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়, কেরাটিন তৈরিও আর সম্ভব হয় না। চুলের বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য।
তাহলে ভুল তথ্যটি ছড়াল কেন
বেশ কিছু কারণ আছে। একটি কারণ হলো, খালি চোখে মরদেহের নখ তুলনামূলক বড় দেখায়। মৃত্যুর পর মানবদেহ পানিশূন্য হতে শুরু করে। এত চামড়া সংকুচিত হয়ে যায়। নখ ও চুলের যে অংশ ওই চামড়ার নিচে ছিল, তা বেরিয়ে আসে। আর তখন দেখে মনে হয় যেন তা বাড়ছে।
আবার, মস্তিষ্কের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তবে শরীরের অন্যান্য অংশের কোষের মৃত্যু হতে মিনিট কয়েক লেগে যেতে পারে। সবার আগে নিষ্ক্রিয় হয় স্নায়ুকোষ, এরপর বাকিগুলো।
গড়ে একজনের চুল দিনে শূন্য দশমিক ৫ মিলিমিটার করে বাড়ে। নখের বেলায় তা শূন্য দশমিক ১ মিলিমিটার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিমাণটা কমতে থাকে। সবকিছু বিবেচনায় ধরে নেওয়া যেতে পারে, মৃত্যুর পর কোষ নিষ্ক্রিয় হতে হতে একজনের নখ বা চুল ৩ মাইক্রোমিটারের মতো বাড়তে পারে। পরিমাণটা বোঝানো মুশকিল, তবে আমাদের মাথার একটি চুল সাধারণত ১০০ মাইক্রো মিটার পুরু হয়ে থাকে।
মৃত্যুর পর নখ ও চুল বাড়ার ভুল তথ্যটি দীর্ঘদিন সত্যি বলেই জানতেন অনেকে। এমনকি জার্মান ঔপন্যাসিক এরিখ মারিয়া রেমার্কের অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট উপন্যাসে মূল চরিত্র একপর্যায়ে তাঁর মৃত বন্ধুর নখ বাড়ছে বলে ভাবতে শুরু করেছিল।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স ও সায়েন্স ফোকাস