সাফল্যের সূত্র
প্রতিষ্ঠানে ব্যর্থতা উদ্যাপনের পরিবেশ
স্মার্টফোনের জন্য গেম তৈরি করে ফিনল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান সুপারসেল। ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানসের মতো জনপ্রিয় গেমের নির্মাতা এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মধ্যে আয় করেছে প্রায় ১৫০ কোটি ইউরো! সুপারসেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলকা পানানেন জানিয়েছেন তাঁদের সাফল্যের রহস্য...
জাপানের বাজারে
শুরুর দিকে আমরা জাপানের গেমের বাজার নিয়ে আগ্রহী ছিলাম। এতটাই উঠেপড়ে লেগেছিলাম, মানুষ আমাদের পাগল ভেবেছিল। অনেকে বলেছিল, একটা পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানের জন্য জাপানের গেমের বাজার সমাধিক্ষেত্র ছাড়া কিছুই নয়। লোকের কথা কানে না তুলে আমরা জাপানের গেম তৈরির প্রতিষ্ঠান গাংহোর সঙ্গে চুক্তি করলাম, ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানস বাজারে ছাড়লাম। আমাদের অবাক করে দিয়ে গেমটা সেরা গেমের তালিকায় ৩ নম্বরে উঠে এল। জাপানে কোনো পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরাই প্রথম সেরা ১০-এ জায়গা পেলাম।
সাফল্যের নিয়ম
এরপর আমরা চীনেও ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানসের যাত্রা শুরু করলাম। কোনো রকম বিপণন ছাড়াই গেমটা উঠে এল জনপ্রিয় তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে। এভাবেই ধীরে ধীরে ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল। সত্যি বলতে, আমাদের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার গল্পই বেশি। গেমের ব্যবসায় ঝুঁকি নিতেই হয়। ঝুঁকি না নিলে সফল হওয়া যায় না, আবার ঝুঁকি নিলে ব্যর্থতার স্বাদও পেতে হয় বহুবার—এটাই নিয়ম।
ভুলের উদ্যাপন
আমরা ব্যাপারটাকে এভাবে দেখি—তুমি যদি একবারও ব্যর্থ না হও, এর মানে তুমি যথেষ্ট ঝুঁকি নিচ্ছ না! তাই আমাদের প্রতিষ্ঠানে আমরা ব্যর্থতা উদ্যাপনের জন্য বেশ ভালো একটা পরিবেশ তৈরি করে রেখেছি। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, আমরা ব্যর্থতা থেকে আমাদের শিক্ষাটা উদ্যাপন করি।
কীভাবে? ধরুন, বাজারে আমাদের তৈরি একটা গেম মুখ থুবড়ে পড়ল। যে দল গেমটি তৈরি করেছিল, আমরা তার সদস্যদের মঞ্চে তুলে দিই। সবার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁরা বলেন, কোথায় তাঁদের ভুল ছিল। অন্যরা সেই ভুল থেকে শেখে। আর এই শিক্ষাটাই আমরা উদ্যাপন করি।
সফলতা আর ব্যর্থতার শিক্ষা
ইদানীং ব্যর্থতা উদ্যাপনের সুযোগ আমাদের খুব একটা হয় না। কারণ সফলতা থেকেও আমরা শিক্ষা নিয়েছি। সাফল্য আর ব্যর্থতা, দুটিই আমাদের কিছু না কিছু শেখায়। আর দুটিই উদ্যাপন করা উচিত। কারণ, সফলতা আর ব্যর্থতা—দুই-ই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা অসংখ্য গেম তৈরি করেছি, যার মধ্যে মাত্র দুটি দারুণভাবে সফল হয়েছে। এই পুরো যাত্রায় বারবার আমাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করেছি। যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ পাড়ি দিতে পেরেছিলাম বলেই আমরা আজকের অবস্থানে পৌঁছেছি।
লোকজন প্রশ্ন করেন, একজন ‘মাল্টি বিলিয়নিয়ার’ হতে কেমন লাগে? আমি সত্যিই ব্যাপারটা নিয়ে কখনো ভাবিনি। কারণ আমি কখনোই টাকার জন্য কাজ করিনি। এটা আমার জীবনকে বদলে দেয়নি।
ইলকা পানানেনের সাক্ষাৎকার অবলম্বনে ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মো.সাইফুল্লাহ