সাফল্যের সূত্র
যে ৫টি টেক-সংকল্প নতুন বছরে করতেই পারেন
বছরের শুরুতে জীবনের নানান ক্ষেত্রে কত না সংকল্প করি আমরা। জীবনের সঙ্গে প্রযুক্তি এখন অবিচ্ছেদ্য। ফলে এই ক্ষেত্রেও কিছু সংকল্প ঠিক করা জরুরি। কী হতে পারে সংকল্পগুলো?
১. অনলাইনে সদাচার
ঢাকার বাতাস দূষণের তালিকায় ওপরের দিকে। ইন্টারনেটের ভার্চ্যুয়াল বাতাসও তার চেয়ে কম দূষিত নয়। অনেকেই ফেসবুক থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন অনলাইন–দূষণের কারণে। অনেকেরই ব্যক্তিজীবন মারাত্মক হুমকির মুখে অনলাইন বুলিংয়ের শিকার হয়ে। অনলাইনের এই দূষণের জন্য আপনিও যেন দায়ী না হন, এটাই হোক এ বছরের প্রথম টেক–সংকল্প।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু লেখার পর কোনো সম্পাদক থাকে না। কেউ বলে না, এটা লিখলে অমুকের ক্ষতি হতে পারে বা তমুকের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হচ্ছে। তাই নিজেই নিজের সম্পাদক হয়ে উঠুন। যাঁকে বা যাঁদের নিয়ে লিখছেন, তাঁর বা তাঁদের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবেন না। লেখার আগে, ছবি বা ভিডিও প্রকাশের আগে ওপাশের মানুষ বা প্রতিষ্ঠানটির হয়ে চিন্তা করুন।
রাগ–ক্ষোভ–দুঃখ–হতাশা ঝাড়তে হলে যার সামনে ঝাড়লে সমাধান মিলবে, তার সামনে গিয়ে ঝাড়াই ভালো। ক্রিকেটার, অভিনয়শিল্পী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা যেকোনো অঙ্গনের বিশিষ্টজনদের নিয়ে কিছু বলার আগেও ভাবুন। তারকা হলেও তাঁরা আর দশজনের মতোই; তাঁদের ব্যক্তিজীবন, পরিবার ও সন্তান আছে। অনলাইনে আরেকটি বড় ইতিবাচক ভূমিকা আপনি রাখতে পারেন গুজবে কান না দিয়ে। কিছু শেয়ার করার আগে যাচাই করুন।
২. অকাজে ফোন নয়
: ছেলে খুব ভদ্র–নম্র, বড়দের সামনে মাথা তুলে কথা বলে না।
: তুলবে কী করে, ছেলে যে সারাক্ষণ ঘাড় গুঁজে ফোন চালায়!
কৌতুকটির উদ্ভব গত দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে। এই দশকে এসে কৌতুকটির প্রাসঙ্গিকতা বেড়েছে, বিস্তৃত হয়েছে নানান বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে। এখন কেবল তরুণ প্রজন্ম নয়, মধ্যবয়সীরাও এই সমস্যায় জড়িয়েছেন। যেকোনো সারিতে দাঁড়ালেই যেন আর কোনো দিকে তাকানোর দরকার নেই, ফোন বের করে তাকাও। লিফটে উঠলে আর কিছু করার নেই, ফোন বের করে তাকাও। পরিবারের সবাই মিলে খাবার খেতে বসেছে, ফোন বের করে তাকাও। এমনকি সামনে প্রেমিক–প্রেমিকা বসে আছে, তখনো ফোন বের করে তাকাও। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফোনের এই অতিব্যবহার দুশ্চিন্তা ও হতাশার বড় কারণ। শারীরিক জটিলতা, বিশেষ করে চোখের সমস্যারও অন্যতম হোতা। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, মানুষে মানুষে দূরত্ব। তাই এই বছর কথায় কথায় ফোন বের করে তাকিয়ে থাকার অভ্যাসটি বর্জন করাই হোক অন্যতম সংকল্প।
নিস্তারের উপায় হিসেবে অ্যাপলের আইওএসে ‘মোমেন্ট’ এবং অ্যান্ড্রয়েডে ‘কোয়ালিটি টাইম’ অ্যাপটি নামিয়ে নিতে পারেন। ফোন চালানোর সময়সীমা–সংক্রান্ত এই দুটি অ্যাপ বিনা কাজে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকায় লাগাম টানতে সাহায্য করে। আরেকটি বিষয়, গাড়ি চালানোর সময় ফোন একেবারেই ব্যবহার করবেন না। ফোনটি গাড়ির কাপহোল্ডার বা পাশের আসনে নয়, ড্যাশবোর্ডে রাখুন এবং অবশ্যই কার মোড অন করে রাখবেন। আপনার স্মার্টফোন যথেষ্ট বুদ্ধিমান। আপনি গাড়ি চালাচ্ছেন জানার পর মেসেজে নিজেই সাড়া দেবে। অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীরা ‘অ্যান্ড্রয়েড অটো’ এবং আইফোন ব্যবহারকারীরা জেনে নিন কী করে ‘ডু নট ডিস্টার্ব হোয়াইল ড্রাইভিং’ অপশন চালু করতে হয়।
৩. যা আছে, তাতে তুষ্ট থাকুন
বাজারে আইফোনের নতুন সংস্করণ এলে আলোড়ন পড়ে যায়। কেউ কেউ কিডনি বেঁচেও নতুন সংস্করণটি পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে বলে খবর আসে। এর পেছনে প্রচারমাধ্যম ও বিজ্ঞাপনের ইন্ধনও থাকে। তবে বাজারে তো প্রায় প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো গ্যাজেট আসছেই। নতুন গ্যাজেট এলে তার প্রতিটিই কিনতে গেলে ফতুর হওয়ার বিকল্প নেই। একটি মুঠোফোনের কথাই ধরুন; কেনার পর ঠিকঠাকমতো তিনটি বছর না চালালে পয়সা উশুল হবে কী করে? হ্যাঁ, বন্ধু হয়তো নতুন একটি ফোন কিনবে। সহকর্মীর কবজিতে হয়তো শোভা পাবে ঝাঁ চকচকে স্মার্ট ওয়াচ। ওসবের জন্য মনটা সারাক্ষণ হায় হায় করলে নিজেরই কষ্ট। তাই নিজের যে গ্যাজেট আছে, তাতেই তুষ্ট থাকুন। গ্যাজেটটির সদ্ব্যবহার করুন। অনেকেই আছেন, যাঁরা হাতের ফোনটির সদ্ব্যবহার সম্পর্কে কোনো রকম ধারণাই রাখেন না। অথচ নতুন আরেকটি ফোন এলেই কেনার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠেন। তাই বর্তমানেই তুষ্ট থাকা হোক নতুন বছরের আরেক টেক–সংকল্প।
৪. ইনবক্স হোক দূষণমুক্ত
রোজ কতগুলো উটকো ই–মেইল ডিলিট করতে হয় আপনাকে? সংখ্যাটি নিশ্চয়ই কম নয়। বিশেষ করে আপনার কাজের সঙ্গে ই–মেইল ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হলে বেশ ঝক্কি পোহাতে হয় নিশ্চিত। পরিস্থিতি আরও বিরক্তিকর হয় প্রতি সকালে, যখন একঝাঁক জাংক ই–মেইলের মধ্য থেকে দরকারিটি খুঁজে বের করতে হয়। এই ঝামেলা বেশি হয় সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক ই–মেইল আইডির বেলায়। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কার না জানা! খুঁজে খুঁজে অদরকারি ই–মেইল আইডি আনসাবস্ক্রাইব করলেই হয়। তবে অনেকের হাতেই এত সময় নেই। unroll.me ওয়েবসাইটটিতে ঢুঁ মারতে পারেন। দুই মিনিটের কম সময়ে সব অহেতুক ই–মেইল আনসাবস্ক্রাইব করা যায় এখান থেকে। জিমেইল, ইয়াহু থেকে শুরু করে সব ই–মেইলের বেলায় কাজ করে। আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েডে অ্যাপও পাবেন। তবে বাজার গবেষণার জন্য ওয়েবসাইটটি আপনার কিছু তথ্য নেবে। তাই ব্যবহারের আগে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়গুলো সুরক্ষিত রাখুন।
৫. প্রিন্টারের কাগজ বাঁচান
কিছু প্রিন্ট করার আগে ভালোভাবে ভেবে দেখুন, আদতেই কি প্রিন্টটি দরকার? দাপ্তরিক কাজে ইদানীং ই–মেইল, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার এমনকি মেসেঞ্জারে যোগাযোগ হয় হরদম। ফলে কথায় কথায় সবকিছু প্রিন্ট না করলেও চলে। তবে কিছু ডকুমেন্ট তো প্রিন্ট করতেই হয়। খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু না হলে কাগজের উভয় পৃষ্ঠায় প্রিন্ট করুন। উভয় পৃষ্ঠায় প্রিন্ট করার আগে প্রিন্ট ডায়ালগে সেটিংসে নির্দেশনা দিতে হবে। কিছু প্রিন্টারে অটোমেটিক ডুপ্লেক্স প্রিন্টার, অর্থাৎ উভয় পৃষ্ঠায় প্রিন্ট করার সুবিধা থাকে; সেটি চালু করে রাখতে পারেন চাইলে। একইভাবে অহেতুক বাতি এবং এসি চালু রাখবেন না। কাজ শেষ হলে কম্পিউটারের সঙ্গে ইউপিএসও বন্ধ করুন।
সূত্র: সিনেট ডটকম