একদল তরুণ খেতে গেছে নামীদামি এক রেস্তোরাঁয়। যে যার পছন্দমতো খাবার নিয়ে বেশ আয়েশ করে খাচ্ছে। খাবার যখন শেষ হলো, তখন এক বন্ধু ওয়েটারকে খাবারের বিল নিয়ে আসতে বলল। নামীদামি রেস্তোরাঁয় যে ভ্যাট দিতে হয়, তা সবারই জানা। কিন্তু বিল তার চেয়েও বেশি এসেছে। সবাই মিলে যখন ভালো করে লক্ষ্য করল, তখন দেখতে পেল, ভ্যাটের নিচেই আছে ঢেকুর তোলার বিল!
এতটুকু পড়ার পর আঁতকে উঠবেন না। বাজেট ঘোষণার পরপরই এ ধরনের রসিকতা ভালো লাগার কথা নয়। যাহোক, ভালো খাবার পেটে পড়ার পর যে তৃপ্তির ঢেকুর আসে, তার জন্য আপাতত কর দিতে হচ্ছে না। তবে গবাদিপশু যে ঢেকুর তোলে, তার জন্য খামারিদের কাছ থেকে কর নেওয়ার পরিকল্পনা করছে নিউজিল্যান্ড।
প্রশ্ন জাগতে পারে, ঢেকুরে সমস্যা কী? ঢেকুর কি ভোগ্যপণ্য? গবেষকেরা বলছেন, নিউজিল্যান্ডের প্রায় অর্ধেক ভূখণ্ড থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। বিশেষ করে মিথেন গ্যাস। তা কৃষিবিষয়ক কর্মকাণ্ডের কারণে। আরও খুলে বললে গবাদিপশু লালনপালনের কারণে। এটা হয়তো জানেন, গবাদিপশুর ঢেকুর থেকে নির্গত হয় বিপুল পরিমাণে মিথেন গ্যাস।
একটু পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যাক। নিউজিল্যান্ডে বসবাস করছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। অথচ সেখানে ভেড়ার সংখ্যা ২ কোটি ৬০ লাখ এবং অন্যান্য গবাদিপশু আছে ১ কোটি। এই বিশাল পরিমাণ গবাদিপশু থেকে যে হারে মিথেন নির্গত হয়, তা রোধ করার জন্যই কৃষক বা খামারিদের কাছ থেকে তাদের পালিত প্রাণীর ওপর কর ধার্য করার পরিকল্পনা করেছে নিউজিল্যান্ড।
গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইড। এর পরের অবস্থানে আছে মিথেন। এটি সবচেয়ে বেশি নির্গত হয় ভেজা মাটি, গবাদিপশু ও ময়লা ফেলার স্থান থেকে। নিউজিল্যান্ড এত দিন কৃষিক্ষেত্র থেকে নির্গত গ্যাস আমলে নেয়নি। এ জন্য সমালোচনার সম্মুখীনও হতে হয়েছে বেশ। তাই বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর জন্য নতুন পরিকল্পনায় কৃষিক্ষেত্র, বিশেষ করে গবাদিপশু আওতাভুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্তারা।
নিউজিল্যান্ডের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী জেমস শ জানিয়েছেন, বায়ুমণ্ডলে যে হারে মিথেন গ্যাস নির্গত হচ্ছে, তা কমানোর ক্ষেত্রে কোনো প্রশ্ন থাকার কথা নয়। আর কাজটি কার্যকরভাবে করা তখনই সম্ভব হবে, যখন গ্যাস নির্গমনের সঙ্গে আর্থিক বিষয়টি আসবে।
তবে এ পরিকল্পনা এখনই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। গবাদিপশু ঢেকুর তুললে কর দিতে হবে ২০২৫ সাল থেকে। অন্যদিকে এই পুরো প্রক্রিয়া ঠিক কীভাবে এবং কারা বাস্তবায়ন করবে, তা–ও ঠিক করা হয়নি।
দেশটির অর্থমন্ত্রী গত মে মাসে প্রায় ২৯০ কোটি নিউজিল্যান্ড ডলারের তহবিল গঠনের কথা বলেছেন, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কাজে লাগানো হবে। আর এই তহবিল নানা ধরনের গ্যাস নির্গমনের ওপর কর ধার্য করে সংগ্রহ করা হবে। তবে এতে কৃষকদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাঁদের খামার থেকে যে হারে মিথেন গ্যাস নির্গত হবে, তার বিপরীতে পদক্ষেপ নেওয়ার ভিত্তিতে পুরস্কার বা অনুপ্রেরণা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। আর এই গঠিত তহবিল কৃষি গবেষণা ও পরামর্শসেবায় ব্যবহার করা হবে।
কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস সবচেয়ে ক্ষতিকর হলেও মিথেন গ্যাস দিন দিন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ, মিথেন গ্যাসের অণু এককভাবে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। প্রাকৃতিকভাবেই যেহেতু মিথেন গ্যাস বেশ বড় আকারে নির্গত হয়, তাই এ ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা যৌক্তিক মনে করছে।
সূত্র: বিবিসি