২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

কফিশপে বসে ‘অফিস’ করা কেন ভালো

কফিশপের কোলাহল, ঘ্রাণ এবং দৃশ্যের পরিবর্তন সৃজনশীল ভাবনায় সাহায্য করে
পেক্সেলস

ধরুন, আপনি একটা কফিশপে বসে আছেন। কফির ঘ্রাণে চারদিক ম–ম করছে। কখনো কফির কাপ আর চামচের টুংটাং, কখনো পাশের টেবিল থেকে কারও চাপা হাসির শব্দ কানে আসছে। গবেষণা বলছে, এমন পরিবেশ মানুষের কর্মক্ষমতা ও সৃজনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। কেননা বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য কফিশপের আছে, যা বাসায় বা অফিসে পাওয়া যায় না।

করোনাকালে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ কথাটির ব্যাপক প্রচলন হওয়ার আগে থেকেই কিন্তু ‘ওয়ার্ক ফ্রম কফিশপ’ ব্যাপারটা চালু আছে। অফিসে না গিয়েও যে অফিস করা যায়, ২০২০ সালেই তা প্রমাণ হয়ে গেছে। আর আমাদের প্রশিক্ষণও হয়ে গেছে। অতএব সামনের দিনগুলোতে ‘ওয়ার্ক ফ্রম কফিশপ’–এর ধারণা আরও জনপ্রিয়তা পেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, কফিশপের কোলাহল, ঘ্রাণ এবং দৃশ্যের পরিবর্তন আমাদের সৃজনশীল ভাবনায় সাহায্য করে।

২০১২ সালে জার্নাল অব কনজিউমার রিসার্চে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, কফিশপে সাধারণত নিচু থেকে মাঝারি স্তরের একধরনের কোলাহল থাকে। শব্দের এই মাত্রা আপনাকে পুরোপুরি কাজে মনোনিবেশ করতে দেবে, তা নয়; বরং কখনো কখনো কিছুটা অন্যমনস্ক করে দেবে। এটিই ভিন্নধর্মী চিন্তা ও সৃজনশীল আইডিয়ার জন্য সহায়ক। একই ধরনের ফলাফল পাওয়া গেছে ২০১৯ সালে করা আরেকটি গবেষণায়—কফিশপের শব্দের মাত্রা আমাদের ইন্দ্রিয়কে সজাগ রাখার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। এমনকি ইদানীং কর্মীদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে অনেক প্রতিষ্ঠান অফিসের ভেতরে কফিশপের মতো পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। একে বলা হচ্ছে ‘দ্য কফিশপ ইফেক্ট’।

ইদানীং কর্মীদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে অনেক প্রতিষ্ঠান অফিসের ভেতরে কফিশপের মতো পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে
পেক্সেলস

যদি এমন হয় যে কফিশপে আপনি ছাড়া অন্য যাঁরা উপস্থিত আছেন, তাঁরাও আপনার মতো কাজ করতে এসেছেন, তাহলে কর্মক্ষমতা বেড়ে যাবে আরও। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির অর্গানাইজেশনাল থিওরি অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সানকি লি বলেন, ‘ব্যাপারটা অনেকটা শরীরচর্চা করতে জিমে যাওয়ার মতো। জিমে গিয়ে আপনি যখন আরও অনেককে ব্যায়াম করতে দেখবেন, তখন আপনিও গড়িমসি না করে শরীরচর্চা শুরু করতে উদ্বুদ্ধ হবেন।’

বাসায় কিংবা অফিসে আমরা সাধারণত একই পরিবেশে দীর্ঘক্ষণ কাজ করি। কিন্তু কফিশপের সুবিধা হলো, এখানে দৃশ্যপটে বৈচিত্র্য আছে। নানা ধরনের মানুষ আসবে, যাবে। যদি একেক দিন একেক কফিশপে বসে কাজ করেন, তাতেও আপনি বৈচিত্র্য খুঁজে পাবেন। সানকি লি বলেন, ‘একটা অফিস কীভাবে সাজানো হলো, তার ওপরও সৃজনশীলতা নির্ভর করে। একে বলা হয় একমুখী সৃজনশীল চিন্তা। যদি দৃশ্যপটের পরিবর্তন হয়, তা আপনাকে যেকোনো সমস্যার সন্তোষজনক ও ভিন্নধর্মী সমাধান পেতে সাহায্য করবে।’

কফিশপে কাজের উপকারিতা নিয়ে গবেষণা করেছেন নিউইয়র্কের ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক করিডন স্মিথও। তাঁর মতে, অফিসের সাধারণ সভা কিংবা জুমের মতো অনলাইন মাধ্যমে সবাই এক হয়ে আলোচনা করার মধ্যে একধরনের ‘আনুষ্ঠানিকতা’ আছে। অন্যদিকে ক্যাফে বা কফিশপের আলোচনা কিছুটা অনানুষ্ঠানিক। এটিও সৃজনশীল চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষকে সহায়তা করে।

এত সব যুক্তি উপস্থাপনের পর গবেষকেরা বলছেন সবচেয়ে কার্যকর উপাদানটির কথা, যে কারণে লোকে কফিশপে যায়—কফি! ধোঁয়া–ওঠা এক কাপ কফি যদি থাকে সামনে, কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু চুমুক দিতে পারলে নিশ্চয়ই তা আপনাকে চাঙা রাখবে।

সূত্র: বিবিসি