আমাজন তখনো এত বড় হয়নি। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির শুরুর দিকের ঘটনা বলা যায়। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেফ বেজোস একদিন ঘোষণা দিয়ে বসলেন, আমাজনে যেকোনো অভ্যন্তরীণ মিটিংয়ে সদস্যসংখ্যা ঠিক করা হবে দুই পিৎজার নিয়ম মেনে। মানে, দুটি পিৎজায় যেন মিটিংয়ে অংশ নেওয়া সবার খাবার হয়ে যায়।
খাবারের বিল বাঁচিয়ে সিনেমা দেখতে যাওয়া বেজোসের উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি চেয়েছিলেন, মিটিংগুলো ফলপ্রসূ করতে; কার্যকরী করে তুলতে। মিটিংয়ে অযথা বেশি মানুষ থাকলে সবার আইডিয়া উঠে আসে না। তা ছাড়া কর্মীদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে দেওয়ার বেশ কিছু সুবিধা আছে। যেমন সময়সূচি নিয়ে সময়ক্ষেপণ না করে মূল কাজ করে যান সবাই। একে অপরকে কাজ সম্পর্কে হালনাগাদ রাখেন সহজে।
এই দুই পিৎজার নিয়মকে আমাজনের সাফল্যের সূত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন জেফ বেজোস। বর্তমানে আমাজন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম; সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। আর বেজোস হয়েছেন বিশ্বের ১ নম্বর ধনী।
বেজোসের আদর্শ মিটিংয়ের সদস্যসংখ্যা
আমাজনের সাফল্যের রহস্য না হয় বোঝা গেল, কিন্তু দুই পিৎজায় কজন মানুষের খাবার হয়? ডিরেক্ট পয়েন্ট ডটকমের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, মাঝারি আকারের ১২ ইঞ্চি পিৎজা সচরাচর ৮টি স্লাইস বা টুকরা করা হয়। তিন বা চারজনের খাবার হয় এতে। সে হিসাবে ছয় থেকে আটজনের মধ্যে মিটিং রাখা ভালো। কিন্তু পিৎজা মাঝারি না হয়ে বড় হলে?
১৪ ইঞ্চি পিৎজায় ৮ থেকে ১০ টুকরা করা যায়। আর তিন থেকে শুরু করে চাইলে তো টেনেটুনে ১০ জনকেও খাওয়ানো সম্ভব। তবে আমরা ধরে নিচ্ছি সেটি পাঁচজন খেতে পারে। আর দুটি মিলিয়ে হয় ১০। সুতরাং জেফ বেজোসের আদর্শ মিটিংয়ে সদস্যসংখ্যা হবে ৬ থেকে ১০ জনের মধ্যে।
বেজোসের পথে হাঁটছেন অনেকে
গবেষণায় দেখা গেছে, অফিসে মিটিং কম হলেই বরং কর্মী এবং সার্বিকভাবে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বাড়ে। হয়তো সে জন্যই অনেক নির্বাহী জেফ বেজোসের মতো নিয়ম চালু করেছেন তাঁদের প্রতিষ্ঠানে।
প্রকল্প ব্যবস্থাপনা এবং যোগাযোগসেবা বেসক্যাম্পের সিইও জেসন ফ্রায়েড তাঁর কর্মীদের জন্য গ্রীষ্মকালে ৩২ ঘণ্টা এবং বছরের বাকি সময়ে ৪০ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহ চালু করেছেন। তুলনায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কিন্তু বেশ কম।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেসন বলেন, ‘মানুষ এতে বেশ বিস্মিত হয়েছে। আমি তাদের বলি, সময় অপচয় করে এমন কাজগুলো বাদ দিলে তুমি এই ৩২ বা ৪০ ঘণ্টায় অনেক কিছু করতে পারবে।’
এদিকে বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মিটিংয়ের সময়সূচি পরীক্ষা করে ‘হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ’ জানিয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সাপ্তাহিক মিটিংগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা জুড়ে দিলে বছর শেষে দেখা যাবে, তিন লাখ কর্মঘণ্টা শুধু মিটিংয়ের পেছনেই ব্যয় হয়েছে।
আর সে কারণেই বেসক্যাম্পে নিয়মিত মিটিং বলে কিছু নেই। খুব প্রয়োজন হলে ছোট ছোট মিটিং ডাকা হয়। আর সে মিটিংয়ের সদস্যসংখ্যা এক হাতের আঙুলে গণনা করতে চান জেসন ফ্রায়েড।
বেজোসের দুই পিৎজা নিয়মে আমার একটাই আপত্তি। পিৎজার উল্লেখ করে তিনি নিয়ম করেছেন ঠিকই, তবে মিটিংয়ে পিৎজা রাখতে বলেননি। মুফতে না হয় খানিকটা ভূরিভোজনও হয়ে যেত।