২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

আট হাজার টাকায় লেটেস্ট মডেলের আইফোন কিনতে গিয়ে

আঁকা: জুনায়েদ

দিনকাল ভালো যাচ্ছিল না। ২০২১ সাল চলে গেল, অথচ একটা প্রেম হলো না, পকেটে তেমন টাকা নেই, একটা ভালো ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনও নেই। বলতে গেলে পেট থেকে রসকষহীন খড় বের করে জাবর কাটার মতো জীবন চলছে। হঠাৎ একদিন ফেসবুকের একটা পোস্টে চোখ আটকে গেল। সেখানে লেখা, ‘আই ফোন বেচতাম।’

ভাবলাম, আইফোন তো অহরহই সবাই কেনে-বেচে, এ আবার নতুন কী? কিন্তু নিচের লাইনগুলো পড়ে বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডটা লেফট-রাইট করতে শুরু করে দিল। লেখাটার সারমর্ম করলে এমন হয়, ‘ফোন একেবারেই নতুন, মাত্র এক সপ্তাহ ব্যবহার করেছি, কোনো সমস্যা নেই, অরিজিনাল সেট ইত্যাদি ইত্যাদি।’

সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় হলো, দাম লেখা আট হাজার টাকা! ভদ্রলোক আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড বেশ কয়েক বছর ধরে; আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পরিচয়। জানামতে লোক হিসেবে তিনি ভালোই। তবু যাচাই করার জন্য ভদ্রলোককে নক করলাম।

: ভাই, সত্যি কি আপনি ফোন আট হাজার টাকায় বেচবেন?

: হ্যাঁ ভাই, কম হবে না।

: ভাই, সেট তো আসল, না? কোনো ঝামেলা নেই তো? কোন মডেল?

: কোনো প্রবলেম নাই, গত সপ্তাহেই আমার মামা গিফট করছে। বিক্রি করতেছি কারণ আমার জরুরি টাকা দরকার। আর এই ফোন আমি চালাইতেও পারি না, মডেল একেবারে লেটেস্টটা।

আমি বুঝতে পারলাম না এত কী জরুরি যে লেটেস্ট মডেলের আইফোন মাত্র আট হাজার টাকায় বেচে দেবে! কিন্তু বলার সাহস পেলাম না, আমার কথা শুনে যদি দাম বাড়িয়ে দেয়! হয়তো সে জানে না এই ফোনের দাম একটা কিডনির সমান।

মাত্র আট হাজার টাকায় লেটেস্ট মডেলের আইফোন পাব ভাবতেই গায়ের সব লোম দাঁড়িয়ে গেল। লোকটাকে বললাম, ‘ভাই, আমি কিনব।’

সেদিন রাতে আর ঘুম হলো না। আইফোন কিনব, পেছনে আপেলের ছবি থাকবে। আহা রে জীবন! আহা জীবন! ফোনের পেছনে আপেল যেমন।

উত্তরে বললেন, ‘আপনার আগে তো আরও কয়েকজনের সাথে কথা হইছে, তারা কী বলে দেখি।’

আমার মাথায় মনে হয় আকাশ ভেঙে পড়ল। তাকে আমার সেই আত্মীয়ের দোহাই দিয়ে বললাম, ‘ভাই, আপনি আমাকেই ফোনটা দেবেন, যে যা-ই বলুক না কেন। এটা ভাই হিসেবে তো দাবি করতেই পারি, তাই না?’

অবশেষে তাকে রাজি করাতে পারলাম। পরের দিন দেখা করে ফোন নিতে হবে। সেদিন রাতে আর ঘুম হলো না। আইফোন কিনব, পেছনে আপেলের ছবি থাকবে। আহা রে জীবন! আহা জীবন! ফোনের পেছনে আপেল যেমন।

রাতটা কেমন করে কাটল জানি না। সকালে উঠেই দৌড় তার ঠিকানায়। নির্দিষ্ট সময়ের দুই ঘণ্টা আগেই চলে এসেছি। রাস্তার পাশের ফলের দোকানের সামনে তার জন্য অপেক্ষা করছি। ফলের দোকানের আপেলের দিকে তাকিয়েই সময় কাটিয়ে দিলাম। ভাই এলেন সময়মতো। আমাকে দেখে হেসে বললেন, ‘ভাই, আপনি পরিচিত বইলা আপনারেই দিতাছি, নইলে কতজন যে বইলা রাখছে!’

আমি হেসে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম। বললাম, ‘ভাই, ফোনটা কই?’

তিনিও দ্বিগুণ হেসে বললেন, ‘এত অস্থির হইতাছেন কিল্লাই, ভাই! ফোন তো বাইর করতাছি, এই লন আঁর ফোন।’

আঁকা: জুনায়েদ

বলতে বলতে প্যান্টের পকেট থেকে তিনি একটা সাধারণ মানের স্মার্টফোন বের করলেন। আমি বললাম, ‘ভাই এই সেট কেন?’

: ক্যান, আঁই তো এই সেটের কথাই না কইছি কাইল! আঁই যে সেট বেচতাম, এইডাই তো হেইডা!

: আপনি যে লিখলেন আইফোন বেচবেন!

: বাউরে, ঠিকি তো আছে, আঁই তো ফোন বেচতে আইছি। আর কেউ আইছেনি, ক্যান?

অবশেষে তার ‘আইফোন’ বেচার মর্ম এবার বুঝলাম! কেন তার দাম মাত্র আট হাজার টাকা, সেটাও বুঝলাম। আমি মাথা ঘুরিয়ে ফলের দোকানের আপেলের দিকে আবার তাকালাম। আহা রে জীবন, আহা জীবন, ফোনের পেছনে আপেল যেমন!