কাজী বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! এবার বর বাবাজি, উঠে দাঁড়িয়ে সবাইকে সালাম দিন।’
মিসির আলী উঠে দাঁড়িয়ে সবাইকে সালাম দিতে গেলেন। কিন্তু দিতে গিয়ে হঠাৎই তীব্র টান অনুভব করলেন পায়ের রগে। হঠাৎই ব্যথা। ব্যথাটা চিড়িক করে একেবারে মাথায় গিয়ে ঠেকল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ধপাস করে পড়ে গেলেন।
মিসির আলী বুঝতে পারলেন, তিনি জ্ঞান হারাচ্ছেন। এ সময় তাঁর নিজের মানসিক অবস্থা নিয়েই ভাবনা আসার কথা, তিনি এখন এক্স ওয়াই জেড সংখ্যা ধরে অমীমাংসিত রহস্যের মীমাংসা করবেন। কিন্তু অত্যন্ত বিচলিতভাবে তিনি খেয়াল করলেন, তাঁর মাথার ভেতর এ সময় অন্য একটা মুখ ভেসে উঠছে। এই মুখ ফারিয়ার।
ফারিয়াকে তিনি আজ এই কিছুক্ষণ আগে বিয়ে করেছেন! ফারিয়ার মুখের ওপর দিয়ে মিসির আলীর সব রহস্য, সব অমীমাংসা যেন নিমেষেই হারিয়ে যাচ্ছে।
মিসির আলী মনে মনে বললেন, ‘হায় হায়, বউয়ের চেহারা এভাবে সামনে চলে এলে তো আমি কোনো কাজ করতে পারব না!’
তিনি মন ফেরানোর চেষ্টা করলেন। ১০০ থেকে উল্টো গণনা শুরু করলেন। ভালোই আসছিলেন। কিন্তু আটকা পড়লেন পঁচিশে। ফারিয়ার বয়স ২৫। ফারিয়া বলে ‘সুইট টোয়েন্টি ফাইভ’। ‘সুইট’ বলার সময় ফারিয়ার ঠোঁট অদ্ভুত রকমের গোল হয়। তা দেখতে কী যে ভালো লাগে!
মিসির আলীর সব হিসাব তালগোল পাকিয়ে গেল। মিসির আলী বললেন, ‘হায় হায়! হায় হায়!’
জ্ঞান হারানো অবস্থাতেই মিসির আলী ফারিয়ার কণ্ঠ শুনতে পেলেন। ফারিয়া তাঁকে ডাকছে, ‘অ্যাই মিসির, মিসির! অ্যাই, ওঠো না...অ্যাই বাবুটা, ওঠো বলছি!’
মিসির আলী কী করবেন বুঝতে পারছেন না। তিনি জানেন ফারিয়ার এই ডাকে সাড়া দিলে তাঁর জীবনের বাকি রহস্যগুলো চিরকাল অমীমাংসিতই থেকে যাবে। কিন্তু তারপরও এই ডাক উপেক্ষা করার শক্তি তিনি অনুভব করছেন না। ফারিয়া ডেকেই যাচ্ছে, ‘মিসির, অ্যাই মিসির, বাবু আমার, ওঠো...।’
(আগামী পর্বে পড়ুন ‘বিদায় হিমু’)