এইডির কুনু কাম নাই

কার্টুন: এস এম রাকিবুর রহমান

সম্প্রতি ২০২৪-২৫ সালের বাজেট ঘোষণা হয়েছে। এই নিয়ে অর্থনীতিবিদেরা হুলুস্থুল দিন কাটাচ্ছেন। কাটাবেন–ই তো, আর জুনে বাজেট হয় এটাই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে আলাপের কি আছে। দেশের অর্থনীতির অবস্থা নাকাল, দাম বেড়েছে-কমেছে, এসব আলাপে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরগরম।

কিন্তু ভাই ভেবে দেখেছেন কি, BUDGET (বাজেট) এক জিনিস, যার কোনো বাংলা নেই। অনেকেই বলেন, টাকা বিষয়টা সুবিধার নয়। এর বিলিবণ্টন বিষয়টাই ‘বাজে’, তাই এর নাম পরিবর্তন না করে বাজেটই রাখা হয়েছে। আসলে বিষয়টা সেটি নয় চৌধুরী সাব, বাজেটের অর্থ না থাকতে পারে কিন্তু এর মিনিং আছে।

এখন বাজেট ঘোষণায় শুধু দাম বাড়ে আর কমে, আর কিছুই হয় না। আমাদের বুয়া তাই বাজেটসহ যেকোনো উৎসবের ঘোরবিরোধী। পানের পিক ফেলতে ফেলতে তিনি প্রায়ই বলেন, ‘রুজা আইছে বাইগুন, শশা, টমাটুম, পেয়াজ আর তেলের দাম বাড়াইছে হুদা। ঈদ আইছে কাফরের দাম বাড়াইছে। বৈশা মাসরে ডাইক্কা আইন্না (এসো হে বৈশাখ এসো এসো) ইলিশের দাম কত্তডি বাড়াইছে, ক্যারে এবাই আইত না বৈশা মাস? এহন এইডিতেও অইত না, হেরা আইছে বাজেট লয়া, এনু খালি দাম বাড়তাছে আর কমতাছে। এইডির কুনু কাম নাই। আমরার মতো নিজের বাত নিজে রাইন্ধা খাওয়া লাগলে এইডি করার সময় পাইত না।’

আরও পড়ুন

বুয়ার এহেন প্রতিবাদের ঝড় দেখে আমি বাজেটের দাম বাড়ানো ও কমানোর দিকে চোখ দিলাম। চালের কমেছে। খুশিতে আমি বাজারে চলে গেলাম। চালের আড়তের মালিক কান চুলকাতে চুলকাতে বললেন, ‘মাত্র তো বাজেট ঘোষণা হইছে, এখনি এত অস্থির হইলে চলবে। এক মাস পর এক সভায় এই বাজেট পাস হবে। বাজারে থাকা পুরাতন চাল শেষ হবে। বাজেট–পরবর্তী নতুন চাল এলে দাম কমবে।’ এই তত্ত্ব জানার পর দাম বেড়েছে, এমন জিনিসের দাম অপরিবর্তিত থাকবে ভেবে সোজা কাজুবাদামের দোকানে গেলাম। আগের দিন যে দামে বাজার নিয়েছিলাম, তার থেকে কেজিতে ৩০০ টাকা বেশি! দোকানিকে প্রশ্ন করতেই কান চুলকাতে চুলকাতে বললেন, বাজেটে দাম বাড়ছে। আমি ওনাকে চালের আড়ত থেকে শিখে আসা বয়ানটি দেওয়া মাত্র আমার হাত থেকে প্যাকেটটি নিয়ে বললেন, ‘নিলে নেন, না নিলে নাই। আরও পাঁচ দিন আগে থিকাই দাম বাড়ছে।’

হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসতেই উচ্ছ্বসিত বুয়ার মুখ-আম্মা হুনছুইন, তিনডা বিয়া করলে বলে সরকাররে বেশি টেহা দেওন লাগত? কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করতেও বলে মেলাডি টেহা আর সরকাররে কাগজপাত্তি দেহাইতে অইব।

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বললাম, ‘তাতে তুমি এত খুশি কেন?’

‘আর কইয়েন না আম্মা। গোলামের বাপে আবার একটা বিয়া করবার চায়। আমার লগে বিয়ার টাইমে লোক দাওয়াত দিছে না। এইবার একটু ধুম-ধারাক্কা কইরব। এইবার অইছে কাম। বাজেট একবারে সানডে মানডে ক্লোজ কইরা দিছে।’

আমিও বুয়ার খুশিতে খুশি হলাম। আর বাজেটের দাম বাড়া-কমা বরাদ্দের খতিয়ান দেখতে দেখতে ভাবতেছিলাম আমার এক আত্মীয়ের কথা। চাকরি-বাকরি ছেড়ে ব্যবসায় আসার পর তিনি বলছিলেন, ‘কী ব্যবসা করস, এখনো গাড়ি কিনতে পারিস নাই। আমার শ্বশুরবাড়ির বড় মিয়ারা ৯ টাকার গরু ৬ টাকায় বাজারে বিক্রি করে ৩ টাকা লাভ করে চারটা গাড়ি কিনছে। এমন ব্যবসা করতে পারিস না।’

শুনেই মনে হলো প্রেশারটা বেড়ে যাচ্ছে। অবশ্য প্রেশার যদি বেড়েও যায়, অতিরিক্ত প্রেশারের কারণে যদি কিডনির অসুখ হয়েও যায়, আর কিডনির অসুখের জন্য যদি ডায়ালাইসিস করাতেও হয়, তাহলে বোধ হয় খরচ একটু কম পড়বে—এই ভেবে সান্ত্বনা পাওয়ার চেষ্টা করলাম। শুনলাম, এবারের বাজেটে নাকি কিডনির অসুখে ডায়ালাইসিসের খরচ কমেছে। ভাগ্যিস!