ব্যাংক ডাকাতি শিখতে চেয়ে আলম সাহেবের কাছে চিঠি

কার্টুন: এস এম রাকিব

প্রিয় স্যার,

আশা করি ভালো আছেন। ব্যাংকের টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে বিশ্বের প্রথম প্রাকৃতিক ভল্ট হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়ায় আমরা আপনাকে নিয়ে গর্বিত।

ব্যক্তিগতভাবে আমি আপনাকে নিয়ে একটু বেশিই গর্বিত। কারণ, ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে আপনার মতো একজন স্বনামধন্য ব্যাংক ডাকাত হব। জেনে অবাক হবেন, ছোটবেলায় স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় ‘তোমার জীবনের লক্ষ্য’ রচনায় আমি লিখেছিলাম—বড় হয়ে ব্যাংক ডাকাত হব। ফলস্বরূপ ক্লাস টিচার আমার কান ধরে এমনই টান দিয়েছিলেন যে আরেকটু হলেই কানের সঙ্গে মাথার ‘লং ডিসট্যান্স রিলেশনশিপ’ হয়ে যেত। তাই বলে আমি জীবনের লক্ষ্য ভুলে যাইনি।

কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবতার পার্থক্য বিস্তর। ব্যাংক ডাকাত হব কী করে, চোখের সামনে কোনো আইডল দেখতে পাচ্ছিলাম না। অবশেষে আপনার সন্ধান পেলাম। কী দারুণ আপনার কারসাজি! মুখ কালো কাপড়ে ঢাকতে হয়নি, অস্ত্র নিয়ে ব্যাংকে ঢুকে পড়তে হয়নি, এমনকি ভল্টে ঢুকে টাকা বস্তায়ও ভরতে হয়নি। অনেকটা কাগজে-কলমে ‘দাপ্তরিকভাবে’ আপনি দেশের একাধিক ব্যাংক লুটে নিয়েছেন! অথচ সমাজে ব্যাংক ডাকাত নয়, বরং ‘স্বনামধন্য শিল্পপতি’ হিসেবে সুনামও কুড়িয়েছেন।

ডাকাত বলতে এ দেশের মানুষ এখনো হাতে দা-বঁটি নিয়ে মাংকি টুপি পরা মানুষকে কল্পনা করে। আমজনতার মান্ধাতার আমলের এসব চিন্তাভাবনা জাদুঘরে পাঠিয়ে ‘ব্যাংক ডাকাতি’র মতো একটি প্রাচীন পেশাকে আপনি দিয়েছেন আধুনিকতার ছোঁয়া। আপনিই প্রথম দেখিয়েছেন, ডাকাতি করতে এ রকম অদ্ভুত বেশ ধরতে হয় না। বুদ্ধি থাকলে নিজের বাসা কিংবা অফিসে বসেও দূর-দূরান্তের ব্যাংক খালি করে দেওয়া যায়।

আমরা সবাই জানি, অর্থই অনর্থের মূল। অর্থাৎ এই অর্থ যত বেশি মানুষের হাতে থাকবে, তত বেশি মানুষের জীবন অনর্থক হয়ে থাকবে। মানুষের অনর্থক জীবনকে অর্থবহ করার দূত হিসেবে আবির্ভাব ঘটেছে আপনার। ব্যাংকে রাখা মানুষের সব টাকা নিজ হাতে তুলে নিয়েছেন। এদিকে যাঁদের নামে অর্থ জমা ছিল, তাঁরাও ফিরে পেয়েছে এক নতুন জীবন। এখন তাঁদের অর্থ নাই। তার মানে তাঁদের জীবন এখন আর অনর্থক নয়, বরং সার্থক। দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা না থাকলে কেউ এ রকম নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে পারে না। স্যালুট আপনাকে। দেশের রপ্তানিখাতেও আপনার অনবদ্য অবদানের কথা অনেকেই স্বীকার করতে চায় না। দেশ থেকে আপনি যে পরিমাণ টাকা বিদেশে রপ্তানি করেছেন, সেটা আর কে করতে পেরেছে শুনি?

সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যে ক্যাশলেস বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, তার স্বপ্নদ্রষ্টা, প্রবক্তা, উদ্যোক্তা, মাস্টারমাইন্ড—সবই যে আপনি, এই বিষয়টি এখনো অনেকেই জানে না। দেশে যেমন ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটিয়ে ক্যাশলেসে রূপান্তরিত হওয়া যায়, তেমনি টাকা উধাও করেও ক্যাশলেস হওয়া যায়। অনেক ব্যাংককে ক্যাশলেসে রূপান্তরের মাধ্যমে আপনিই আমাদের দেখিয়েছেন, শুধু সামান্য একটু ইচ্ছা আর মাথার ওপর একটু আশীর্বাদ থাকলে ক্যাশলেস বাংলাদেশ কেন, ক্যাশলেস পৃথিবীর স্বপ্ন পূরণও সম্ভব।

আরও পড়ুন

একজন আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংক ডাকাত বাংলাদেশে আছে, ভাবতেই বুকটা গর্বে ভরে যায়। আপনি শুধু একজন কিংবদন্তি ডাকাতই নন, দুর্দান্ত জিনিয়াসও বটে। একের পর এক ব্যাংক খালি করে দিয়েও নিজের শরীরে একটা গোলাপের কাটার খোঁচা পর্যন্ত লাগতে দেননি। অথচ ছোট বোনের সামান্য মাটির ব্যাংকে হাত দেওয়ায় পারিবারিকভাবে কত অপমান সহ্য করতে হয়েছে আমাকে! আপনিই বলুন, আমার মতো একজন স্বপ্নবাজ তরুণের জন্য এটি কি মানহানিকর নয়?

যা হোক, আপনার বন্দনা লিখে শেষ করা যাবে না। আপনার দেখানো পথের পথিক হতে চাই। কীভাবে এই কাজগুলো করলেন, সেটি শেখাতে একটা অনলাইন ক্লাসের আয়োজন করুন, স্যার। আমি নিশ্চিত, মুখে প্রকাশ না করলেও এ দেশের অনেক মানুষই আপনার মতো সফল ব্যাংক ডাকাত হতে চায়। তাঁদের মধ্যে আমিও একজন। আমি সেই দিনের স্বপ্ন দেখি, যেদিন আপনার কাছ থেকে ‘অনলাইন ক্লাস’ করে স্বাবলম্বী হবে দেশের অসংখ্য তরুণ।

ইতি,

আপনার একজন গুণমুগ্ধ ভক্ত