গোপন এক মিশন নিয়ে সেই সকাল থেকে মাসুদ রানা বসে আছে কারওয়ান বাজারে। তার চওড়া কপালে তিন-চারটা ব্রণ, যার একটা এরই মধ্যে পেকেও গেছে। ব্যথা হচ্ছে অল্প অল্প। রানা বুঝতে পারছে না ব্রণটায় খোঁটাখুঁটি করা ঠিক হবে কি না। কারণ, সে এখন রয়েছে বিশেষ একটা অ্যাসাইনমেন্টে।
গত রাতেই জরুরি খবর দিয়ে মতিঝিল অফিসে ডাকা হয়েছিল তাকে। আর গিয়েই চক্ষু চড়কগাছ রানার। রাহাত খানের নাকের নিচে ঝুলছে এক অতিকায় গোঁফ। কাঁচা-পাকা ভ্রুজোড়াও আর নেই, তাতে কলপের কালি। গুনগুন করে গান গাইছেন রাহাত খান, ‘ঘরেতে ভ্রমর এল গুনগুনিয়ে…’।
নিজের চোখ আর কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না রানা। এ কী দেখছে, এ কী শুনছে সে! রাহাত খান একটা ফাইল এগিয়ে দিলেন রানার দিকে। ফাইলের রং লাল। ওপরে বড় বড় করে লেখা, ‘টপ সিক্রেট!’
ফাইলটা খুলতেই রানা দেখল, এক তরুণীর ছবি। অনিন্দ্যসুন্দরী। চোখে-মুখে জাদু। রানা দেখল, রাহাত খানের মুখে লজ্জা মেশানো হাসি! মানে কী এসবের?
রাহাত খান বললেন, ‘নিচে একটা চিঠি আছে। প্রতি সকালে ও কারওয়ান বাজারে সবজি কিনতে আসে। চিঠিটা তাকে পৌঁছে দিতে হবে, বুঝেছ?’
রানা চাকরি বাঁচানোর ভয়ে আর কিছু বলল না। ফাইলটা বন্ধ করে রেখে দিল নিজের কাছে। বেরিয়ে যাচ্ছিল রানা। ডাক দিলেন রাহাত খান, ‘রানা! সাবধান! এ আমার জীবন-মরণের প্রশ্ন!’
: জি, অবশ্যই!
: আর শোনো, কয়েকটা নীল পদ্মও নিয়ে যেয়ো। আজকালকার জেনারেশন তো, আমি এসব ঠিক বুঝেও উঠতে পারি না...বোঝোই তো! তোমরাই ভরসা!
: কোনো চিন্তা করবেন না, স্যার!
রানা এখন কারওয়ান বাজারে অপেক্ষা করছে কপালে ব্রণের ব্যথা আর গোপন মিশনের উৎকণ্ঠা নিয়ে। তার হাত পেছনে লুকানো। কারণ, সে হাতে দুলছে কয়েকটি নীল পদ্ম।
(আগামী পর্বে পড়ুন ‘আজ মিসির আলীর বিয়ে’)