মজার ব্যাকরণ
‘ছিনিমিনি খেলা’ বাগ্ধারাটি এল কোথা থেকে?
বাংলা ভাষায় যে বাগ্ধারাগুলো আছে, সেগুলো এল কোথা থেকে?
হাটে হাঁড়ি ভাঙা
আজও অধিকাংশ গ্রামগঞ্জে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে হাট বসে। আগে প্রায় সব গ্রামগঞ্জেই বসত। হাটের দিন লোকের ভিড় হতো জিনিস কেনাবেচার জন্য। আর হাঁড়ি রান্নাঘরের উপকরণ। আগে মূলত মাটির হাঁড়িতেই রান্না হতো। এখন কেউ যদি অন্দরমহল বা ভেতরবাড়ির হাঁড়ি হাটে নিয়ে ভাঙে, তবে সেই ঘটনা হাটের সবাই দেখতে পাবে। এমনকি এ কান–ও কান হয়ে বাকিরাও জেনে যাবে। এখান থেকে ‘হাটে হাঁড়ি ভাঙা’র অর্থ দাঁড়িয়েছে, কোনো গোপন কথা সবার সামনে ফাঁস করে দেওয়া।
ধোপে টেকা
‘ধোপে টেকা’ কথাটিকে অন্যভাবে বলা যায়—ধোয়ার পরও টিকে থাকা। আগের দিনে রঙিন কাপড় কেনার সময় ক্রেতাকে কাপড়ের রং নিয়ে ভাবতে হতো। কারণ, রং পাকা না হলে ধোয়ার পর কাপড় থেকে রং উঠতে শুরু করত। অর্থাৎ কাপড়ের রং যাচাইয়ের জন্য ধোয়ার কাজটিই ছিল আসল পরীক্ষা। এখান থেকে ‘ধোপে টেকা’ বাগ্ধারাটি এসেছে। এর অর্থ হলো, কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বা বাধাবিঘ্ন পার হয়ে টিকে থাকা।
ছিনিমিনি খেলা
মাটির হাঁড়ি বা কলসির ভাঙা ছোট টুকরাকে বলা হয় খাপরা। এই খাপরা বা ছিন্ন টুকরা পুকুরে বিশেষভাবে ছুড়ে মারার খেলাকে বলা হয় ছিনিমিনি। ছিনিমিনি খেলার সময় খাপরা এমনভাবে পানিতে ছোড়া হয়, যাতে সেটা ব্যাঙের মতো লাফ দিয়ে দিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত যায়। এ ধরনের খেলা মূলত শিশুরাই খেলে। গুরুত্বপূর্ণ কোনো কিছু নিয়ে এ রকম ছেলেখেলা করলে তখন বলা হয় ‘ছিনিমিনি খেলা’ বা যেমন খুশি তেমন ব্যবহার করা।
তারিক মনজুর: শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়